সকল মেনু

মিয়ানমার সীমান্তে ফের জঙ্গি প্রশিক্ষণ

ঢাকা, ৩ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : বাংলাদেশি জঙ্গিদের নতুনভাবে সংগঠিত করে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনগুলো। সীমান্তে একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, আফগানফেরত অর্ধশত রোহিঙ্গা জঙ্গি এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও এ ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে বসবাসরত আরএসওর সাবেক এক কমান্ডার সমকালকে জানান, মিয়ানমার সীমান্তের অদূরে পাহাড়ি এলাকায় রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনগুলো নতুন করে কয়েকটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প খুলেছে। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের অদূরে মিয়ানমারের

ভেতরে স্থাপিত এসব ক্যাম্পে দিনরাত জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশি অনেক জঙ্গি পালিয়ে গিয়ে এসব ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছে। এখানে অস্ত্র ও সামরিক বিভিন্ন কলাকৌশল প্রশিক্ষণ দিচ্ছে আফগানফেরত অর্ধশত রোহিঙ্গা জঙ্গি। আমতলী, বটতলী, কুরিক্যং প্রভৃতি এলাকায় রয়েছে এসব প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারাও জঙ্গিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের বাহারছড়া এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছে জঙ্গিদের বেশ কিছু সদস্য। এ ছাড়া উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে রয়েছে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের বিশাল নেটওয়ার্ক। শরণার্থী ক্যাম্পকে নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করছে জঙ্গিরা। ১৯৯৬ সালে এই ক্যাম্পসংলগ্ন লণ্ডাখালী এলাকায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে গ্রেফতার হয়েছিল ৪১ জঙ্গি। এদের সবাই এখন জামিনে মুক্ত হয়ে ফের আত্মগোপনে চলে গেছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), আরাকান মুভমেন্ট, আরাকান পিপলস ফ্রিডম পার্টি, আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এআরএনও), হরকাতুল জিহাদসহ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন এখন একটি গ্রুপে কাজ করার জন্য ঐকমত্যে পেঁৗছেছে। আরএসওর প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ ইউনুছ, রোহিঙ্গা নেতা ড. ওয়াকার উদ্দিন, আবুল ফয়েজ জিলানী, নুরুল ইসলাম, সালামত উল্লাহ, মোহাম্মদ শফি উল্লাহ, নাজমুল আলমসহ শীর্ষ কয়েক নেতা সম্প্রতি সৌদি আরবের রিয়াদে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দ্বিধাবিভক্ত রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে তৎপরতা চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের পরপরই জঙ্গি নেতারা তহবিল সংগ্রহে নামেন। এই টাকায় অস্ত্র ক্রয় হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। রোহিঙ্গা জঙ্গিদের শীর্ষ কয়েকজন নেতা এখন কক্সবাজারে রয়েছেন।একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, রোহিঙ্গা জঙ্গিরা বড় একটি তহবিল সংগ্রহ করছে এনজিওর নামে। ‘মুসলিম এইড’, ‘করুনা’, ‘ইমাম মুসলিম’, ‘দারুল আনসার’, ‘সমন্বিত মানবিক উদ্যোগ’ প্রভৃতি এনজিওর নামে তারা বিভিন্ন দেশ থেকে তহবিল সংগ্রহ করেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার সদরের ঝিলংজার মহুরীপাড়ায় ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টার নামে একটি মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে জঙ্গিদের অর্থে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আরএসওর শীর্ষ নেতা হাফেজ সালা উল ইসলাম গত বছরের ২১ মার্চ গ্রেফতার হয়ে কিছুদিন জেলে থাকলেও সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে গেছেন। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা তাকে জামিনে বের হতে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। টেকনাফে একটি মাদ্রাসায় গোপন বৈঠককালে হাফেজ সালাহ উল ইসলামকে আটক করেছিল পুলিশ। সূত্র জানিয়েছে, এই জঙ্গি নেতা এখন ফের তৎপর হয়ে উঠেছেন।

রোহিঙ্গা জঙ্গিরা তাদের নেটওয়ার্ক হিসেবে ব্যবহার করছে কক্সবাজারের দুটি শরণার্থী ক্যাম্পকে। রোহিঙ্গা জঙ্গি আলী জোহার, হাজি ফজল, রফিক আহমদ, হাফেজ নয়ন, লালু ডাক্তার, শামসু মাঝি, হাফেজ জালাল, মৌলানা শফিউল্লাহ, নুরুল হক মাঝি, নূর মোহাম্মদ, আবদুল রশিদ, মোহাম্মদ সায়েদ, আবু কাদের, আবু ইয়াহিয়া, হামিদ, রুহুল আমিন, আবদুল্লাহ মোহাম্মদসহ অনেক জঙ্গি অবৈধভাবে ক্যাম্পে অবস্থান করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা জঙ্গিদের শতাধিক সদস্য দেশের বিভিন্ন স্থানে মসজিদে ইমাম-মুয়াজ্জিন হিসেবেও কাজ করছে। এদের মধ্যে বেশ কিছু আফগানফেরত জঙ্গিও রয়েছে। এদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে এসেছে। কক্সবাজার ও বান্দরবানে আদালতপাড়াকেন্দ্রিক কিছু আইনজীবী, আইনজীবীর সহকারী ও দালালের সমন্বয়ে গড়া চক্রটি ভুয়া কাগজ তৈরি করে জঙ্গিদের জেল থেকে ছাড়িয়ে আনে।

এদিকে, ‘অ্যাসেম্বলি অব রোহিঙ্গা অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের তথ্যও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে এসেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা জঙ্গিরা অনলাইনভিত্তিক একটি রেডিও এবং একটি টিভিকেন্দ্রও চালু করেছে। ‘রোহিঙ্গা ভিশন’ নামে এই টিভি ও রেডিও ব্যবহার করে তারা জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে। বাংলাদেশি জঙ্গিরা এদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে।সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলায় বেশ কিছু মাদ্রাসাসহ অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে রোহিঙ্গা জঙ্গিগোষ্ঠীর অর্থে এবং সরাসরি তত্ত্বাবধানে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও অন্যান্য পদে ছদ্মবেশে চাকরি করছে অনেক জঙ্গি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এসব প্রতিষ্ঠানকে এখন নজরদারিতে রেখেছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. আজাদ মিয়া জানিয়েছেন, সীমিত লোকজন দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। শরণার্থী ক্যাম্প অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকা। এখানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নজরদারি রয়েছে। তাই সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া পুলিশ ক্যাম্পে অভিযান পরিচালনা করে না। এই সুযোগ হয়তো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা নিতে পারে। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তাদের কাছেও রয়েছে। শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে এখন নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত পুলিশ দিয়ে অভিযানও চালানো হবে।  সমকাল

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top