সকল মেনু

সাত শ’ টাকার গ্যাস সিলিন্ডার ১৬শ টাকা!

ঢাকা, ৩ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : চরম গ্যাস সংকটের মধ্যে চট্টগ্রামে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি নিয়ে শুরু হয়েছে নৈরাজ্য। সরবরাহ স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে ডিলাররা সিন্ডিকেট করে চড়া দামে বিক্রি করছে প্রতিটি সিলিন্ডার। কারখানা থেকে ক্রেতার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত ধাপগুলোতে বড় অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে ডিলাররা। সরকার নির্ধারিত ৭শ’ টাকার সিলিন্ডার খুচরা বাজারে ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত কয়েক মাস ধরে চট্টগ্রামে তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে বাসাবাড়িতে রান্নার চুলা পর্যন্ত জ্বলছে না। ছোট-বড় শিল্প কারখানাতেও গ্যাস সংকট প্রকট। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি জানায়, গ্যাস সংকটের কারণে মূল পাইপ লাইনে এমনিতেই চাপ কম রয়েছে। এর মধ্যে নতুনভাবে আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগ প্রদানের ফলে পাইপ লাইনে গ্যাসের চাপ আরো কমে যাওয়ায় গ্রাহকরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। নতুন সংযোগের জন্য এখনো কয়েক হাজার আবেদন জমা রয়েছে।

বিপিসি সূত্র জানায়, সরকারিভাবে ইস্টার্ন রিফাইনারি ও কৈলাশটিলা থেকে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন এলপি গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ দেয়া হয়। এসব এলপি গ্যাস পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার অয়েল কোম্পানির মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়। তাদের নিয়োগ করা ডিলারদের মাধ্যমে খুচরা পর্যায়ে পৌঁছানো হয়ে থাকে সিলিন্ডারগুলো। প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডারে সরকার প্রায় ৪০০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিপিসি প্রতিটি সিলিন্ডার কোম্পানিগুলোকে সরবরাহ করে ৬৩০ টাকায়। ডিলাররা এটি পায় ৬৭৮ টাকায়। আর ক্রেতাদের কাছে এটা বিক্রির কথা ৭০০ টাকায়। কিন্তু এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। ডিলাররা সিন্ডিকেট করে খুচরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। মাঝে মধ্যে সরবরাহ স্বল্পতার কথা বলে বাজারে সিলিন্ডারের দাম ইচ্ছামতো বাড়ানো হচ্ছে। ৭০০ টাকার সিলিন্ডার বাজারে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা, এমনকি তার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। বেসরকারি কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডারের সঙ্গে সরকারিভাবে ভর্তুকি দেয়া গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্যে কোন পার্থক্য নেই।

সূত্র জানায়, দেশে এলপি গ্যাসের চাহিদা প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রায় ৯০ হাজার মেট্রিক টন এলপি গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এ প্রসঙ্গে যমুনা অয়েল কোম্পানির ডিলার শাহাদাত হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, ‘সরবরাহ কম পাওয়া গেলে আমাদের লোকসান দিতে হয়। কোটা অনুসারে অনেক সময় সিলিন্ডার পাওয়া যায় না। সরবরাহ কম হলে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।’ সরকারি এলপি গ্যাস সিলিন্ডারগুলোতে সাড়ে ১২ কেজি গ্যাস থাকার কথা। কিন্তু নির্ধারিত পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যায় না বলে একাধিক ক্রেতা অভিযোগ করেছেন।

আবাসিক ছাড়াও শিল্প কারখানা ও হোটেল রেস্টুরেন্টেও এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে এসব প্রতিষ্ঠানে সিলিন্ডার গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে। ১২ কেজি সাড়ে ১২ কেজি ছাড়াও ২৫ কেজি ও ৪৫ কেজি ওজনের এলপি গ্যাস সিলিন্ডারও বাজারজাত করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বেসরকারিভাবে ক্লিনহিট, টোটাল, বিন-হাবিব, সুপার গ্যাস, বসুন্ধরা কোম্পানির এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এসব সিলিন্ডার ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায় খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিন-হাবিব (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম হাবিবুল হক ইত্তেফাককে বলেন, বেসরকারি পাঁচটি কোম্পানি বাজারে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করে। প্রতিমাসে আমরা বৈঠক করে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারণ করে থাকি। আমার কোম্পানি দৈনিক তিন হাজার সিলিন্ডার সরবরাহ করে।’

এদিকে বাজারে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের মান নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে শংকা বিরাজ করছে। প্রায় সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। বেসরকারি কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডারগুলোর মান পরীক্ষা করার মতো কোন প্রতিষ্ঠান নেই। জানা যায়, বেসরকারি অনেক কোম্পানি টেন্ডার ছাড়াই মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে সিলিন্ডার আমদানি করছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ফজলুর রহমান খান ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৪ লাখ গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে। পাঁচ বছর পরপর এসব সিলিন্ডার সরকারি প্রতিষ্ঠান এলপিজি’র মাধ্যমে পরীক্ষা করে মেরামত করা হয়। বেসরকারি কোম্পানিগুলো অনেক ক্ষেত্রে টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিয়ে সিলিন্ডার আমদানি করছে। এগুলোর গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।’ ইত্তেফাক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top