সকল মেনু

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতাল ডাক্তার নেই ওষুধ নেই, আছে রোগীর দীর্ঘশ্বাস

 মো. আমিরুজ্জামান, নীলফামারী ০৪ মার্চ: নীলফামারীর সৈয়দপুর ৫০শয্যা হাসপাতালটি কাগজে-কলমে ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হলেও নেই প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও ওষুধ। রোগিরা চিকিৎসা নিতে এসে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। ১৯৬২ সালে সৈয়দপুর শহরে নির্মিত এ হাসপাতালে উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী খানসামা, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, তারাগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৫ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল। কিন্ত নেই পর্যাপ্ত ডাক্তার। বেড প্রতি বছরে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ওষুধ বরাদ্দ থাকলেও প্রতিটি রোগীকে গুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে পরামর্শ পত্র। শুধুমাত্র দুর্গন্ধ, ময়লা-আবর্জনার পাশাপাশি সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের দীর্ঘশ্বাস লক্ষ্যণীয়।সূত্র জানায়, সৈয়দপুর শহরের এ হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে কাগজে-কলমে ১০০ শয্যায় উন্নীত দেখানো হলেও দীর্ঘদিন থেকে ৫০ শয্যার অবকাঠামো নিয়েই চলছে। জনবল সংকটতো রয়েছেই। ১৪ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও চিকিৎসা সেবা দীর্ঘদিন থেকে চলছে ৪ জন ডাক্তার দিয়ে। হাসপাতালে অভিজ্ঞ বা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার যেন সোনার হরিণের মতো। গাইনী, মেডিসিন, সার্জারী, এ্যানেসথেসিয়া ও নাক-কান-গলার ডাক্তার ছাড়াও নেই কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। যেসব ডাক্তার রয়েছেন তাদেরও হ-য-ব-র-ল অবস্থা। শুধুমাত্র একজন ডাক্তার সময়ের কদর দিয়ে কর্মস্থ’লে উপস্থিত হলেও বাকিরা আসছেন খেয়াল খুশিমত। হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেয়ার চেয়ে তারা বাইরে প্রাকটিসে ব্যস্ত থাকেন বেশি। এছাড়া হাসপাতালে এক্সরে মেশিন ও প্যাথলোজি বিভাগ থাকলেও রোগীদের পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বাইরের প্যাথলোজি ল্যাবে। শুধুমাত্র নিজেদের পকেট ভারি করতে ওইসব ডাক্তারের এ সুকৌশল। সূত্রটি আরও জানায়, ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে ইনডোরে প্রতিদিন ৩০/৩৫ ও আউটডোরে আসছেন ১ থেকে দেড়শ রোগী। কিন্ত’ যেসব রোগীদের সরকারি বরাদ্দের ওষুধ পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। কারণ বরাদ্দকৃত ওষুধের বেশিরভাগই কালো বাজারে পাচার হচ্ছে বলে একাধিক মহলের অভিযোগ। আর কালো বাজারে বিক্রি করা টাকাই ওই হাসপাতালে একজন স্টোর কিপার ও একজন চিকিৎসক রয়েছেন ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার মালিক।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মঞ্জুয়ারা, নাসিমা ও বেবীসহ বেশ ক’জন রোগী জানান, ডাক্তারী সেবার পাশাপাশি তেমন কোন ওষুধও পাচ্ছেন না তারা। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, ডাক্তার সংকট, ওষুধ চুরিসহ ৫০ শয্যা ওই হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য সাবেক সাংসদ এএ মারুফ সাকলান পরিদর্শন করে সকল সমস্যার সমাধান করার প্রতিশ্র“তি দিলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেননি তিনি। যার কারণে সরেজমিনে গিয়ে দেখে বোঝার উপায় নেই এটা কোন ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও রোগীদের সেবার জন্য সরকার প্রতি বছর বেড প্রতি দেড় লাখ টাকার মূল্যের ওষুধ বরাদ্দ দিচ্ছেন। অন্যদিকে দুর্গন্ধযুক্ত টয়লেট ও বাথরুম। মাঝে মধ্যে সেখানে প্রয়োজন মেটাতে পানিও পাওয়া যায় না বলে রোগীদের অভিযোগ।
সৈয়দপুর ১শ’ শয্যা হাসপাতালের সার্বিক চিকিৎসা সেবার মান এবং অব্যবস্থাপনা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ আলহাজ্ব শওকত চেীধুরী। এর মধ্যে তিনি আকর্ষিকভাবে হাসপাতাল পরিদর্শন করে বিভিন্ন ইউনিট ঘুরে দেখেন এবং বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলেন। তিনি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান ও অব্যবস্থাপনা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ( আরএমও) ডা. মনিরুল ইসলাম মানিককে সতর্ক করে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। পরে তিনি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের সাথে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মতবিনিময় করেন।
এ ব্যাপারে কথা হয় সাংসদ আলহাজ্ব শওকত চৌধুরীর সাথে। তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই এলাকায় নেক নজর রয়েছে। তিনি নীলফামারী-৪ আসনের সাংসদ ও বিরোধী দলীয় হুইপ নির্বাচিত হয়েছেন। জনগণের সকল সমস্যা তিনি আন্তরিকতার সাথে সমাধান করবেন বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top