সকল মেনু

সুপারহিট সিনেমাগুলোর মজার মজার সব ভুল

বিনোদন প্রতিবেদক, ৫ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : একটি গল্পকে কেটেছেঁটে রূপান্তর করা হয় চিত্রনাট্যে, আবার সেই চিত্রনাট্যকে নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগে তৈরি করা একটি ছবি। প্রযোজক, পরিচালক এবং হাজার হাজার লোকের অক্লান্ত পরিশ্রম ও বুদ্ধির জোরেই সাফল্য অর্জন করতে পারে একটি ছবি। আচ্ছা, সিনেমা গুলো কি নিখুঁত হয়? কখনোই না! আপনার দেখা এবং ভীষণ প্রিয় কিছু সিনেমায় এমন কিছু ভুল আছে যেগুলো শুনলে রীতিমত অবাক হবেন আপনি। আর ভাববেন, ভুল গুলো আগে চোখে পড়েনি কেন?

দিলওয়ালে দুলহানিয়া লেজায়েঙ্গে
যশ চোপড়ার প্রযোজনা সংস্থার সর্বকালের সেরা প্রেমের কাহিনী কোনটি? এক বাক্যে উত্তর আসবে দিলওয়ালে দুলহানিয়া লেজায়েঙ্গে। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি ১০৬ কোটি টাকার ব্যবসা করে। ছবিটি রাজ-সিমরানের প্রেমের গল্প নিয়ে তৈরি করা হয়। মজার ব্যাপার হলো, ছবিটিতে সিমরান একটি রক্ষনশীল পরিবারের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও বান্ধুবিদের সাথে পুরো ইউরোপ ভ্রমণে যাওয়ার জন্য কোনো না কোনো ভাবে পটিয়ে ফেলে তার বাবাকে। আবার কাকতালীয় ভাবে একই উদ্দেশ্যে ভ্রমনে বেরিয়ে পড়ে রাজ তার বন্ধুদের সাথে নিয়ে। এবং আরও চোখে পড়ার মতো ব্যাপার হল একই কেবিনে সিমরান এবং রাজের বন্দী হয়ে যাওয়া এবং বন্ধুদেরকে খুঁজে পাওয়া। তবে সবচাইতে লক্ষণীয় ভুল হচ্ছে ইউরোপের বরফ ঢাকা পর্বত-শৃঙ্গে দেখা যায় কাজল ও শাহরুখ খানকে নাচে গানে মেতে উঠতে দেখা যায় কোনো প্রকার শীতের পোশাক ছাড়াই!

হেরা ফেরি
প্রিয়দর্শনের হাস্যরসে ভরা চলচ্চিত্র ‘হেরা ফেরি’। বেশী পর্যালোচনা করলে হয়তোবা হাজার হাজার অসঙ্গতি চোখে পড়তে পারে আপনার। কিন্তু অত গভীরে না গেলেও যে অসঙ্গতিটি আপনার চোখ এড়াবে না সেটি হল চলচ্চিত্রে একটা দৃশ্য থাকে এমন- সুনীল শেঠী অপেক্ষায় থাকে টয়লেটে যাবে বলে, কিন্তু অন্যদিকে কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ অক্ষয় কুমার টয়লেটে ঢুকে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুনীল শেঠী উপরে খোলা টয়লেটে এক বালতি পানি ঢেলে দেয়। অক্ষয় তো ভিজে-টিজে একাকার। কিন্তু সবচাইতে বেমানান যে ব্যাপারটি চোখে পড়ে তা হলো, ভেজা অবস্থায় অক্ষয় কুমারের পায়ে নামীদামী হাইস্ট্রিট ব্র্যান্ডের চপ্পল, যা সিনেমায় তার দরিদ্র চরিত্রের সাথে মোটেও মানায় না। প্রিয়দর্শন পরিচালিত ‘হেরা ফেরি’ ছবিটি মুক্তি পায় ২০০০ সালে।

