সকল মেনু

গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষ

ঢাকা, ১ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে স্থান পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে।

বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্র দফতর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিচারকাজের দীর্ঘসূত্রতা, গণমাধ্যমে মত প্রকাশের ওপর সরকারের কড়াকড়ির বিষয়টিও ওঠে আসে।

এ ছাড়া নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়টিও প্রতিবেদনে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়।

২০১৩ সালের ঘটনাবলি তুলে ধরে এই প্রতিবেদনে বলা হয়, সংবিধানে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ না করার কথাও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোনো ছাড় না দেওয়া এবং সুষ্ঠু তদন্তের কথা বলা হলেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ না দেখার কথাও বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশি-বিদেশি সংবাদপত্র, গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংগঠন এবং সরকারের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, ২০১৩ সালে ৭০ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জনকে হত্যার পেছনে বিশেষ বাহিনী র্যাব রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৬৯ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১৭ হাজার ১৬১ জন।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম নিয়ে প্রতিবেদনে অধিকারের দেওয়া বিভিন্ন পরিসংখ্যানকে গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। এ সংগঠনটির বিরুদ্ধে তথ্য বিকৃতির অভিযোগ এনেছে সরকার। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে গুম ও অপহরণ অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করে অধিকার এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। র্যাব, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা জেল ও কারাগারে বন্দী নির্যাতনের ঘটনাও মানবাধিকার প্রতিবেদনটিতে ওঠে এসেছে। জেলখানার পরিবেশকে অস্বাস্থ্যকর, নির্মমও বলা হয়েছে তাতে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১২ মার্চ বিরোধী ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ৩ হাজার ২১৫ ব্যক্তিকে কোনো ধরনের গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদের অনেকেই দিনমজুর, শ্রমিক, হকার, রিকশাচালক কিংবা দোকানি। যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে সরকার ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের আইনজীবীদের ওপর ‘চাপ প্রয়োগ’ করছে বলেও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বরাত দিয়ে এ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। এতে বিচারের দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি এখানকার বিচারকদের কম ‘সম্মানী’ প্রাপ্তির বিষয়টিও বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দিতে বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিটিভি স্বাধীন নয়, যা দেশের ৬০ ভাগ মানুষের জন্য একমাত্র গণমাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। বেসরকারি টিভি বাংলাভিশন এবং একুশে টিভি বিরোধী দলের কর্মসূচি দেখাতে চাইলে বাধার সম্মুখীন হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নির্দেশে দুটি অনুষ্ঠান স্থগিত না করায় রাজস্ব বোর্ড এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির হয়রাণির শিকার হতে হয়েছে বলে উদাহরণ টানা হয়েছে।

সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত না হওয়ায় বিষয়টি ওঠে এসেছে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে। সরকার থেকে কিছু ফেসবুক পেজ বন্ধ করে দেওয়ার কথা উদাহরণ হিসেবে টানলেও ইন্টারনেট মিডিয়ায় স্বাধীনভাবেই বাংলাদেশিরা তাদের মত প্রকাশ করতে পারছে বলে মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলের সংসদ বর্জন এবং তাদের কর্মসূচিতে সরকারের বাধা দানের কথা এসেছে। বি:নিউজ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top