সকল মেনু

সামুদ্রিক মৎস্য নীতিমালা চূড়ান্ত পর্যায়ে

ঢাকা, ১৫ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : সমুদ্রে নিয়োজিত মৎস্য আহরণকারীদের বিশেষ পরিচয়পত্র প্রদানসহ মৎস্য রিজার্ভ শনাক্ত এবং সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা নির্ধারণকে সামনে রেখে ‘জাতীয় সামুদ্রিক মৎস্য নীতিমালা ২০১৪’ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সামুদ্রিক মৎস্য নীতিমালাকে ১৭ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ভাগকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে এর প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরা হচ্ছে এই নীতিমালায়। নীতিমালার শুরুতেই রয়েছে মাসুদ্রিক মৎস্য সম্পদের তথ্য-উপাত্য এবং প্রয়োজনীয় উপকরণাদী সংগ্রহ করা, উপকুল, মোহনা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় জোয়ারের ৪০ মিটার গভীরতায় মৎস্য আহরণে নিয়োজিত যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক সকল নৌযানের আচরণ বিধি ও নির্দেশিকা প্রনয়ণ করা।

সেই সঙ্গে সমুদ্রের একান্ত অর্থনৈতিক এলাকার গভীর অংশে এবং আন্তর্জাতিক জলাশয়ে অনাহরিত মৎস্য প্রজাতি আহরণে উদ্যোক্তা তৈরি করা, উপকূলীয় অঞ্চল এবং গভীর সমুদ্রে প্রজাতিভিত্তিক মৎস্য আহরণ জোন তৈরি করা, মৎস্য সম্পদের অতিআহরণ এবং নৌযানের মাত্রাতিরিক্ত আহরণ নিয়ন্ত্রণ করা বা সেই অনুযায়ী নৌযান নির্ধারণ করা এবং সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে গবেষণা করার কথাও উল্লেখ থাকছে এই নীতিমালায়।

এছাড়া নীতিমালায় পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গেও যৌথ গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া, মানব সৃষ্ট কারণে বিপন্ন হতে থাকা প্রজাতি, আবাসস্থল প্যারাবন এবং প্রবাল দ্বীপ সংরক্ষণ করা, মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক আইন কানুন প্রবর্তনের ব্যবস্থার বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। নীতিমালা প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছাইদুল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমুদ্রসীমা নিয়ে সমুদ্র আইন বিষয়ক ট্রাইব্যুনালের (ইটলস) মামলার রায়ে একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলের (ইইজেড) ২শ’ নটিক্যাল মাইলের বাইরের মহীসোপানে সকল প্রাণিজ ও খনিজ সম্পদের উপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এজন্যই সামুদ্রিক মৎস্য নীতিমালা করা হচ্ছে। এর ফলে বিশাল মৎস্য সম্পদ আহরণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, এতে করে আমাদের সমুদ্রসীমায় মৎস্য সম্পদ আহরণ ও সংরক্ষণ সহজ হবে। রক্ষা পাবে অবৈধ শিকারীদের মৎস্য আহরণ। ফলে পুরো ২শ নটিক্যাল মাইল বাংলাদেশের নজরদারিতে থাকবে। নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের উপরে ভিত্তি করে নীতিমালা প্রনয়ণ ও তা বাস্তবায়ন, একান্ত অর্থনৈতিক এলাকায় বিচরণকৃত মেকারেল ও টুনা জাতীয় মাছ বাণিজ্যিকভাবে আহরণে অনুসন্ধান পরিচালনা।

পাশাপাশি ২০০ মিটার গভীরতায় এ জাতীয় মাছ আহরণের জন্য উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। বিপন্ন প্রজাতি রক্ষা করা, অনাকাঙ্খিত প্রজাতির মৎস্য আহরণ বন্ধ করার পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় মাছ সমুদ্রে নিক্ষেপ বন্ধ করা। মৎস্য আহরণের জন্য প্রজাতি অনুযায়ী জালের অনুমোদন ও তা ব্যবহারে বাধ্য করা। প্রজননক্ষম মাছের নিরাপদ  প্রজননের  জন্য সহায়ক  তথ্য-উপাত্য বিশ্লেষণ করে  বছরের যে কোনো সময়ে প্রজাতি ভেদে মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখা। বাংলাদেশ মেরিন ফিসারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবিএম আনোয়ারুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটি নতুন। সমুদ্রের মৎস্য আহারণে নিয়োজিত নৌযানগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও অবস্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিহ্নিত হওয়া।

