সকল মেনু

ভারতের সাথে লাভবান হতে পারেনি বাংলাদেশ

ঢাকা, ১৩ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : ভারতের সাথে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে গুরুত্ব বাড়িয়েছে সরকার। দিল্লী সরকারের মেয়াদের শেষ মুহূর্তে এসে শুরু হয়ে গেছে তোড়জোর। কিন্তু ভারতের সাথে সবধরনের ক্ষেত্রেই লাভবান হতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। দ্বি-পাক্ষিক স্বার্থ আদায়ের এ ব্যর্থতা ঢাকতে মীমাংসিত বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা জোরদারসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলোর বিষয়ে আলোচনার জন্য কূটনৈতিক পর্যায়ে চলছে শেষ মুহূর্তের সিরিজ আলোচনা। তাই সরকার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কিছু আদায়ের জন্য চলছে চেষ্টা। কিন্তু কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা এনিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হামেশাই ঝড় তুললেও দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দে বাংলাদেশ যেন শুধু চলমান ইতিহাসে কখনো কখনো একটি পাদটীকা আবার কখনো কখনো সাময়িক বিড়ম্বনামাত্র। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্কে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বি-পক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অনেক বিষয়ে মতৈক্য পোষণ করেন। সেই প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবিরোধী কাজ এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। অনেকটা অপ্রত্যাশিত ও একপক্ষীয়ভাবে বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারতের মূল ভূখ-ের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য ট্রানজিটের সুুবিধা এবং ভারতকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুবিধাদানের জন্য রাজি হয়। সীমান্ত সমস্যা সমাধানেও নেতারা রাজি হন। বাণিজ্য সম্পর্কের উন্নয়নেও তারা নতুন ক্ষেত্র নিয়ে মনোযোগী হন। বাংলাদেশ কর্তৃক ভারত থেকে বিদ্যুতের আমদানি এবং ভারত কর্তৃক এক মিলিয়ন ডলারের ঋণদান উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর অন্যতম।

ইতিমধ্যে অনেক সময় গড়িয়ে গেছে। দু’দেশের সম্পর্কও নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। কিন্তু বাংলাদেশ পায়নি তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আছে ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদীর মধ্যে ৪৩টি অভিন্ন নদীর বেশিরভাগ পানি আটকে রাখে ভারত। একমাত্র গঙ্গানদীর পানিবণ্টন চুক্তি কার্যকর হয় ১৯৯৬ সালে যার মেয়াদ মাত্র ৩০ বছর। এর ফলে বাংলাদেশকে প্রতি মৌসুমে খড়ার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বন্ধ হয়নি সীমান্ত হত্যাকা-। ছিটমহল সমস্যারও সুরাহা হয়নি। রয়েছে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক বাধা। সীমান্ত দিয়ে মাদকের প্রবাহ রোধ হয়নি।

সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী চারদিনের সফরে এরই মধ্যে দিল্লি পৌঁছেছেন। মাঝপথে কিছু সময় তিনি কলকাতায় কাটিয়ে গেছেন। জানা গেছে, দিল্লিতে গওহর রিজভী তার কাউন্টার পার্ট ও বাংলাদেশ দেখভাল করেন এমন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক আগামী ১৯ মার্চ চারদিনের সফরে দিল্লি যাচ্ছেন। গত ডিসেম্বর ঢাকায় আসা ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের ফিরতি সফর হিসেবে যাচ্ছেন তিনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর কূটনৈতিক অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘প্রথম’ সফর এটি। সঙ্গত কারণে এটাকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ওই সফর নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ। সেগুন বাগিচার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট দ্বি-পক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন তারা। সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পেশাদার কূটনীতিকের ওই সফরে কি কি ইস্যু গুরুত্ব পাবে তা নিয়ে কথা বলতেই সচিব ও হাইকমিশনারের ওই বৈঠক। এদিকে, কেবল সফরই নয় মীমাংসিত বিভিন্ন ইস্যুতেও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে দু’দেশের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক চলছে। ঢাকায় গতকালও পৃথক দু’টি বৈঠক হয়। বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং মৎস্য ও পশু সম্পদবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের দিল্লির কর্মকর্তারা এরই মধ্যে ঢাকায় এসেছেন। ঢাকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে তারা আলোচনা করছেন বলে জানা গেছে।

