সকল মেনু

মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমান নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর নেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ১২ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) :মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমান বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআরের যাত্রীদের খোঁজ নেই এখনও। গতকাল মঙ্গলবার বিমানটির সন্ধান মিলেছে বলে দবি করেছে মালয়েশিয়ার সেনাবাহিনী। কিন্তু বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে এমন কোন তথ্য নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করা হয়েছে। এদিকে, নিখোঁজ বিমান নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও নানান তথ্য ও জল্পনা কল্পনা প্রকাশ হওয়ায় রহস্য জটিল হচ্ছে। বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়েছে নাকি নাশকতার শিকার হয়েছে ? মূলত এই দুটো প্রশ্নই জনমনে সামনে এসেছে। তবে গত পাঁচ দিনেও এমন প্রশ্নের প্রকৃত উত্তর মেলেনি।

গতকাল বুধবার নতুন দুটি তথ্য বিভিন্ন মিডিয়ার প্রকাশ হয়েছে। তার একটি হলো, মালয়েশিয়ার নিখোঁজ জেট বিমানের সন্ধান মিলেছে বলে দাবি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে র্যাবডারে নিখোঁজ বিমানের সংকেত পাওয়া গিয়েছে। সেনাবাহিনী মালাক্কা প্রণালীতে এর অবস্থান জানতে পেরেছে বলে ধারণা করছে। মালয়েশিয়ার পশ্চিম উপকূলে স্থানীয় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বিমানটির সংকেত মিলেছে বলে দাবি তাদের। তবে আজ বুধবার মালয়েশিয়ার বিমান বাহিনী এ বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে খবর প্রকাশ করেছে বিবিসি।

গতকাল প্রকাশ হওয়া দ্বিতীয় খবরটি হলো,চার দিন বাদে হঠাৎই ঐ বিমানের যাত্রী কারও কারও মোবাইল একাধিক বার বেজে উঠেছে। কিন্তু মেসেজ করলে উত্তর মেলেনি। মঙ্গলবার সকালে এমনই দাবি করেছিলেন নিখোঁজ বিমান বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআরের যাত্রীদের বেশ ক’জন আত্মীয়। সে কথা তাঁরা জানিয়েওছিলেন তদন্তকারীদের। চীনে টেলিভিশনে সে খবর দেখানো হয়েছে।কিন্তু দুপুরে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র ইগনাটিয়াস অং বেজিংয়ের সাংবাদিক সম্মেলনে জানালেন, কুয়ালালামপুরে তাঁদের সদর দফতর থেকে এমনই একটি নম্বরে ফোন করা হয়েছিল। তবে সংযোগ হয়নি।

মোবাইল সংযোগ মিললে তার সূত্র ধরে বিমানটিকে খুঁজে পাওয়া যেতে পারত। মঙ্গলবার অন্তত তেমন কিছু ঘটল না। বরং চার দিন পরে এমন অদ্ভুত ভাবে মোবাইল বাজতে শোনা গেল কী করে, সেটাই নতুন রহস্য। শুধু ফোন নয়, এ দিন চিনের একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সার্ভিসেও যাত্রীদের কাউকে কাউকে অনলাইন পাওয়া গিয়েছে বলেও দাবি করেছেন আত্মীয়রা। আত্মীয়দের দাবি যদি সত্য হয়, তা হলে বিমানটি ধ্বংস হয়নি বলে আশা থাকে। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, যাত্রীরা কি তবে বেঁচে আছেন, সুস্থ আছেন? নইলে মোবাইল চালু করেছেন কী করে? যদি ফোন চালু করে থাকেন, তবে উত্তর দিচ্ছেন না কেন? তাঁরা কি বন্দি? তাঁদের মোবাইল অন্য কারও হাতে রয়েছে? তারা কারা? কোথায়? কী তাদের উদ্দেশ্য?

গত কয়েকদিনে এই নিখোঁজ বিমানের রহস্য উদঘাটনে আরেকটি বিষয়ের উপর আন্তর্জাতিক মিডিয়া গুরুত্ব দিয়েছে। তা হলো বিমানটির আরোহীদের মধ্যে চুরি করা পাসপোর্ট নিয়ে যে দু’জন বিমানে উঠেছিলেন তাঁরা। নিখোঁজ মালয়েশীয় বিমানটির আরোহীদের মধ্যে চুরি করা পাসপোর্ট নিয়ে যে দু’জন বিমানে উঠেছিলেন, তাঁদের একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ডয়েচে ভেলে। তাতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ার জাতীয় পুলিশ প্রধান খালিদ আবু বকর জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের দুই নাগরিকের পাসপোর্ট চুরি করে তাঁরা বিমানে উঠেছিলেন৷ এঁদের মধ্যে একজন পুরিয়া নূর মোহাম্মদ মেহরদাদ ইরানের নাগরিক, যাঁর বয়স ১৯ বছর৷ তবে পুলিশ মনে করে, ঐ তরুণ কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য নন৷ বরং তিনি জার্মানিতে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে ধারণা তাদের। তবে অন্য ব্যক্তির পরিচয় এখনো বের করা যায়নি ৷

