সকল মেনু

শুকিয়ে যাচ্ছে খরস্রোতা তিস্তা

ঢাকা, ১৮ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : দেশের সবচেয়ে বড় ভূ-উপরিস্থ পানির সেচ প্রকল্প তিস্তা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই পানি প্রবাহ কমে গেছে। এখন মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ কিউসেক পানি তিস্তা নদী দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানে শুষ্ক মৌসুমে সাধারণত গড়ে তিন হাজার কিউসেক পানি থাকে। ফলে যেখানে ৫ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার কথা, সেখানে এখন মাত্র ৩ হাজার হেক্টর জমিতে কোনো রকমে সেচ কাজ চলছে।
পানি বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিন্ন তিস্তা নদীর পানি ভারত একতরফাভাবে প্রত্যাহার করছে। এভাবে চললে আগামী বছর এই সেচ প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ যায়যায়দিনকে বলেন, ভারতের সাধারণ নির্বাচন ৭ এপ্রিল শুরু হবে। তাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে একটু অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচনের পরই তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

যৌথ নদী কমিশন সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা সেচ প্রকল্প পুরোপুরিভাবে চালু হলে শুষ্ক মৌসুমে (ডিসেম্বর-এপ্রিল) ৫ লাখ হেক্টর জমিতে ধান চাষের জন্য সেচ দেয়ার কথা। কিন্তু কয়েক বছর ধরে পানির ন্যায্য প্রাপ্যতা না থাকায় সেচ প্রকল্পের আওতা পর্যায়ক্রমে কমে আসছে। গত বছর ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু পানির অভাবে মাত্র ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া গেছে। এবার সেখানে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পানি একেবারেই আসছে না। তাই ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে কৃষক অগভীর নলকূপ (শ্যালোমেশিন) দিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মীর সাজ্জাদ হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, খরস্রোতা তিস্তার পানি প্রবাহ ভয়াবহভাবে কমে গেছে। তারা এ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নয়াদিলি্লকে নোট ভারবাল পাঠানো হয়েছে। পানি গত বছরও কমেছিল। কিন্তু এবারের মতো এত বিপর্যয় হয়নি।

সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত হওয়া দু’দেশের যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়ে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তারা পানি কমে যাওয়ার বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরলে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

জানা গেছে, তিস্তা সেচ প্রকল্প দেশের সবচেয়ে বড় ভূ-উপরিস্থ পানির সেচ প্রকল্প। নিলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা তিস্তা ব্যারাজ দিয়ে এই প্রকল্পের জন্য ৫ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকা খরচ করে কয়েক কিলোমিটার ক্যানাল তৈরি করে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিস্তা প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান মুঠোফোনে যায়যায়দিনকে বলেন, তিস্তা নদীতে পানি নেই। যা আছে তা দিয়ে কিছুই হয় না। উজানে একতরফাভাবে
পানি প্রত্যাহারের কারণে এই প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে। এভাবে চললে তিস্তা সেচ প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে। বিগত দিনে এত কম পানি কখনোই নদীতে ছিল না। রেকর্ড পরিমাণ পানি কমে গেছে।

তিনি আরো বলেন, আগামী দিনে শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজ চালানো তো দূরের কথা নদীতে পানিই থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ নদীকে বাঁচাতে হলেও শুষ্ক মৌসুমে এক হাজার কিউসেক পানি থাকতে হবে।

পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক পানি বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক যায়যায়দিনকে বলেন, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে যা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এখন বাংলাদেশের উচিত কঠোর অবস্থানে যাওয়া। কারণ তিস্তা একটি অভিন্ন নদী হওয়ায় এর পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার অধিকার এদেশের আছে। চুক্তি হবে হবে করে তো কয়েক বছর কেটেই গেল।

তিনি আরো বলেন, এখনই চুক্তি না হলে আর চুক্তি করা যাবে না। কারণ পশ্চিমবঙ্গ সরকার আরো নতুন নতুন সেচ প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। তখন চুক্তির বিষয়ে আরো কঠোর হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় অভিন্ন তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি হয়নি। এরপর দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে মমতাকে চুক্তির বিষয়ে রাজি করাতে নানা তদবির করলেও তিনি রাজি হননি। মমতার বক্তব্য, তিস্তার মাত্র ২৫ ভাগ পানি পাবে বাংলাদেশ। আর বাকি পানি পশ্চিমবঙ্গের। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে নদীর জন্য ৭৫০ কিউসেক পানি রেখে বাকি পানি সমানভাবে ৫০ ভাগ করে ভাগাভাগির বিষয়ে চূড়ান্ত হয়ে আছে।
এর আগে ২০০৪ সালে একবার চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ৪০ ভাগ করে ২০ ভাগ পানি নদীর জন্য রেখে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগের অভাবে চুক্তিটি আলোর মুখ দেখেনি।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশর ৫৩টি অভিন্ন নদী রয়েছে। তারমধ্যে তিস্তা নদীটি ৩৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই নদীটি ভারতের সিকিম হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলা দিয়ে প্রবেশ করেছে। নদীটির ১১৭ কিলোমিটার বাংলাদেশে বয়ে গেছে আর বাকি ২৪৯ কিলোমিটার ভারতের সিকিম এবং পশ্চিবঙ্গ দিয়ে বয়ে এসেছে। সিকিমে এই নদীতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। আরো দুটি প্রকল্প করার কাজ চলমান রয়েছে।(যায়যায়দিন)

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top