সকল মেনু

যবিপ্রবিতে লোক নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

রিপন হোসেন, যশোর, ২৪ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) :  যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) নানা অনিয়ন দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের রন্ধে রন্ধে দুর্নীতি প্রবেশ করেছে। ফলে এখানে শিক্ষার চেয়ে এখন দুর্নীতি মূখ্য হয়ে গেছে। গতকাল কঠোর গোপনীতার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২ অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আর এই নিয়োগ থেকে প্রায় কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টির সুমান দিন দিন ক্ষুুন্ন হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবার পর থেকে আস্তে আস্তে দুর্নীতি প্রবেশ করে। বিশেষ করে নিয়োগ বাণিজ্য ওপেন সিক্রেট হয়ে পড়ে। কতিপয় কর্মকর্তা সিন্ডিকেট করে এখানে নিয়োগ বাণিজ্য আরম্ভ করে। আর এই নিয়োগ বাণিজ্যে প্রধান হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আহসান হাবীব। তিনি মূলত অর্থের বিনিময়ে লোক সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক নিয়োগ দিয়ে আসছেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচজন কর্মচারি (অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর) নিয়োগের বিজ্ঞাপ্তি দেয়া হয়। এই বিজ্ঞপ্তির পাঁচ কর্মচারি মধ্যে চার জনকে ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আরও চারজনকে প্যানেলে রাখা হয়। যা পরবর্তীতে নিয়োগ দেয়া হবে। আর এর অধিকাংশই রেজিস্ট্রার আহসান হাবীবের লোক বলে সূত্র জানায়। এসব চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রার আহসান হাবীব চার থেকে ছয় লাখ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া প্যানেলে রাখা বাকী চারজনকে পর্যায়ক্রমে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেবার চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ। এদিকে, শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) অস্থায়ী ভিত্তিতে আরও ২২ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যা নিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় চলছে।
সূত্র জানায়, রেজিস্ট্রার কয়েকজন এজেন্ট দিয়ে চাকরি প্রার্থীদের সাথে যোগাযোগ করেন। তারাই মূলত চাকরি প্রত্যাশীদের সাথে টাকা লেনদেন করে থাকে। চুক্তি অনুয়ায়ী টাকা দিতে পারলেই চাকুরির নিশ্চয়তা করেন রেজিস্ট্রার। নিয়োগ বাণিজ্য প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার আহসান হাবীব বলেন, অস্থায়ীভাবে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের কারো কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়া হয়নি। একটি মহলের স্বার্থ উদ্ধার না হওয়ার করণে তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। সম্প্রতি চারজনকে নিয়োগ দেওয়া প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার জানান, যে চারজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এরমধ্যে একজন দাতা, একজন চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম হাবীবের ভাইপো। আর একজন যশোর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুর মামাতো ভাই। এখানে কোন টাকা পয়সার লেনদেন হয়নি।

সূত্র জানায়, এসব নিয়োগ বাণিজ্য এককভাবে রেজিস্ট্রার করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হায়াতুজ্জামান মুকুলের সাথে তার বিরোধ বাধে। একারণে জনসংযোগ কর্মকর্তা সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধভাবে অদক্ষ, অযোগ্য লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন। যা সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ করেছে। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হায়াতুজ্জামান মুকুল ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদের নাম ভাঙ্গিয়ে বেশ কয়েকজন কর্মচারি নিয়োগ দেন। আর এ থেকে লাখ লাখ টাকা আয়ও করেন তিনি। তিনি একমাত্র ব্যক্তি মাত্র কয়েক বছর চাকরির করে যশোর শহরের দুই জায়গায় জমি কিনে ৭ তলা ফাউন্ডেশনের আলিশান বাড়ি নির্মাণ করছেন। এছাড়া ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরে জমি কিনেছেন স্ত্রীর নামে। ওই জমির দখল নিতে সদ্য প্রয়াত যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিল্লুর রহমান মিন্টুর সহায়তায় নিয়েছিলেন। হায়াতুজ্জামান মুকুল টাকা নিয়ে চাকরি না দেবার কারণে গত বছর যশোর নিউমার্কেট এলাকায় লোকজন তাকে বেধে মারপিট করে ও তার মোটর সাইকেল আটক করে রাখে। পরবর্তীতে স্টাম্পে সই করে দিয়ে মুক্ত হন তিনি। একই বছর স্টেডিয়াম পাড়ায় তার নির্মাণাধীন বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায় চাকরির প্রত্যাশায় টাকা দেওয়া কয়েকজন চাকরি প্রার্থী। পরবর্তীতে তিনি সেই টাকা কিস্তি করে পরিশোধ করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রলোভন দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে টাকা গ্রহণের অভিযোগও রয়েছে। সকল অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপারে জনসংযোগ কর্মকর্তা হায়াতুজ্জামান মুকুল সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে জানান, আমি নিয়োগ কমিটির কেউ না। নিয়োগ কমিটির সভাপতি ট্রেজার জামাল উদ্দিন আর সদস্য সচিব রেজিস্ট্রার আহসান হাবীব। তারা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এখানে আমার কোন ক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, মানুষ তো কেউ কারো ভালো চায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার প্রতিপক্ষরা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।

তবে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ট্রেজারার জামাল হোসেন জানান, নিয়োগের পুরো ক্ষমতা আমার নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ভাইস চ্যাঞ্জেলর মহোদয়ের। যে চারজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এরমধ্যে একজন জমিদাতা, একজন মুক্তিযোদ্ধা বলে তিনি জানান। বাকি দুইজন সম্পর্কে তিনি কিছু জানাতে পারেনি। তবে ২২ কর্মচারী অস্থায়ী ভিত্তিতে (মাস্টার রোল) নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে এই ২২ কর্মচারী কিভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে পারেননি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top