পাসপোর্ট-চুরির উপর ভিত্তি করে নাশকতার যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে এখন পর্যন্ত তার কোন প্রমান মেলেনি। যদি জঙ্গিরাই বিমান ছিনতাই করে থাকে, সে ক্ষেত্রে নিজেদের দাবি আদায় করার জন্য পরবর্তী যে পদক্ষেপগুলো সাধারনত নিতে দেখা যায় তা এখনো ঘটেনি। নাশকতার জন্য বিমান ছিনতাই করা হলেও জঙ্গিগোষ্ঠী বিমানটি ধ্বংস করে তা জানিয়ে দিতো বলেও ধারণা করা হচ্ছে। ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে ঠিক কতজন বিমানে উঠেছিলো? তারা একই সঙ্গে একই জায়গায় টিকিট কেটেছিলো? উদ্দেশ্য নাশকতা না বেআইনি অভিবাসন? হঠাৎ কেন কুয়ালালামপুর ফেরার চেষ্টা করেছিলো বিমানটি? এমনসব প্রশ্নও উঠে এসেছে এ কয়েকদিনে।

এদিকে,যে দু’জন যাত্রী চোরাই পাসপোর্ট নিয়ে মালয়েশিয়ার বিমানে উঠেছিলেন, তাঁদের সন্ত্রাসবাদী বলতে রাজি নয় ইন্টারপোল৷ ওই দু’জনই ইরানের নাগরিক৷ইন্টারপোলের মুখ্য কার্যালয় লিওঁতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল রিচার্ড কে নোবল জানান, ওই দুই যাত্রীর নাম পৌরি নুর মহম্মদি৷ বয়স ১৮৷ এবং দিলাওয়ার সৈয়দ মহম্মদ রেজা৷ বয়স ২৯৷ এই দু’জনের নাম ইন্টারপোলের ডেটাবেসে না -থাকলেও নোবল নিশ্চিত, এঁদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদীদের কোনও যোগ নেই৷

নিখোঁজ বিমানটির তল্লাশি চালাতে গিয়ে সমূদ্রে তেল ভাসতে দেখার তথ্য শুরুতে আশার আলো দিয়েছে। চীনের উপগ্রহচিত্রে সমুদ্রে নতুন তিনটি জায়গায় তেল ভাসতে দেখা গিয়েছে। তার একটি থেকে যদি কোনও হদিস মেলে, সেটা একটা রাস্তা। অন্য দিকে বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, হয়তো নির্ধারিত পথ বদলে মালয়েশিয়ার পশ্চিম উপকূলে ফিরে এসেছিল বিমানটি। তার পর মালাক্কা প্রণালীতে সেটি ভেঙে পড়ে। এ দিন সেই সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই মালাক্কা প্রণালীতে অনুসন্ধান চালানো হয়। কারণ তথ্য বলছে, শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ যখন হারিয়ে যাওয়া বিমানের সঙ্গে শেষ বারের মতো যোগাযোগ হয় এটিসি-র, তখন তার অবস্থান ছিল মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূলের শহর কোটা ভারু থেকেও বেশি কিছুটা পূর্বে। তার পর সেটি নিজের অভিমুখ বদলে ফিরে এসেছিল বলে রেডারের রেকর্ডিং থেকে আগেই সন্দেহ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেটি যে মালয়েশিয়া ভূখণ্ডের উপর দিয়েই উড়ে গিয়ে শেষমেশ মালাক্কা প্রণালীতে ভেঙে পড়ে, এই তত্ত্ব নিয়েও সন্দেহের অবকাশ আছে। অনেকেরই প্রশ্ন, সে ক্ষেত্রে সেটি এটিসি-র নজর কী ভাবে এড়াল?

ঘটনার পাঁচ দিনেও ২৩৯ জন যাত্রী ও বিমানকর্মী সমেত নিখোঁজ বিমানের কোন খোঁজ মিললো না৷ মালয়েশিয়ার পুলিশ বলছে, তারা এখন কয়েকটি সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে৷ সেগুলি হল বিমান ছিনতাই, অন্তর্ঘাত এবং বিমানযাত্রী ও বিমানকর্মীদের মধ্যে মানসিক অথবা ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল কি না ?

নিখোঁজ বিমানের খোঁজে বিভিন্ন দেশ অংশ নিয়েছে। মালয়েশিয়া,থাইল্যান্ড,সিঙ্গাপুর,চীন,ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড রয়েছে এ মিশনে। বিশ্বের সব বাঘা গোয়েন্দারা নেমেছেন রহস্য উন্মোচনে। আমেরিকাও বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এই রহস্য উন্মেচনে নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমানে বিশ্ব রাজনীতির পরাশক্তিগুলোর মধ্যে ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে না তো? এমন প্রশ্নও জাগছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top