সকল মেনু

ইয়াহিয়া-বঙ্গবন্ধু বৈঠক

ঢাকা, ১৬ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম)  : ১৯৭১-এর এই দিনটি ছিল লাগাতার চলা অসহযোগ আন্দোলনের পঞ্চদশ দিবস।

১ মার্চ ভুট্টোর প্ররোচনায় ইয়াহিয়া কর্তৃক ঘোষিত একতরফাভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অহিংস-অসহযোগ ইতিমধ্যে সর্বব্যাপী রূপ লাভ করে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণরুপে বঙ্গবন্ধুর অনুকূলে।

অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, এখন আর বাঙালী জাতির পরিপূর্ণ স্বাধীনতার আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদের চোরাবালিতে নিক্ষেপ করা সম্ভব নয়। যাঁরা বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচীকে বিচ্ছিন্নতাবাদের ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করতে সচেষ্ট ছিলেন, তাঁরাই এখন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে দেশে এবং বিদেশে চিহ্নিত হয়েছেন।

পাকিস্তানের উভয়াংশেই উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজিত। এ অবস্থায় সর্ব মহলের চাপে অবশেষে প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় কড়া সামরিক প্রহরাধীন প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধু মুজিবের সঙ্গে প্রথম দফা আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন।

প্রথম পর্বের এ বৈঠক ছিল ওয়ান টু ওয়ান এবং রুদ্ধদ্বার আলোচনা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা স্থায়ী এ বৈঠকে তৃতীয় কোন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন না।

সকাল সাড়ে দশটার দিকে প্রেসিডেন্ট ভবনের দিকে যাত্রার প্রারম্ভে ধানমন্ডির ৩২নং বাসভবনের সামনে বিপুল সংখ্যক দেশী-বিদেশী সাংবাদিক ও আলোকচিত্রী বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ধরেন। বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সম্মুখ প্রাঙ্গণ তখন লোকে লোকারণ্য। ‘জয় বাংলা’ রণধ্বনি উচ্চারণ করে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাত তুলে সকলের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এখন কিছুই বলার নাই।’

উপস্থিত অসংখ্য ভক্ত-অনুরক্ত সমর্থককে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে শোকের স্মারক কালো পতাকা উড্ডীন সাদা রঙের গাড়িটিতে আরোহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর গাড়ি প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে পৌঁছলে পুনরায় একঝাঁক সাংবাদিক তাঁকে ঘিরে ধরেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ করেই বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন।

বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু উপস্থিত অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আগামীকাল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পুনরায় বৈঠক হবে।’

‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় খুশি হয়েছেন কি-না?’ জনৈক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক ও অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করছি। আরও আলোচনা হবে।’

রাজধানী ঢাকায় যখন বঙ্গবন্ধু মুজিব-জেনারেল ইয়াহিয়া আলোচনা চলছে, তখন বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে বিক্ষুব্ধ সমুদ্রের উত্তাল। অসহযোগ আন্দোলন সৃষ্ট স্বাধিকার থেকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে জাতীয় মুক্তির ঢেউ। যে-সকল সরকারি, আধা-সরকারি অফিস-আদালত, স্বায়ত্তশাসিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী চালু রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু নির্দেশ দান করেছেন, কেবল সেগুলো ছাড়া অন্য সব অফিস-আদালত বা প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের অসহযোগিতা অব্যাহত থাকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top