তবে ভারতের নির্বাচন যখন দোরগোড়ায় ঠিক সেই সময়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সফরে কি অর্জিত হবে তা পেশাদার কূটনীতিকদের কাছেও স্পষ্ট নয়। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে ভারতে পার্লামেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে। ওই নির্বাচনে দিল্লির রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে- এমন আভাস এরই মধ্যে মিলেছে। বাংলাদেশের নবগঠিত সরকার চাইছে নির্বাচনের ফল যা-ই হোক সার্বিক সম্পর্ক যেন আগের মতোই থাকে সেই প্রতিশ্রুতি আদায় করতে। যদিও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বরাবরই বলে থাকেন দিল্লির মসনদে পরিবর্তন এলেও সাউথ ব্লকের নীতিতে তেমন হেরফের হয় না। তারপরও ঢাকা পাকা কথা চায় সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে। আর সেটি অবশ্যই নির্বাচনের আগে, কংগ্রেসের আমলেই।

এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার-এর গত ১০ মার্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য-সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে উদ্যোগী হল বাংলাদেশ। এজন্য একদিকে যেমন দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বৃদ্ধির বিভিন্ন পথ চিহ্নিত করা হচ্ছে, তেমনই উন্নত করার চেষ্টা চলছে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের রাস্তাও।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সচিবের পৃথক সফরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি, স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নসহ ছিটমহল বিনিময়, ভারতীয় ঋণ ও অনুদানের ছাড়, পণ্য রপ্তানিতে অশুল্ক বাধা দূর করে বাণিজ্য ভারসাম্য তৈরি প্রভৃতি গুরুত্ব পাবে। অবশ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এরই মধ্যে ‘তিস্তা যে কঠিন’ তা জানিয়ে দিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য, সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও তিস্তা চুক্তির সঙ্গে ভারতের আসন্ন নির্বাচনের একটি যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছেন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এখনো নিশ্চিত নয় যে বিজেপি এককভাবে ক্ষমতায় আসবে। আর কংগ্রেসের সমর্থনে তৃতীয় শক্তি ক্ষমতায় এলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে নরেন্দ্র মোদি যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পর্কে গুণগত কোনো পরিবর্তন না এলেও রাজনৈতিক ভাষার পরিবর্তন হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের হিন্দুদের ব্যাপারে বিজেপির বক্তব্য এবং আন্তঃনদী সংযোগ বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি এরই মধ্যে বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। আর তা কার্যকর হলে তা নতুন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদারের মতে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে। ভারতে কোন দল ক্ষমতায় এলো, তাতে এ সম্পর্কের কোনো হেরফের হবে বলে মনে হয় না। আরেকটি দিক হলো অর্থনৈতিক। তাতেও নীতি একই থাকবে। তবে বিজেপি ক্ষমতায় এলে কিছু বিষয়ে নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন পরিকল্পনার কারণে শিগ্গির তিস্তার ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশের পাওয়ার আশা নেই। পত্রিকাটি লিখেছে, তিস্তার পানিবন্টন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিক্ত ইস্যু হয়েই রয়ে যাবে। সমান পানি বন্টনের জন্য তিস্তা চুক্তির যে খসড়া করা হয়েছে তার বিরোধিতা করছে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। এই বিরোধিতার জন্যই তিস্তা চুক্তি নিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এখন গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে এই তিস্তা চুক্তি। খসড়া চুক্তিতে সমান পানিবন্টনের কথা বলা হলেও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে কৃষি কাজের জন্য আরও বেশি পানি চাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ নদী থেকে পানির প্রবাহ পরিবর্তন করে উত্তরবঙ্গে সেচকাজের জন্য ফিডার ক্যানেলের মাধ্যমে নেয়া হয়েছে পানি। এতে বাংলাদেশে তিস্তায় পানির প্রবাহ কমে গেছে। কমে তা ‘ঐতিহাসিক সর্বনিম্ন’ প্রবাহ শতকরা ১০ ভাগে দাঁড়িয়েছে। এতে তীব্র অসন্তোষ বেড়েছে বাংলাদেশের কৃষক ও জেলেদের মধ্যে। গঙ্গা চুক্তি নিয়ে দু’দেশের যৌথ কমিশনের ৫৭তম বৈঠকে যোগ দিতে ভারতে রয়েছে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাজ্জাদ হোসেন। তিনি গত মঙ্গলবার টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, যমুনার সঙ্গে তিস্তা মিলিত হওয়ার আগে তা প্রবাহিত হয়েছে রংপুরের ভিতর দিয়ে। সেই রংপুরের কৃষক ও জেলেরা প্রশাসনকে অচল করে দিয়েছেন। রংপুরে এ নদীতে ৫০০০ কিউসেক পানি প্রবাহিত হওয়ার রেকর্ড আছে। কিন্তু এর পরিবর্তে এখন প্রবাহিত হচ্ছে মাত্র ৫০০ কিউসেক পানি। এতে কৃষক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের ফসল শুকিয়ে যাচ্ছে। জেলেরা জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে না। