সকল মেনু

উপজেলা নির্বাচনের ফলাফলে তৃণমূলে বিলুপ্তির পথে জাতীয় পার্টি

ঢাকা, ১ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : তিন দশক আগে ক্ষমতায় থাকার সময় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাত ধরেই উপজেলা পদ্ধতি শুরু হয়েছিল। গত সরকারের আমলে জোটবদ্ধভাবে ক্ষমতায় এবং এই সরকারের আমলে প্রধান বিরোধীদল হিসেবে থাকার পরেও এরশাদের দল শতকরা একভাগ উপজেলাতেও জয়ী হতে পারছে না। দুই দফার উপজেলা নির্বাচন জাতীয় পার্টির জন্য অনেকটা রাজনৈতিক মৃত্যু বার্তাই নিয়ে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

১৯ এবং ২৭ জানুয়ারির নির্বাচন বাস্তবতার মাটিতেই নামিয়ে এনেছে জাতীয় পার্টিকে। ২১১টি উপজেলার মধ্যে মাত্র দু’টি উপজেলায় দলটি জয় পেয়েছে।

অন্যদিকে ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে কোণঠাসা অবস্থায় থাকা জামায়াত ২০টি উপজেলায় জয়ী হয়েছে। সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে চেয়ে অথবা খালি মাঠে নির্বাচিত হওয়া আর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জনগণের ভোট পাওয়া যে এক কথা নয় তা এখন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।

বৃহত্তর রংপুরকে জাতীয় পার্টির ঘাটি হিসেবে উল্লেখ করা হলেও সেখানকার ভোট ব্যাংকে ভাগ বসিয়েছে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির একাংশ। আর জামাতের উত্থাণও চোখে পড়ার মতো।

যদিও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ বিভিন্ন সময় বলেছেন, এটা লাঙ্গল মার্কার নির্বাচন নয়। তবুও উপজেলা নির্বাচনের ফল শুধু জাতীয় পার্টি নয়, আওয়ামী লীগের জন্যও অস্বস্তি নিয়ে এসেছে। সংসদের প্রধান বিরোধী দল উপজেলা নির্বাচনে কোথাও কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারছে না তা বিস্ময়করই বটে।

বিপর্যয় অবশ্য জাতীয় পার্টির ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। ক্ষমতার মসনদে বসা থাকাবস্থায়ই দল গঠন করেছিলেন এরশাদ। ক্ষমতায় থেকে তিনি যতবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন ততবারই তার দল জয়ী হয়েছে। ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের পতনের পরও অবশ্য জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গণতন্ত্রে ফেরার পর প্রথম নির্বাচনেও দলটি ৩০টির বেশি আসনে জয়ী হয়।

১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। পরে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টি জোট বাঁধলেও এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি একসময় চারদলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায়। নাজিউর রহমান মঞ্জুর নতুন জাতীয় পার্টি গঠন করে থেকে যান জোটে। এর আগে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও এরশাদের দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে নতুন দল গঠন করেন। তবে নানা ভাঙচুরের পরও বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিলেন এরশাদ। দু’টি প্রধান দলই টানাটানি করছিল তাকে নিয়ে।

তবে ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ে পড়ে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মতবিরোধের কারণে প্রবীণ রাজনীতিবিদ কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বে একটি অংশ গড়ে তোলে আলাদা জাতীয় পার্টি। কয়েকদিন পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এরশাদ নিজেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এ সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি খোদ ঘরের ভেতরেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। তার স্ত্রী রওশন এরশাদই এ সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানান। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলটির একটি অংশ নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলে গণভবনের সঙ্গে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে হাসপাতালে বন্দি রেখেই নির্বাচনে যান রওশন।

৫ই জানুয়ারির অদ্ভুত নির্বাচনে দলটি ৩৪টি আসনে জয়ী ঘোষিত হয়। বিরোধীদলীয় নেত্রী হন রওশন এরশাদ। আবার সরকারে দলটি অংশ নেয়। এ অদ্ভুত ব্যবস্থায় বেশির ভাগ এমপিই আনুগত্য বহাল রাখেন রওশনের প্রতি। যদিও শেষ পর্যন্ত এরশাদ নিজেই আনুগত্য ঘোষণা করেন। এ আনুগত্য তাকে অবশ্য প্রকাশ করেই যেতে হবে। জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলার পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। কখন এই তদন্ত শেষ হয় তাই এখন দেখার বিষয়। তার আগে জাতীয় পার্টি রাজনৈতিকভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায় কিনা সে প্রশ্নই জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। একসময়ের প্রবল প্রভাবশালী দল মুসলিম লীগের বিলুপ্তির বার্তা নিয়ে এসেছিল ৭০-এর নির্বাচন। এরপর আর দলটি কোনদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। জাতীয় পার্টি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, না বিলুপ্ত হয়ে যাবে- তা দেখার জন্য অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top