আঁখে
২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আঁখে’ ছবি আলোচনার সৃষ্টি করে। তিন অন্ধকে দিয়ে দুর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাতির মতো নতুন এক চিত্রনাট্য নিয়ে হাজির হন পরিচালক ভিপুল আমরুত শাহ। পরেশ রাওয়ালের মতো দক্ষ অভিনেতার কৌতুক গুলো ছাড়া তেমন মজার কিছু না থাকলেও রয়েছে চোখে পড়ার মতো অসঙ্গতি। তিন অন্ধকে নিয়ে নানা রিহারসেল ও প্র্যাকটিসের মাধ্যমে পরিকল্পনা হয় ব্যাংক ডাকাতি করার। কিন্তু সিনেমায় যে উপায় গুলো দেখানো হয় তা আসলেই অসম্ভব। অনেক গুলো দৃশ্যেই দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন মানুষদের মত আই মুভমেন্ট দেখা যায় অভিনেতাদের মাঝে। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন অমিতাভ বচ্চন, অর্জুন রামপাল, পরেশরাওয়াল, সুনীল শেঠীর মতো অভিনেতারা।

লাগান
লাগান ছবি দেখা হয়নি এমন বলিউড সিনেমাপ্রেমী পাওয়া অসম্ভব। ২০০১ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ছবিটির কাহিনী রচনা এবং পরিচালনা করেন আশুতোষ গওয়ারকার। আমির খানের নিখুঁত অভিনয়, আশুতোষের বুদ্ধিদীপ্ত পরিচালনা ছবিটিকে দর্শকের মনে স্থান দিতে পেরেছিল। খাজনা আদায় নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে ব্রিটিশ অফিসারদের মনকষাকষি হয়। আর সে ঘটনার অবসান ঘটে গ্রামবাসী ও ব্রিটিশ অফিসারদের খেলার মধ্যদিয়ে। এই কাহিনী আসলেই সম্ভব কিনা সেই ভাবনা না হয় বাদ থাকুক। অসংখ্য অসঙ্গতির মাঝে একটি অসঙ্গতি এই যে ছবিতে নায়িকা ও ব্রিটিশ পার্শ্ব নায়িকাকে যেসব গহনা ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে, সেগুলো আসলে খুব বেশি পুরনো নয়। বলতে গেলে হাল ফ্যাশনের।

থ্রি ইডিয়টস
রাজ কুমার হিরানি পরিচালিত এবং আমির খান অভিনীত ‘থ্রি ইডিয়টস’ এমন একটি ছবির নাম যা শুধুমাত্র একটি বিনোদনের উপজীব্য না হয়ে মানুষের ভিতরকার বিবেককে উজ্জীবিত করতে সক্ষম। তবে মজার ব্যাপার হল মিঃ পারফেক্টশনিস্ট আমির খানের মতো একজন অভিনেতা থাকতে কিভাবে এত বড় ভুল হয়ে গেল ছবি নির্মাতাদের দ্বারা। ছবিটিতে দশ বছর আগের ফ্ল্যাশ ব্যাকে দেখানো হয় যে আমির খান এবং মাধবান ইন্টারনেট ডাটা কার্ড ব্যবহার করে পড়াশোনার কাজ চালাতেন যেখানে প্রকৃত পক্ষে দশ বছর পূর্বে কোনো ওয়্যারলেস ইন্টারনেটের ব্যবস্থা ভারতে ছিল না।

দিওয়ার: 
অমিতাভ বচ্চনকে অ্যাংরি ইয়াংম্যান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন কোন ছবিটি দিয়ে বলতে পারবেন? ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া যশ চোপড়া পরিচালিত ‘দিওয়ার’ ছবিটি দিয়ে। ছবিটিতে তখনকার সময়ের হাজারো নারীর মনে জায়গা করে নেয়া অমিতাভ বচ্চন ছাড়া এই ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন শশী কাপুরের মতো অভিনেতা। ৭০ দশকের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দুই হতদরিদ্র ভাইয়ের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে জীবন সংগ্রামের উপর গড়ে ওঠে ছবিটির কাহিনী। এবার আসা যাক আসল কথায়, দিওয়ার ছবিটিতে দেখানো হয় অমিতাভ বচ্চন ৩৩ বছর যাবত পাকিস্তান কয়েদি হিসেবে জীবন-যাপন করছেন। অন্যদিকে এও দেখানো হয় যে অমিতাভের ২৮ বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব! কোন উত্তর কি আছে?

