সকল মেনু

এন্টি টেরোরিজম ইউনিট শক্তিশালী হচ্ছে

 আছাদুজ্জামান, ঢাকা, ২ মার্চ :  নিষিদ্ধ ঘোষিত ৯টি জঙ্গি সংগঠনের গোপন জোট নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের প্রশাসন। এ জন্য পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিটকে (এটিইউ) আরো শক্তিশালী করে ধর্মীয় জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযানের পরিকল্পনা আঁটছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তা ব্যক্তিরা।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ কথা স্বীকার করে হটনিউজ২৪বিডি.কমকে জানান, জঙ্গিরা বেশ কিছুদিন ধরে ‘জিহাদ’-এর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তৎপরতা শুরু করেছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তারা একটি জঙ্গি জোটের নামও চূড়ান্ত করেছে। জঙ্গিদের নতুন এই জোটের নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্বাধীন বাংলাদেশ কমিটি’। হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) মজলিশে আমেলার সিনিয়র সদস্য মাওলানা আবু বকরকে জোটের আমির নির্বাচিত করে অন্য আটটি সংগঠনের আমিরদের মজলিশে আমেলার সদস্য বানানো হয়েছে।

সূত্রটি আরো জানায়, স্বাধীন বাংলাদেশ কমিটিতে প্রাথমিকভাবে ৯টি জঙ্গি সংগঠন যোগ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সোহেল মাহফুজের নেতৃত্বাধীন জামা’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), মুফতি আবদুস সালামের নেতৃত্বাধীন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি), মুফতি আবদুল হান্নানের নেতৃত্বাধীন হরকাতুল মুজাহিদীন, মুফতি আবদুর রউফের তা’আমির উদ দীন, বায়েজিদ খান পন্নী প্রতিষ্ঠিত হিজবুত তাওহীদ, মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীর আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, মাওলানা আবদুল্লাহ মাদানির জইশ-ই-মোহাম্মদ, মাওলানা আবদুর রহমান আফগানির আনসারু বাইতিল মাকদিস এবং হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আল্লাহর দল।

বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রমতে- দেশে বর্তমানে ২৯টি সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন সক্রিয়। স্বাধীন বাংলাদেশ কমিটিতে যোগ দেওয়া ৯টি সংগঠনের বেশির ভাগ জঙ্গি নেতাই বর্তমানে কারাবন্দি। বিশেষ করে জঙ্গি সংগঠনগুলোর এ জোটের মূল উদ্যোক্তা ও  নেতৃত্বদানকারী হরকাতুল জিহাদের তিন গ্রুপের তিন আমিরই দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি।

সূত্র জানায়, এসব নেতারা কারাগারে থাকলেও তাদের ক্যাডার বাহিনী জিহাদ কায়েমের জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

হটনিউজ২৪বিডি.কমকে একটি গোয়েন্দা সূত্র জানান, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ কমিটি সম্পর্কে আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য এসেছে। এ জন্য আমরা তাদের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি।’

ওই সূত্র আরো জানায়,‘আল কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরির অডিও বার্তা প্রকাশের পরপরই বাংলাদেশে সক্রিয় ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলো নড়েচড়ে বসেছে। তারা জিহাদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। এজন্য জঙ্গি সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষে রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রামে কয়েক দফা বৈঠকও করেছে।’

তবে এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে জঙ্গিরা নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে তাদের সেই উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিলম্ব হতে থাকে।

একাধিক সূত্রে আরো জানা গেছে, বাংলাদেশে সশস্ত্র জিহাদের প্রশ্নে মূলত তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী নামের জঙ্গি সংগঠনটি। তিনটি ভাগ হলো- মুফতি আবদুস সালামের নেতৃত্বে হুজির মূল অংশ, মুফতি আবদুল হান্নানের নেতৃত্বে হরকাতুল মুজাহিদীন এবং মুফতি আবদুর রউফের  নেতৃত্বে তা’আমির উদ দীন।

এদের মধ্যে হুজি সশস্ত্র জিহাদের পক্ষে না থাকলেও অন্য দুটি অংশ শুরু থেকেই সশস্ত্র জিহাদের চিন্তা লালন করে আসছে। এমনকি হুজি সংগঠনের নাম পাল্টে প্রথমে ইসলামী দাওয়াতি কাফেলা, পরে সচেতন ইসলামী জনতা, এরপর ইসলামী গণ-আন্দোলন এবং সর্বশেষ ইসলামিক  ডেমোক্রেটিক পার্টি (আইডিপি) নামে প্রকাশ্যে কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করছে তারা।

নতুন করে জঙ্গি তৎপরতা শুরু এবং জোট গঠন সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক একেএম শহীদুল হক হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন,‘এটা নতুন কিছু নয়। এ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোটেও ভীত নয়।’

তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর বিধায় পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। আর জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে জোট গঠনের তৎপরতা নিয়ে যেসব খবর প্রকাশিত হচ্ছে তার যথার্থতা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান শহীদুল হক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top