সকল মেনু

নারী বলেই মজুরি অর্ধেক!

ঢাকা, ৮ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : টঙ্গীর ছোট দেওড়া এলাকায় রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করেন জুলেখা বেগম। ইমারত নির্মাণের সব কাজেই পারদর্শী জুলেখা। একজন পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করলেও মজুরি পান অর্ধেক। একই কাজ করে সমান সময়ে একজন পুরুষ শ্রমিক ৮০০ টাকা পেলেও জুলেখার জোটে মাত্র ৪০০ টাকা।

শেরপুরের মাধবপুরের বিধবা আয়শার আয়েই চলে নিজের ও চার সন্তানের খাওয়া-পরা। প্রায় দু’বছর হলো স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে শ্রম বিক্রি করছেন আয়শা। ধানের চাতালে কাজ করে দিনে ১৭৫ টাকা পারিশ্রমিক পান তিনি। সমান সময় ব্যয় করে একই কাজে একজন পুরুষ পায় ৩৫০ টাকা। আয়শার আক্ষেপ, কেন তিনি পুরুষ হয়ে জন্মালেন না? নারী হলেই মজুরি অর্ধেক।

এমন চিত্র শুধু টঙ্গী বা শেরপুরের নয়, সারাদেশের। নারী শ্রমিকরা সরকারি-বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানে মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে বেসরকারি খাতে এ প্রবণতা ব্যাপক। একই কাজ করে পুরুষ সহকর্মীর তুলনায় পান অর্ধেক পারিশ্রমিক। কাজ একই কিন্তু মজুরি অর্ধেক। আয়শা ও জুলেখাদের এমন মজুরি বৈষম্যের মধ্যে ৮ মার্চ শনিবার পালিত হবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

বিআইডিএসের (বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৭ ভাগ কর্মজীবী নারীর মাসিক বেতন একই পদে কর্মরত একজন পুরুষের বেতনের ৫২ ভাগ। একজন পুরুষ ১০০ টাকা পেলে সে ক্ষেত্রে একজন নারী পান ৫২ টাকা। বিআইডিএসের ‘বেরিয়ার টু ফিমেল এমপ্লইমেন্ট’ শীর্ষক অপর এক জরিপের ফলাফলে উল্লেখ করা হয়েছে, ৩৩ ভাগ নারী চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন কম মজুরির কারণে।

মজুরি বৈষম্যের বিষয় স্বীকার করে বৃহস্পতিবার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক উল ইসলাম নিজ দফতরে বলেন, সরকারিভাবে ন্যুনতম বেতন কাঠামো ঘোষণার পর এর প্রবণতা কমে এসেছে। তবে বেসরকারি খাতে এ প্রবণতা বেশি। এটি রোধের চিন্তাভাবনা করছে সরকার।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কর্মক্ষেত্রেও নির্যাতন ও বৈষম্যের প্রধান শিকার নারীরা। একই কাজ করেও তাদেরকে মুখ বুজে কম মজুরি নিতে হয়। গত সাত বছরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ দ্বিগুণ বেড়েছে। যে ক্ষুদ্র ঋণের জন্য ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন সেখানেও মুখ্য ভূমিকা নারীর। তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হয়ে ওঠার পেছনেও নারী শ্রমিকদের অবদানই বেশি।

মোট অভিবাসী শ্রমিকদের ১৩ শতাংশেরও বেশি এখন নারী। দেশের ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তার ৩৫ শতাংশই নারী। ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, কৃষি, নির্মাণ শিল্প সর্বত্র নারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি বাড়ছে নারী শিক্ষার হার ও রাজনৈতিক ক্ষমতায় নারীর সংখ্যা। এ অবস্থা থেকে নারী সমাজের মুক্তি এখনও কথা আর কাগজেই আটকে আছে।

১৯১১ সাল থেকে ৮ মার্চ নারী সমঅধিকার দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে ১৫৬ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা। সরকারি বাহিনী তাদের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছিল। সেই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতি বছর ৮ মার্চ সরকারি-বেসরকারি আয়োজনে পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

শনিবার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দিবসটি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। বেসরকারি পর্যায়েও নানা কর্মসূচি পালিত হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top