সকল মেনু

৮০ ফুট নিচ থেকে শাহিনার লাশ উঠছে

 জেলা প্রতিবেদক, কুমিল্লা, ৯ মার্চ :  কুমিল্লার দেবীদ্বারে গভীর নলকূপের পাইপের ভেতরে ফেলে গুম করা শাহিনা আক্তার নামের এক গৃহবধূর (৩২) লাশ তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নলকূপের ৮০ ফুট গভীরে চলে গেছে শাহিনার লাশ।

লাশ তুলতে ৮০ হাজার টাকায় খনন মিস্ত্রিদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। শনিবার দুপুরে লাশ তোলার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা শেষ হতে তিন দিন লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারেক মো. আবদুল হান্নান।

নিখোঁজ হওয়ার প্রায় এক মাস পর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শাহিনা সম্পর্কে তথ্য উদঘাটনে সক্ষম হয় দেবীদ্বার থানার পুলিশ।

শাহিনাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আবদুল করিম নামের একজনকে আটক করে পুলিশ। তিনি ছেচরাপুকুরিয়া গ্রামের ছোলায়মান মিয়ার ছেলে। শনিবার আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, শাহিনার স্বামী মোবারক হোসেনের সঙ্গে দুই লাখ টাকা চুক্তিতে তারা তাকে হত্যা করেছেন।

শাহিনা আক্তার দেবীদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের তুলাগাঁও গ্রামের কেরামত আলীর মেয়ে। তার স্বামী একই ইউনিয়নের ছেচরাপুকুরিয়া গ্রামের দুবাইপ্রবাসী মোবারক হোসেন।

শাহিনা আক্তারের বড় ভাই শাহ আলম সরকার জানান, ১২ বছর আগে মোবারক হোসেনের সঙ্গে শাহিনার বিয়ে হয়। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দুই বছর আগে মোবারক হোসেন দেশে আসার পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ শুরু হয়। এর সূত্র ধরে মোবারক হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা শাহিনা আক্তারের ওপর নির্যাতন চালাতে শুরু করেন। চার মাস পর মোবারক হোসেন বিদেশে চলে যান কিন্তু তার পরও মোবারক হোসেনের পরিবার শাহিনার ওপর নির্যাতন অব্যাহত রাখে।

একপর্যায়ে শাহিনা তাদের বিরুদ্ধে দেবীদ্বার থানায় মামলা দায়ের করেন।

পরবর্তীতে মোবারক হোসেন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিদেশ থেকে শাহিনার ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। তাকে স্বামীর বাড়ি থেকে চলে যেতে বলা হয়। কিন্তু শাহিনা যাননি। মানুষের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের নিয়ে স্বামীর বাড়িতেই ছিলেন।

এরপর হঠাৎ গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে শাহিনা নিখোঁজ হন। অনেক সন্ধান করেও তাকে না পাওয়ায় দেবীদ্বার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

দেবীদ্বার থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) এবং এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ্ কামাল আকন্দ বলেন, ‘শাহিনা নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা বিভিন্নভাবে তদন্ত চালাতে থাকি। বৃহস্পতিবার বিকেলে ছেচরাপুকুরিয়া গ্রামের আবদুল করিমকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করি। পরে জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল করিম স্বীকার করেন, তিনি হত্যার সঙ্গে জড়িত। স্বীকারোক্তিতে তিনি জানান, শাহিনাকে হত্যা করার জন্য তার স্বামী মোবারক হোসেন তাদের সঙ্গে দুই লাখ টাকায় চুক্তি করেন। তারা এ পর্যন্ত এক লাখ টাকা পেয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী ৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে আবদুল করিম ও তার দুই সহযোগী শাহিনাকে ঘর থেকে ডেকে এনে পাশের একটি ফাঁকা স্থানে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর শাহিনার লাশ ঘটনাস্থলের পাশে একটি অব্যবহৃত গভীর নলকূপের (ডিপ টিউবওয়েল) পাইপের ভেতর ফেলে পাইপের মুখ মাটি দিয়ে বন্ধ করে দেন।’

ওসি তারেক মো. আবদুল হান্নান বলেন, ‘আবদুল করিমের দেয়া তথ্যানুসারে আমরা বৃহস্পতিবার রাতেই তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে ওই ডিপ টিউবওয়েলের পাইপ শনাক্ত করে হত্যার আলামত পাই। ওই পাইপ ওঠানোর জন্য নলকূপ খননকারী কুমিল্লার একটি দলের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে তারা খননকাজ শুরু করেছে। হাত্যাকাণ্ডে জড়িত বাকিদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top