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তারা ক্ষোভ দেখাচ্ছে। এতে সেখানে প্রশাসন অচল হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবারের বৈঠকে ফারাক্কা ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজে গঙ্গার পানি প্রবাহ পর্যালোচনা করা হয়। ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের মহাব্যবস্থাপক সৌমিত্র কুমার হালদার জানান, গঙ্গার পানি প্রবাহ নিয়ে এবার তেমন কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশ সঠিক পরিমাণে পানি পাচ্ছে। অবশ্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে খরা মৌসুমে, বিশেষ করে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত সময়ে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার পক্ষে জোর দেয়া হয়।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর-এর মতে ভারতের পক্ষ থেকে যত না, তার চেয়ে অনেক বেশি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের কথা বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অহরহ ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করে পারস্পরিক বন্ধুত্বের গৌরব প্রচার করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের এই প্রচার সত্ত্বেও দু’দেশের এই বন্ধুত্ব কতখানি বাস্তব ও কার্যকর তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বলেছেন, আজ আমরা তিস্তার পানি পাচ্ছি না, সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। কিন্তু আমরা সব কিছু উজাড় করে দিচ্ছি। কিছুই পাচ্ছি না। যে কোনো জিনিসের ক্ষেত্রে একটি ‘বিনিময়’ প্রক্রিয়া আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সভাপতি ম-লীর সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী গত ২৮ আগস্ট জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিস্তা চুক্তি এবং স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকর না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভারতকে মনে রাখতে হবে, আমাদেরকেও আমাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। বন্ধুত্ব ওয়ান সাইডেড (একপাক্ষিক) হয় না। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ভারতের প্রতি বন্ধুত্বের উদার হস্ত প্রসারিত করেছেন। তাদের কাছ থেকেও আমরা সৎ প্রতিবেশীমূলক আচরণ আশা করব।
কিছুদিন পূর্বে নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক আজকাল পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর আসিফ নজরুল বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের বর্তমান যে সম্পর্ক তা একতরফা এবং একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য তা অমর্যাদাকর। বর্তমান সরকার ভারত যা যা চেয়েছে তা-ই করেছে। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে দমন করতে বাংলাদেশ সহায়তা করেছে এবং এটা ভালো, অনেক প্রশংসনীয় কাজ। ভারত ট্রানজিট চেয়েছে বাংলাদেশ তা দিয়েছে, অত্যন্ত সীমিত সময়ের জন্য হলেও দিয়েছে। ভারতের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত সমস্যা, আন্তর্জাতিক নদীর পানিবন্টন, দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য, উভয় দেশের সন্ত্রাসী প্রত্যার্পণ, কিংবা ছিটমহল সমসার সমাধান, যে কোনো বিষয় বলুন সবকিছুতে ভারত যেভাবে বলেছে বাংলাদেশ সেভাবেই সাড়া দিয়েছে। কিন্তু পুরো বিষয়টাই ছিল একতরফা। বাংলাদেশের এই সহযোগী মনোভাবের পরও ভারত বাংলাদেশের সাথে যে ট্রিটমেন্টটা করেছে তাকে কোনভাবেই বন্ধুত্বসূলভ আচরণ বলা চলে না।

তার মতে, দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক হবে উইন-উইন ভিত্তিতে। ওই সম্পর্কের দ্বারা দু’টি দেশই লাভবান হবে, দু’টি দেশেরই স্বার্থ রক্ষা হবে, এটাই নিয়ম। কিন্তু দেখুন, আজ ভারত-বাংলাদেশে সীমান্ত হলো পৃথিবীর সবচেয়ে রক্তাক্ত সীমান্ত। ভারত যদি বাংলাদেশের বন্ধুই হবে তাহলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রক্তাক্ত হবে কেন, সীমান্তে এত বাংলাদেশিকে হত্যা করবে কেনো ভারত। তাও আবার একতরফাভাবে শুধু ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর হাতেই বাংলাদেশি নাগরিক মারা যাচ্ছে।(ইনকিলাব)

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top