সকল মেনু

নিষিদ্ধ ঘোষিত বইগুলো

সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রতিবেদক, ৩ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : এটা অবশ্যই স্বীকার্য যে বই মানুষের আত্মার উন্নতি ঘটায়। তবে এই আত্মোন্নতি কোন কোন সময় অন্যকারো অবনতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর যখনি একটি বই কারো জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখনি তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়ে নিজেদের অবস্থানকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা কর হয়। নিষিদ্ধ ঘোষণার কোন নির্দিষ্ট কারণ নেই তবে এটি দেশ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভাষা, ধর্ম, এমনকি ব্যক্তির সম্মানহানীর কারণেও করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সময়ে নিষিদ্ধের তালিকায় স্থান পাওয়া বিখ্যাত কিছু বইয়ের আলোচনা হয়ে যাক তাহলে…

উইলিয়াম টেইন্ডাল অনূদিত ‘বাইবেল’

অশ্লীলতার কারণে প্রথম যে বইটি নিষিদ্ধ হয় সেটি ছিল খ্রস্টানদের পবিত্র বাইবেল। ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত উইলিয়াম টেইন্ডাল (William Tyndale) অনুদিত বাইবেল নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ ছিল অশ্লীলতা (বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা)। তৎকালীন অষ্টম হেনরি নিজের জীবনের বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে বিস্তর ঝামেলায় পড়েছিলেন। তিনি চেয়েছেন বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে কোথাও যেন আলোচনা না হয়। তাই পরিশেষে পুড়িয়ে ফেলা হয় অনুদিত বাইবেলের ছ’হাজার কপি। অনুদিত বাইবেলটি নিষিদ্ধ হওয়ার পর টেইন্ডাল প্রানে বাঁচার জন্য দেশত্যাগ করতে হয়েছিল। বর্তমানে সেই অনুদিত বাইবেলটিই পুরো বিশ্বের মানুষ অনুস্মরণ করছে।

দ্য রামায়াণ, অব্রে মেনেন

“দ্য রামায়ানা অ্যাজ টোল্ড বাই অব্রে মেনেন” (The Ramayana as Told by Aubrey Menen) ছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত আরেকটি ধর্মীয় গ্রন্থ। আধুনিক আঙ্গিকে রামায়ণকে ব্যাখ্যা করায় গ্রন্থটি নিষিদ্ধ করা হয়। দেব দেবীকে মানবরূপে উপস্থাপনের কারণে ভারত সরকার গ্রন্থটি ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

হিস্ট্রি অব ইটালি, থমাস উইলিয়াম

১৫৫৪ সালে প্রকাশিত থমাস উইলিয়ামের (Thomas William) “হিস্ট্রি অব ইটালি” বইটি তৎকালীন ধর্মযাজকদের অনৈতিক কাজের জীবন্ত সাক্ষ্য বহন করে। তখনকার সময়ে যেহেতু চার্চই ছিল সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান তাই ধর্মযাজকদের দাপটও ছিল উচ্চপর্যায়ে। কেউ যেন কখনও যাজকদের অনৈতিকতা তুলে ধরতে না পারে তার দৃষ্টান্ত সরূপ থমাসকে টুকরা টুকরা করে কেটে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল।

ইউলিসিস, জেমস জয়েস

সাহিত্যের ইতিহাসে আরেকটি অবাক করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছিলেন জেমস জয়েস (James Joyce) তার বিখ্যাত ইউলিসিস (Ulysses) লিখে। তিনি ১৯০৪ সালে জুন মাসে মাত্র ১৮ ঘন্টার ঘটনা (সকাল ৮টা থেকে বিকাল ২টা) নিয়ে উপন্যাস লিখেছিলেন। উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পর অশ্লীলতার অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। উপন্যাসটির ৪৯৯ কপি পুড়িয়ে ফেলা হয়। উপন্যাসটি এত তথ্যবহুল ছিল যে জয়েস বলেছিলেন “ডাবলিন শহর যদি কোনদিনে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে হুবহু শহরটি গড়ে তোলা যাবে তার এই ইউলিসিস থেকে।” বইটি কেবল উপন্যাস নয় জীবন্ত ইতিহাসও বটে। বর্তমানে উইলিসিস সেরা উপন্যাসগুলোর মধ্যে একটি।

দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব হাকলবেরি ফিন, মার্ক টোয়েন

