সকল মেনু

‘পাগলা-কবি’ আলফনসো কর্তেসের দুটো কবিতা

সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রতিবেদক, ১৪ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : আলফনসো কর্তেসের জন্ম ১৮৯৩ এবং মৃত্যু ১৯৬৯ সালে। এক কিংবদন্তির জায়গা অধিকার করে আছেন কবি আলফনসো কর্তেস, লাতিন আমেরিকান সাহিত্যধারায়। ১৯২৭ সালে, চৌত্রিশ বছর বয়সে, ১৮ ফেব্রুয়ারির ঠিক মধ্যরাতে দেখা দেয় ঊনপঞ্চাশ বায়ুর প্রকোপ। ওই বিখ্যাত ঘটনার পর থেকে কবি কিছুদিন থাকেন ভালো, কিছুদিন ছিটগ্রস্ত, পর্য়ায়ক্রমে।

একদিকে কর্তেসের কবিত্বশক্তির ব্যাপক ও গভীর অন্তঃশীলতা, অন্যদিকে তার সেই বিখ্যাত বায়ুপ্রকোপ, দুই-ই তাকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে একদম প্রবাদপ্রতিম অবস্থানে। তাকে বলা হয়ে থাকে নিকারাগুয়ার মরমী ‘পাগলা-কবি’। তিনি যে একজন ডাকসাইটে নামজাদা কবি, তা যে শুধু তার এই ‘পাগলা-কবি’ ভাবমূর্তির জন্য, তা নয়, বরং তা তার নিবিড় আধ্যাত্মিক ও গভীর ভাবব্যঞ্জনাময় কবিতার জন্যও বটে।

কিংবদন্তির এই কবি তার জীবনের শেষ চল্লিশ বছর কাটিয়েছেন লিওনের একটি বাড়িতে, যে লিওন শহরে কেটেছে কবি রুবেন দারিও-র শৈশব। কবি এর্নেস্তো কার্দেনাল কোনো এক লেখায় দাবি করেছেন— তিনি যখন ছোট, স্কুলে যেতেন, যাওয়া-আসার পথের ধারে দেখতেন কর্তেসকে, শিকল দিয়ে আটকানো দেওয়ালের সাথে, আর শিকলবন্দি কবি লিখে চলেছেন আপনমনে…। যে-সময়টায় তিনি একটু ভালো থাকতেন, তখন তর্জমা করতেন বোদলেয়ার, ভের্লেন, মালার্মে, আর এডগার এলান পো… আবার পাগল হয়ে যেতেন কিছুদিন পর…

কর্তেসের সেরা যে কবিতাগুলি, সেখানে তিনি প্রায়শই উপস্থাপন করেন এক মহাব্রহ্মাণ্ডকে, যে-ব্রহ্মাণ্ড প্রহেলিকাপূর্ণ, স্বপ্নদৃষ্টিময়, আধ্যাত্মিক, এবং স্ববেষ্টিত, যে-ব্রহ্মাণ্ড তিরতির করে কাঁপতে থাকে স্থানের, কালের, সত্তার, রূপের, অরূপের, আর পরমের এক পয়গম্বরি ছায়ারূপ ধরে, রকমারি ঝলক আকারে। আর সেইসব কাঁপা-কাঁপা ছায়া ও ঝলকমালা রূপ নেয়, আকার পায় এক পূর্বাপরহীন, কালাকালবিহীন ভাষায়। মূর্ত হয়ে ওঠে এক ইতিহাসবিহীন ভাষ্যে। সেই ভাষাতেই অটল থেকেছেন কর্তেস আগাগোড়া, যে-ভাষা লেখা হয়ে আছে বস্তুনিচয়ের উৎসে, মর্মমূলে— সেই উৎস, সেই মূল, যা খোদ বস্তুর পূর্ববর্তী নয় বটে, তবে শাশ্বত, স্থায়ী। ফলে তিনি প্রায় একই শৈলীতে লিখে গেছেন সারাজীবন ধ’রে। সামান্যই বিবর্তিত হয়েছে তাঁর কাব্যশৈলী।

মহাকাশগীতি

যে-দূরত্ব এইখান থেকে সেই নক্ষত্রটির,
যে আসলে ছিলই না কোথাও কোনোকালে।
কেননা, এখনো খোদাতালা
অতদূর অব্দি টেনে সারেননি রাত্রির চামড়াখানি।

আর ভাবো তো— বিশ্বাস করি আমরা এখনো,
একজন নিভৃত-নির্জন জংলি আদমের যে-শান্তি,
তার চেয়ে গুরুতর আর বেশি দরকারি হলো বিশ্বশান্তি…

এই যে আপেক্ষিকতা নিয়ে উন্মাদনা, এই যে রিলেটিভিটি-ক্রেজ
হালফিল জীবনে আমাদের: তাতে আছে সেই জিনিশ,
যা এই মহাশূন্যতাকে রাঙায়
আমাদেরই নিজস্ব অন্তর্গত মহিমায়।

কে জানে লেগে যাবে কতকাল আমাদের
শিখে নিতে নক্ষত্রের মতো জীবনযাপন—
নিঃসীমের মাঝে আহা অবাধ বেড়াব ভেসে মুক্ত স্বাধীন
প্রতিপালকহীন, পালন ও পোষণের বালাইবিহীন।

প্রতিদিন কত পথ যে সফর করে এ-পৃথিবী
সেসবের সে জানে না কিছুই—
তবু ওই পথেরাই হচ্ছে বিবেক, পৃথিবীর…
আর যদি তা না হয়, তবে করতে দিয়ো
আমাকে কেবল একটি প্রশ্ন: বলো তো হে মহাকাল,
এই তুমি আর এই আমি, এই আমরা, আসলে কোথায়?

আমরা, মানে, যে-আমি করি তোমাতে বিরাজ,
আর যে-তুমি, অস্তিত্বই নাই যার কোনো!

 

 

 

মহাপ্রার্থনা

‘কাল’ হচ্ছে ক্ষুধা, ‘স্থান’ হচ্ছে হিম
প্রার্থনা করো, করো মহাপ্রার্থনা। কেননা কেবল
প্রার্থনাই পারে প্রশমিত করতে শূন্যতার তাবৎ উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা।

স্বপ্ন এক নিভৃত-নির্জন শিলাখণ্ড
যেইখানে বাসা বাঁধে আত্মার বাজপাখি:
স্বপ্ন, স্বপ্ন, মামুলি জীবনভর শুধু স্বপ্ন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top