সকল মেনু

আজ ১৭ মার্চ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৯৪তম জন্মবার্ষিকী

ঢাকা, ১৭ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : আজ ১৭ মার্চ সোমবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস। ১৯২০ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জন্মগ্রহণ করেন। যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হবে দিনটি। রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

জন্ম-পরিচয়

শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। শেখ লুৎফর রহমান ও মোসাম্মৎ সাহারা খাতুনের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে তৃতীয় সন্তান শেখ মুজিব। বাবা-মা ডাকতেন খোকা বলে। খোকার শৈশবকাল কাটে টুঙ্গিপাড়ায়।

শিক্ষাজীবন

বন্ধুবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২৭ সালে গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি হন। ১৯৩৪ থেকে চার বছর তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেননি। কারণ তার চোখে জটিল রোগের কারণে সার্জারি করাতে হয়েছিল এবং এ থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে বেশ সময় লেগেছিল। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) মানবিক বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাশে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।

বিবাহ ও সন্তান

১৯৩৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বয়স যখন ১৮ বছর তখন ফজিলাতুন্নেসার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সংসারে দুই কন্যা ও তিন পুত্র সন্তান জন্ম নেন। কন্যাদ্বয় হলেন – শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা এবং পুত্রত্রয় হলেন– শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল।

সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক জীবন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

বঙ্গবন্ধু ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকেটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেম্বলীর সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।

তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬-দফা ও পরবর্তীতে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যূত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন।

 

৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের একটি মুহূর্ত

তাঁর সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালীর বহু আকাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জিত হয়।

বিংশ শতাব্দীতে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে যারা বিশ্বনন্দিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অন্যতম।

সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য তিনি বিশ্বশান্তি পরিষদের জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। বিবিসি’র এক জরিপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি নির্বাচিত হন।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে শুরু করেন ঠিক সেই মুহূর্তে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ নিহত হন।

১৭ মার্চের কর্মসূচি

প্রধানমন্ত্রী সোমবার টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনায় ফাতেহা পাঠ করবেন। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে দেশব্যাপি দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।

দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির একটি প্রতিনিধিদল সোমবার সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন। এসময় শিশু সমাবেশে আলোচনা সভা, গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১৮ মার্চ বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সস্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং বুদ্ধিজীবীরা বক্তব্য রাখবেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস ২০১৪ উদ্যাপন উপলক্ষে স্যুভেনির প্রকাশ ও পোস্টার ছাপানো হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়, ডিএফপি ও পিআইডির উদ্যোগে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় দৈনিকসমূহে ক্রোড়পত্র প্রকাশ এবং বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য চ্যানেলসমূহ ও মিডিয়ায় বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে।

সারাদেশে জেলা ও উপজেলা সদরে দিবসটি উপলক্ষে শিশু সমাবেশ, র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা, রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

জেলা ও উপজেলা সদরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ডিএফপি ও গণযোগাযোগ অধিদফতরের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও মহান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সপ্তাহব্যাপী পুস্তক ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশী দূতাবাসসমূহে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার সারাদিন ধরেই ৭ মার্চের ভাষণের রেকর্ড বাজানো হবে। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে সারাদেশে বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র।

জাতির জনকের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যুবলীগ, মহিলা যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

জন্মদিন উপলক্ষ্যে শিশু একাডেমী বইমেলা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে চতুর্থবারের মতো আয়োজিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী বইমেলা ২০১৪। আগামী ১৮ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ ২০১৪ পর্যন্ত নয় দিনব্যাপী বইমেলায় অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের প্রায় ৬০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। অন্যান্যবারের মতো এই বইমেলা আয়োজনে এবারও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। এবার বইমেলায় সার্বিক সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি।

শিশুদের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় শিশুদের বই পাঠে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় বাংলাদেশ শিশু একাডেমী বইমেলা।

আগামী ১৮ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে এই মেলা উদ্বোধন করবেন আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর পরিচালক মোশাররফ হোসেন।

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top