সকল মেনু

নির্বাচনে সহিংসতা বাড়ছেই পদক্ষেপ নেই কমিশনের

ঢাকা, ১৮ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : চলতি উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতা ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদপে নিতে ব্যর্থ হচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ক্রমাগত সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। কঠোর ব্যবস্থার পরিবর্তে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সরকারের প্রতি আনুগত্যের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। কমিশনের দুর্বলতায় আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে সরকার সমর্থক নেতাকর্মীরা। একের পর এক স্থগিত করতে হচ্ছে উপজেলার ভোটগ্রহণ। জাতীয় নির্বাচনের পর পরই তড়িঘড়ি করে উপজেলা নির্বাচনের সিদ্ধান্তও ‘সঠিক’ ছিল নাÑ এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

এ ছাড়া ধাপে ধাপে এ নির্বাচনের সিদ্ধান্তও ছিল অপরিপক্ব। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আত্মসমালোচনায় এমনই ভাবনা কমিশনের। এরূপ পরিস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এক মাসেরও বেশি সফর কমিশনের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে কার্যকর পদেেপর পরিবর্তে নির্বাচনের বাকি দুই দফা ‘ভাগ্যে’র ওপরই ছেড়ে দিয়েছে কমিশন। গত রোববার কমিশন সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য জানান।

এর আগে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার কারণে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। একই ব্যবস্থা আরো কয়েকটি উপজেলার েেত্রও নেয়া হতে পারে।

তিনি বলেন, এবার একাধিক ধাপে নির্বাচন করার জন্যই সমস্যা বেশি হচ্ছে। প্রথম দু’টি ধাপের নির্বাচনের ফল পরবর্তী ধাপগুলোর জন্য উদ্বেগ বাড়িয়েছে। দুই দলই এখন নির্বাচন নিয়ে মরিয়া। নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসকেরা সবাই সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না বলেও জানান তিনি।

সূত্র জানায়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপের নির্বাচনে বেশ কিছু স্থানে সহিংসতা, কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের ঘটনা ঘটে। কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচন বর্জনও করেন। কমিশন কয়েকটি কেন্দ্র স্থগিত করলেও সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদপে নেয়নি। দ্বিতীয় ধাপে ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। নোয়াখালীতে নির্বাচনের দিন সহিংসতায় একজন নিহত হয়। তবু সহিংসতার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি কমিশন। এবার তৃতীয় দফার নির্বাচন শুরুর আগেই গাজীপুরে সহিংসতায় প্রাণহানি ঘটে। নির্বাচনের দিন বাগেরহাটে সরকারসমর্থকেরা কুপিয়ে হত্যা করে এক শিবিরকর্মীকে। এ ছাড়াও নির্বাচনের দিন সহিংসতায় আরো দু’জন নিহত হয়। চতুর্থ ধাপে এ সহিংসতার পরিমাণ আরো বাড়বে বলে কমিশনকে জানিয়েছে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

এরূপ পরিস্থিতিতে দেড় মাসের জন্য সস্ত্রীক আমেরিকা সফরে গেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ। আগে নিয়মিত কমিশন সভার মাধ্যমে করণীয় ঠিক করা হতো। সিইসি দেশের বাইরে যাওয়ার পর এখন আর তৎণাৎ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কমিশন। এ ছাড়া বর্তমান কমিশনারদের মধ্যে মানসিক দ্বন্দ্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের েেত্র পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলেছে।

সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তুষ্ট ছিল কমিশন। একতরফা নির্বাচন আয়োজনে কোনো বিতর্কই গায়ে মাখেনি কমিশন। সরকারের সুদৃষ্টি কমিশনকে দায়িত্বহীন আচরণ করতে উৎসাহিত করে। এ কারণে এ নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকেই কমিশনের গা-ছাড়া ভাব ল করা যায়। ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক ছিল। নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ওই পর্যবেক দল গঠন করা হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেণ সেলও চালু ছিল। স্থানীয় প্রশাসন ও রিটার্নিং অফিসারদের প্রতিবেদনের ওপর ভরসা না করে নিজস্ব কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনের আলোকে সেই সময় কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু এবার মাঠপর্যায়ের প্রকৃত অবস্থার কথা অনেক েেত্র কমিশনের অজানাই থেকে যাচ্ছে। এবার কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক এবং কেন্দ্রীয় পর্যবেণ সেল নেই। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনও নির্বাচন কমিশনারদের কাছে যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয় না। অথবা তাদের কাছে এসব প্রতিবেদন তেমন গুরুত্বও পায় না। রিটার্নিং অফিসারদের পাঠানো প্রতিবেদনের আলোকেই নির্বাচন কমিশনাররা বলে আসছিলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কমিশন সচিবালয়ে প্রার্থীদের অভিযোগ-আবেদনও ছিল গুরুত্বহীন। কিন্তু সাম্প্রতিক ব্যাপক সহিংসতা কমিশনকে ভাবিয়ে তুলেছে।

এ মাসেই আরো দু’টি ধাপে উপজেলা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। চতুর্থ দফায় ৪৩টি জেলার ৯২ উপজেলায় ২৩ মার্চ ও সবশেষে ৩১ মার্চ হবে পঞ্চম দফায় ৭৩ উপজেলায় ভোটগ্রহণ।(নয়া দিগন্ত)

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top