সকল মেনু

ভাড়াটে দিয়ে স্ত্রী খুন; লাশের কাছে যেতে লাগবে পাঁচ দিন

 কুমিল্লা,প্রতিবেদক, ১০ মার্চ :  কুমিল্লার দেবীদ্বারে স্বামীর ভাড়াটে খুনিদের হাতে নিহত গৃহবধূ শাহিনার লাশ উদ্ধারে ডিপ টিউবওয়েলের পাইপ খননকাজ রোববার পুরোদমে শুরু হয়েছে।

তবে লাশ উত্তোলনে আরো পাঁচ দিন সময় লাগতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধারকাজ দেখতে ঘটনাস্থল দেবীদ্বার উপজেলার ছেচরাপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন গভীর নলকূপ এলাকায় প্রতিদিন শত শত উৎসুক জনতা ভিড় জমাচ্ছে।

নিহত গৃহবধূ দেবীদ্বার উপজেলার তুলাগাঁও গ্রামের কেরামত আলীর মেয়ে। তার স্বামী একই ইউনিয়নের ছেচরাপুকুরিয়া গ্রামের দুবাইপ্রবাসী মোবারক হোসেন।

গৃহবধূ শাহিনা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দেবীদ্বার থানা পুলিশের এসআই শাহ্ কামাল আকন্দ জানান, শাহিনার স্বামী মোবারক হোসেনের ভাড়াটে খুনিদের মধ্যে একজন আবদুল করিমকে আটক করার পর তার স্বীকারোক্তিতে লাশ গুমের তথ্য বেরিয়ে আসে। করিম ছেচরাপুকুরিয়া গ্রামের ছোলায়মান মিয়ার ছেলে।

করিম স্বীকারোক্তিতে জানান, শাহিনার স্বামী মোবারক হোসেনের সঙ্গে দুই লাখ টাকা চুক্তিতে শাহিনাকে হত্যার পর পার্শ্ববর্তী একটি অব্যবহৃত গভীর নলকূপের ১৪ ইঞ্চি ব্যাসার্ধ ও ৮০ ফুট দীর্ঘ পাইপের ভেতরে ফেলে দেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে পুলিশ পাইপের ভেতরে বাঁশ দিয়ে প্রায় ২৪ ফুট গভীরে নিহত শাহিনার লাশের আলামত পায়। শনিবার সকালে কুমিল্লা সদর থেকে নলকূপ স্থাপন ও উত্তোলন প্রতিষ্ঠান ‘ভাই ভাই মুক্তা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ’-এর লোকজন ঘটনাস্থলে আসে এবং তাদের সঙ্গে ৮০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। তারা রোববার থেকে পুরোদমে লাশ উত্তোলন শুরু করেছে।

এ ব্যাপারে নলকূপ স্থাপন ও উত্তোলন প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই মুক্তা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের স্বত্বাধিকারী মো. আলী আকবর জানান, শনিবার থেকে উত্তোলন সরঞ্জামাদি ঘটনাস্থলে নেওয়া হয়। রোববার থেকে কাজ শুরু হলেও সম্পূর্ণ পাইপ উত্তোলন করতে আরো চার-পাঁচ দিন সময় লাগবে।

নিহত শাহিনার বড় ভাই মুজিবুর রহমান বলেন, ১২ বছর আগে মোবারক হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় শাহিনা আক্তারের। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে শাহিনা সবার ছোট। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দুই বছর আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হলে মোবারক হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা শাহিনা আক্তারের ওপর নির্যাতন চালায়। মোবারক হোসেন বিদেশে চলে যাওয়ার পরও মোবারক হোসেনের পরিবার শাহিনার ওপর নির্যাতন চালায়।

মুজিবুর রহমান বলেন, ‘একপর্যায়ে আমার বোন বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে দেবীদ্বার থানায় নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেন। এ মামলার পরে তাকে স্বামীর বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন। শাহিনা মানুষের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের নিয়ে স্বামীর বাড়িতেই পড়ে থাকেন। চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে শাহিনা নিখোঁজ হন।’

নিহতের বড় ভাই আরো বলেন, ‘শাহিনার স্বামীকে তিন লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ পাঠিয়েছি। বিয়ের সময় নগদ ৯০ হাজার টাকা দিয়েছি। তবু তাদের মন পাওয়া যায়নি। তারা প্রায়ই যৌতুকের টাকার জন্য শাহিনাকে মারধর করত। মাঝে একবার শাহিনার পরিবারের সদস্যরা একটি ভুয়া তালাকনামা আমাদের বাড়িতে পাঠায়। ওই শোকে তিন দিনের মাথায় আমার বাবা মারা যান।’

মুজিবুর রহমান বলেন, ‘শাহিনার তিন সন্তান এখন আমাদের বাড়িতে রয়েছে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top