কাহো না পেয়ার হে:
প্রথম ছবি দিয়ে ছক্কা পেটাতে সক্ষম হয় বর্তমান বলিউডের সুপার হিরো ঋত্বিক রোশন। ২০০০ সালের অন্যতম ব্লকবাস্টার হিট ছবির হিরোর তকমাটি লাগিয়ে ফেলে রাকেশ রোশন প্রযোজিত ‘কাহনা পেয়ার হে’ ছবিটি দিয়ে। নতুন মুখ আমিশা পাটেলের প্রাণবন্ত অভিনয় দর্শকের নজর কাঁড়তে সক্ষম হয়। ছবিটিতে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় রাতারাতি সফল তারকাতে পরিণত হন ঋত্বিক রোশন। ছবিটি ব্লকবাস্টার হওয়ার পেছনে ভিন্নধর্মী গান এবং কাহিনীকে কারণ হিসেবে ধরা হয়। ছবির দ্বিতীয়ার্ধের শেষের দিকে দেখানো হয় রাজ ইন্ডিয়ায় আসতে না আসতেই হাতে গুলিবিদ্ধ হন। এখানেই শেষ নয় গুলিবিদ্ধ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই দেখা যায় সুস্থ বাহু নিয়ে দিব্যি গিটারে রোহিতের সুর তুলে যাচ্ছেন। যা প্রকৃত পক্ষে আসলে কতোটা সম্ভব! কে জানে?

বাজিগর:
আব্বাস-মাস্তান পরিচালিত বলিউড ক্রাইম থ্রিলার ‘বাজিগর’ মুক্তি পায় ১৯৯৩ সালে। ‘সরস্বতীচন্দ্র’ উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণিত আব্বাস-মাস্তানের ‘বাজিগর’ ছবিটি। ছবিটিতে শাহরুখ খান, শিল্পা শেঠী ও কাজলের মতো জনপ্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রীরা কাজ করেছেন। ছবির এক পর্যায়ে দেখানো হয়, প্রেমিকা শিল্পা শেঠীকে বাড়ির ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন শাহরুখ। ধাক্কা খেয়ে নিচে একটি গাড়ির উপরে পড়ে গেলে গাড়ির দরজার গ্লাস গুলো ভেঙ্গে গুড়গুড় হয়ে যায়। তার কিছুক্ষন পড়েই দেখানো হয় অক্ষত সেই গাড়িটিতে করেই স্থান ত্যাগ করেন। এই ভুলটি আপনার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে হবে না। অনায়েসেই ধারা পড়ে যাবে পরিচালকের সতর্কহীনতা।

ওম শান্তি ওম: 
ফারাহ খান পরিচালিত রোমান্টিক পুনর্জন্মের উপর নির্মিত ‘ওম শান্তি ওম’ ২০০৭ সালে মুক্তি পায়। ছবিতে অভিনয় করেন বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খান এবং হিন্দি ছবিতে প্রথম অভিষেক করা দীপিকা পাডুকোন। ২০০৭ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ব্যবসা সফল ছবিগুলোর অন্যতম ‘ওম শান্তি ওম’। বলিউডের তারকাবহুল চলচ্চিত্রের খেতাবও অর্জন করে ফারাহ খানের এই ছবিটি। আরেকটি অজানা তথ্য, দীপিকার পাডুকনের প্রথম হিন্দি ছবিতে আপনারা যে কণ্ঠটি শুনতে পান তা খোদ দীপিকার নয় কণ্ঠটি দিয়েছেন মোনা ঘোষ শেঠী। ১৯৭০ এবং ২০০০সালের ফ্যাশন ট্রেন্ডের উপর নির্ভর করে ছবিটি তৈরি করা হয়। পুনর্জন্মের ব্যাপারটি অনেকটা অদ্ভুত। সেখানে শাহরুখ খানের তো পুনর্জন্ম ঘটে তাও আবার ট্যাটুসহ এবং মজার ব্যাপারটি হল। শাহরুখের হাতের ট্যাটুটি প্রজ্বলিত হতে থাকে এবং কিছুক্ষণ পর সেটা হারিয়ে যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top