সকল মেনু

উদীচী ট্র্যাজেডির দেড়দশক পূর্তি আজ হত্যাযজ্ঞের ‘খলনায়কেরা’ রয়ে গেল পর্দার আড়ালেই

 রিপন হোসেন, যশোর থেকে:  উদীচী ট্র্যাজেডির দেড়দশক পূর্তি হচ্ছে আজ ৬মার্চ। এই দীর্ঘকাল পার হলেও চাঞ্চল্যকর হত্যাযজ্ঞটির ‘খলনায়ক’দেরকে এখনও চিনিহত করা যায়নি; থেকে গেছে পর্দার আড়ালেই। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আর গোজামিলের তদন্তের কারণে খালাস প্রদানের মাধ্যমে আদালত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে বাধ্য হয়। বর্তমান সরকার আমলে নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞের ঘটনার পুনঃতদন্তের কাজ শুরু হলেও তা যেন আবার থমকে গেছে। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার যশোরে দিবসটি পালনের জন্য উদীচী হত্যা মামলা পুনঃতদন্ত ও বিচার আন্দোলন কমিটি দিনব্যাপি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, শহীদ স্মারকে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা ও প্রতিবাদী সঙ্গীতানুষ্ঠান। ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ রাতে যশোরের ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভয়াবহ দু’টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ১০ জন নিহত ও শতাধিক নারী পুরুষ আহত হন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এমন নারকীয় হামলায় যশোরের মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়েন। ঘটনার ১৫ বছর পর হলেও এই ট্র্যাজেডির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘাতকচক্র ও নেপথ্যের নায়করা রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
১৯৯৯ সালে উদীচী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর এব্যাপারে পৃথক দু’টি মামলা হয়। প্রথমে কোতয়ালি পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করলেও পরবর্তীতে তা সিআইডির উপর ন্যস্ত হয়। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। পরবর্তীতে চার্জ গঠনের সময় উচ্চ আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তরিকুল ইসলামকে এমামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। চাঞ্চল্যকর এ মামলা আদালতে গড়ানোর ৭ বছর পর ২০০৬ সালের ৩০ মে মামলার রায় প্রদান করেন আদালত। রায়ে সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। মামলার এমন রায়ে যশোরসহ সারাদেশের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ বিস্মিত হন। তারা এ রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনর্তদন্তের দাবি করেন।
এদিকে, দেশের আলোচিত জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নান আটক হওয়ার পর পুলিশের কাছে প্রদত্ত জবানবন্দিতে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার কথা স্বীকার করে। এই জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে উদীচী হত্যা মামলা পুনঃতদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। জঙ্গীনেতা মুফতি হান্নানের উদীচী হত্যাযজ্ঞ সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর জবানবন্দির পর উদীচী হত্যা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয় সরকার। এই মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়। পরবর্তীতে এই হত্যা মামলায় মুফতি হান্নানকে যশোরে এনে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। সেসময় জিজ্ঞাসাবাদে সে উদীচী হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
২০১০ সালের ৮জুন ওই আপিল আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির পর আসামিদের বক্তব্য জানতে চেয়ে বিচারিক বেঞ্চ নোটিশ জারির আদেশ দেন। হাইকোর্ট থেকে জারিকৃত এ সংক্রান্ত নথিপত্র ২৬ জুলাই’১০ যশোর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসে পৌছায়। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে খালাসপ্রাপ্তরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন নিয়েছেন। এরপর ওই মামলার আর কোন অগ্রগতি হয়নি বলে জানা গেছে।
তবে যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল কাদের আজাদ জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top