মৎস্য আহরণ নিয়ন্ত্রণ করা, অবৈধ নৌযান প্রবেশ বন্ধ, টুনাসহ বিভিন্ন মাছ সংগ্রহ করা, নৌযানের গতিবিধি, অবস্থান, দ্রুত আবহাওয়া সতর্কবার্তা নিশ্চিত করা, মৎস্য শিকারী ও সরকারের মধ্যে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য এ নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আনোয়ারুল ইসলাম মনে করেন। পাশপাশি লাইসেন্সবিহীন বা অবৈধ মৎস্য শিকারও হ্রাস পাবে, বাড়বে নজরদারি। নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, মাছের বংশ রক্ষা করে কাঙ্খিত মজুদ বৃদ্ধির জন্য উপকুলীয় এলাকা এবং সমুদ্রের নির্দিষ্ট জায়গায় সামুদ্রিক রিজার্ভার ঠিক করা এবং সামৃদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা নির্ধারণসহ এর ব্যবস্থাপনা ও তদারকির ব্যবস্থা করা। সেন্টমার্টিন ও অন্যান্য দ্বীপ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় সামুদ্রিক শৈবাল-প্রবাল প্যারাবনসহ বিভিন্ন কীট পতঙ্গ সংরক্ষণ করা। প্রয়োজনে পর্যটকও সীমিত করা। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রিক প্রজাতির বিচরণ ক্ষেত্র (কচ্ছপ, ডলফিন, হাঙ্গর, কোমট, তিমি প্রভৃতি) সংরক্ষণ করা, সামুদ্রিক সৎস্যজীবীদের নিরপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রনয়ণ, বিশেষ পরিচয়পত্র সরবরাহ করা, যানমালের নিরাপত্তায় আগাম আবহাওয়া সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি নিশ্চিত করা, মৎস্যজীবীদের ঝুঁকি মোকাবিলায় যৌথ জীবন বীমা এবং বিভিন্ন সঞ্চয়মূলক স্কিম প্রবর্তণের আওয়ায় আনা।

এই নীতিমালায় আরো থাকছে সমুদ্রগামী জাহাজের  কর্মপরিবেশ সংক্রান্ত আইএলও কর্তৃক নির্ধারিত বিধিবিধান অনুসরণ করা, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নৌযান রক্ষায় সরকারিভাবে প্রোতাশ্রয় নির্মাণ করা, সরকারি স্থাপনাসমূহে স্বাস্থ্যসম্মত ও হ্যাসাপ পদ্ধতি আধুনিক পর্যায়ে উন্নিত করা। জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, সামুদ্রিক সৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনায় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ, বিদেশি জাহাজ থেকে বাংলাদেশের জলমীসায় রাসায়নিক পদার্থ এবং পারমানবিক বর্জ নিক্ষেপরোধে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সমুদ্রের জীববৈচিত্র রক্ষায় বিদেশি জাহাজকতৃক  ব্যালাস্ট ওয়াটার নিক্ষেপের মাধ্যমে ভিনদেশি প্রজাতি অনুপ্রবেশ রোধ করা।

সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় আইএমও কর্তৃক প্রনীত আইন মেনে চলাতে বাধ্য করা। নীতিমালায় নৌযান বিষয়ে বলা হয়েছে-নৌযান নষ্ট হলে বা অকেজো হলে প্রতিস্থাপনের জন্য ৩ বছরের মধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা, প্রতিস্থাপনের পূর্বে সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে ৩০ দিনের মধ্যে উপস্থাপন করা, চিংড়ি ট্রলারের জীবন কাল ২০ বছরের পুরাতন হলে তা মিড ওয়াটার ভেসেল দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে। প্রতিস্থপনের ক্ষেত্রে আমদানিরকৃত জাহাজ সর্বোচ্চ ৮ বছরের পুরাতন হতে হবে। জাহাজ ডুবে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রত্যায়ন পত্র লাগবে। প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে চিংড়ির জন্য ৩৫ মিটার, মিড ওয়াটার ৪০ মিটার এবং লংলাইনারের দৈর্ঘ্য ৫৫ মিটার হতে হবে।  ফিসহোল্প ক্যাপাসিটি ২০০ মেট্রিকটন এবং ভলিউম ৩৪৫ কিউবিক মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিধান রাখা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top