সকল মেনু

অর্থ সংকটে টেলিটক: ফান্ড ভাঙিয়ে চলছে বিটিসিএল!

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক, ১ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : চরম অর্থ সংকটে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান। একমাত্র সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটক অর্থ সংকটে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ওপর দিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) অব্যাহত লোকসানের কারণে স্থায়ী আমানত-এফডিআর ভাঙিয়ে কর্মীদের বেতন-ভাতা দিচ্ছে। গত অর্থবছরে বিটিসিএলের অপারেটিং লোকসান হয়েছে ৫৪৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে এফডিআর ভাঙিয়েছে ৪২০ কোটি টাকার। সব মিলিয়ে ৯৬৪ কোটি টাকার লোকসানে পড়েছে সংস্থাটি। বাংলাদেশ প্রতিদিন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, অদক্ষ প্রশাসন এবং অকার্যকর বোর্ড অব ডিরেক্টরের কারণেই সংস্থাটি বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারছে না। ফলে দফায় দফায় সংযোগ ফি, লাইন রেন্ট, কল রেট কমিয়েও নতুন গ্রাহক পাচ্ছে না বিটিসিএল। একসময়ের ১৮ হাজার টাকা মূল্যের সংযোগ ফি কমিয়ে ঢাকায় ২ হাজার এবং উপজেলা পর্যায়ে ৬০০ টাকা করে নির্ধারণ করেও গ্রাহক মিলছে না সংস্থাটির। এখনো প্রায় চার লাখ সংযোগ খালি পড়ে আছে। কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী অলস সময় কাটাচ্ছেন। গতিশীল নেতৃত্বের অভাবে একসময়ে চাহিদার তুঙ্গে থাকা সরকারি টেলিফোন সংস্থাটির কর্মীরা ক্রমে হতাশায় ডুবে যাচ্ছেন। তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

২০১১-১২ অর্থবছরে মাত্র ১০০ কোটি টাকা লাভ ছাড়া আগের চার বছরই লোকসানে ডুবে ছিল বিটিসিএল। ৩৮১ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট নিয়ে টিকে থাকার সংগ্রামে হিমশিম খাছে সংস্থাটি। এ বিপর্যয় উত্তরণে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। সেবা কার্যক্রমে মুখ থুবড়ে পড়া সংস্থাটির সারা দেশে কোটি কোটি টাকার সম্পদ এবং কয়েক হাজার জনবল কোনো কাজে আসছে না। নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে না পারলে বিটিসিএল সরকারের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে, বিটিসিএলের সহযোগী সংস্থা সরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটকের অবস্থাও সন্তোষজনক নয়। টেলিটকের প্রতিযোগী মোবাইল কোম্পানিগুলো যেখানে নিয়মিত মুনাফা করছে সেখানে টেলিটক চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে টেলিটকও নতুন গ্রাহক পাচ্ছে না। নতুন সেবা আনতে পারছে না গ্রাহকদের জন্য। সরকারি অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়েও টেলিটক গ্রাহকদের আস্থায় ফিরতে পারছে না।

জানা গেছে- মোবাইল, ইন্টারনেট আর সামাজিক যোগাযোগ সাইটের দাপটে ল্যান্ডফোননির্ভর যোগাযোগ অনেকটাই গুরুত্ব হারিয়েছে। তাই টেলিফোনের (ল্যান্ডফোন) প্রতি আগ্রহ নেই গ্রাহকদের। ফলে একসময়ে বিপুল চাহিদা থাকা এ টেলিফোন ব্যক্তি পর্যায়ে আর গ্রাহক টানতে পারছে না। শুধু সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোয় নতুন সংযোগ নেওয়া হয়। গত পাঁচ বছরে ঢাকায় বিটিসিএলের নতুন গ্রাহক বেড়েছে মাত্র ২৬ হাজার, বছরে ৫ হাজারের কিছু বেশি। তবে বিদ্যমান গ্রাহকের কাছ থেকেও আগের মতো বিল পাচ্ছে না বিটিসিএল। তাদের ইন্টারনেট সেবার প্রতিও মানুষের এখন আগ্রহ নেই। ফলে অব্যাহত লোকসানে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সরকারি এ সংস্থাটি।

সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে টেলিফোনের ধারণক্ষমতা প্রায় ১৩ লাখ। এর মধ্যে সংযোগ আছে মাত্র ৯ লাখ। প্রায় ৪ লাখ সংযোগ খালি রয়েছে। বিটিসিএলের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ঢাকার পাঁচটি জোনে মোট ধারণক্ষমতা হচ্ছে ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৩১৩টি। এর মধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধু রাজধানী ঢাকায় টেলিফোন গ্রাহক আছে ৫ লাখ ৩৪ হাজার। পাঁচ বছর ধরে প্রতি বছর মাত্র ৫ হাজার নতুন গ্রাহক পেয়েছে বিটিসিএল। বিটিসিএলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিটিসিএলের পরিচালনা পর্ষদ এবং প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর মধ্য দিয়ে চলমান বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

জানা গেছে, এরই মধ্যে বিটিসিএল তাদের ল্যান্ড ফোনের নতুন সংযোগের চার্জ (মূল্য) কমিয়েছে। ঢাকায় (গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ) নতুন সংযোগ পেতে একজন গ্রাহককে খরচ করতে হচ্ছে মাত্র ২ হাজার টাকা। আর ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে সংযোগমূল্য মাত্র ১ হাজার টাকা। আর অন্যান্য বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলায় নতুন সংযোগের জন্য গ্রাহককে দিতে হয় মাত্র ৬০০ টাকা। লোকাল কলের ক্ষেত্রে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতি মিনিট ৩০ পয়সা এবং রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রতি মিনিটে কল বাবদ খরচ হচ্ছে মাত্র ১০ পয়সা। আর বিটিসিএল থেকে অন্যান্য অপারেটরে কল করলে প্রতি মিনিটে গ্রাহকের খরচ হচ্ছে মাত্র ৮০ পয়সা। একইভাবে মাসিক লাইন রেন্টও কমিয়ে দিয়েছে বিটিসিএল। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় প্রতি মাসে গ্রাহককে লাইন রেন্ট দিতে হবে মাত্র ১৬০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে লাইন রেন্ট হচ্ছে ১২০ টাকা এবং উপজেলা ও গ্রোথ সেন্টারের গ্রাহকদের দিতে হয় মাত্র ৮০ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক, তার, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবুবকর সিদ্দিক বলেন, আমরা গ্রাহক বাড়াতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। রেট কমিয়েছি। ভালো সার্ভিস দেওয়ারও চেষ্টা করছি। রেট কমানোর ফলে এখন আমাদের খরচটাও উঠছে না। এসব কারণেই লোকসান হচ্ছে। তিনি বলেন, কারও ওপর তো কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া যায় না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top