মার্ক টোয়েনের ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব হাকলবেরি ফিন’ ভাষার অজুহাত দেখিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বইটি মূলত বর্ণান্ধতার কারণে মার্কিনিরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৮৮৪ সালে প্রকাশিত এ বইয়ে শ্বেতকায় ছেলে এবং কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের বন্ধুত্ব দেখানো হয়, যা শ্বেতঙ্গ শাসকেরা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। বর্তমান বিশ্বে ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব হাকলবেরি ফিন’ বইটি সুপাঠ্য।

এনিমেল ফার্ম, জর্জ অরওয়াল

জর্জ অরওয়েলের ‘এনিমেল ফার্ম অ্যা ফেয়রি টেল’ বইটি মূলত সাংকেতিক উপন্যাস। এ উপন্যাসে রাশিয়ার স্টালিন যুগের ভয়াবহতাকে তুলে ধরা হয়েছিল। বইটি রাশিয়াতে নিষিদ্ধ হওয়ার পরে এনিমেল ফার্ম (Animal Farm) নামে মার্কিন মুল্লুকে প্রকাশিত।

বিশ্ববিধান সম্পর্কে কথোপকথন, গ্যালিলিও গ্যালিলি

গ্যালিলিও গ্যালিলির “বিশ্ববিধান সম্পর্কে কথোপকথন” বইটিতে মহাবিশ্বের চরম সত্য ফুটে উঠলেও চার্চের তৎকালীন ধারনা ছিল পৃথিবী স্থির এবং অন্যসব গ্রহ নক্ষত্র পৃথিবীকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু গ্যালিলিও বললেন পৃথিবী সহ অন্যসব গ্রহ নক্ষত্র সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। চরম সত্য কথাটি চার্চের বিরুদ্ধে চলে যায়। পরবর্তীতে ক্ষুব্ধ পোপ অনির্দিষ্টকালের জন্য গ্যালিলিওকে বন্দী করার নির্দেশ দেন। ১৬৪২ সালে গ্যালিলিওর বন্দী অবস্থায় মৃত্যু হয়। তবে বন্দী দশা থেকে এক কপি চালান করে ছিলেন স্ট্রসবুর্গ-এ যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। গ্যালিলিওর সেই বিশ্ববিধান জোর্তিবিদ্যার আমূল বদলে দিয়েছে।

প্রজাপতি, সমরেশ বসু

সমরেশ বসুর “প্রজাপতি” অশ্লীলতার অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। লেখক বুদ্ধদেব বসু আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “ যৌনতার কারণে ‘প্রজাপতি’ নিষিদ্ধ হলে বাইবেল মহাভারতেকেও নিষিদ্ধ করতে হয়।” পরে বইটির উপর থেকে সকল আইনি বাধা তুলে নেয় হয়।

অ্যা ফেয়ারওয়েল টু আর্মস, আরনেস্ট হেমিংওয়ে

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার আধা-আত্মজীবনীমূলক এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়  ১৯২৯ সালে ইটালিতে। উপন্যাসটিতে কাপোরেত্ত যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ইতালীয়  সৈন্যদের পিছু হটার ঘটনাটি ভীরুতা হিসেবে উল্লেখ এবং অশ্লীলতার দায়ে সেই  সময়কার আদালত বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

এলিস’স অ্যাডভেঞ্চার ইন ওয়ান্ডার ল্যান্ড, লুইস ক্যারল

বইটি চীনে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ও অদ্ভুত একটি কারণে চীনা সরকার কর্তৃক  নিষিদ্ধ হয় ১৯৩১ সালে। হানান প্রদেশের একটি আইন ছিল যে, কোন পশুর  কণ্ঠে কোনভাবেই মানুষের ভাষা তুলে দেওয়া যাবে না এতে পশুকে মানুষের  সমমর্যাদায় নিয়ে আসা হবে। কিন্তু বইটিতে বিড়াল, মানুষের মতো করে কথা  বলতে পারে আর এজন্যেই বইটি নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এক জার্মান সৈনিক যিনি পরবর্তীতে পৃথিবীর সবচেয়ে অনুভূতিপ্রবণ ঔপন্যাসিকদের একজন হয়ে ওঠেন- তিনি এরিক মারিয়া রেমার্ক। তার রচিত বিখ্যাত যুদ্ধবিরোধী উপন্যাস- অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট (মূল নাম- ইম ওয়েস্তেন নিখৎস নুয়্যেস)- সে সময়ে জার্মানির সমরনীতি ও যুদ্ধের বীভৎসতার দিকে দুঃসাহসিক আঙুল তুলেছিল। ১৯২৯ এ প্রকাশিত এ বইটিকে নিষিদ্ধ করেছিল জার্মান সরকার। অতঃপর ১৯৪১ এ আরও একটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top