সকল মেনু

একুশের গ্রন্থমেলা আজ প্রাণের মেলা

ঢাকা, ২১ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) :  সবাই যেন প্রতীক্ষায় ছিলেন—কবে একুশ আসবে, কবে তাঁরা প্রাণের মেলায় মিলিত হতে পারবেন। কারণ একুশ যে বাঙালির নিজের পরিচয়কে আরেকটু শাণিয়ে নেওয়ার দিন, নিজের কাছে ফিরে আসার দিন, শিকড়ে নতুন করে প্রোথিত হওয়ার দিন। এরই স্পন্দন আজ অমর একুশের গ্রন্থমেলায়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস এবং ছুটির দিন হওয়ায় অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আজ শুক্রবার সকাল থেকে মানুষের ঢল নেমেছে। অন্যান্য দিন বেলা তিনটা থেকে বইমেলা শুরু হলেও একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল আটটা থেকেই মেলা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

সকাল ১০টায় বইমেলা প্রাঙ্গণের ভিড় দেখে রবীন্দ্রনাথের কবিতার বাণী মনে পড়ছিল বারবার, ‘তিল ঠাঁই আর নাহি রে…’। তবে মানুষের এ ভিড় কেবল বাংলা একাডেমি চত্বর বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয়, এই মানবস্রোত টিএসসি, দোয়েল চত্বর, শিশু একাডেমি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। সেখান থেকে পান্থজনরা আবার ঘুরে-ফিরে আসছেন মেলায়।

সরকারি ছুটির দিন ও একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আজ মেলার ফটক সকাল আটটায় খুলে দেওয়া হয়। সকাল থেকেই বইপ্রেমীদের ভিড়। শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে অনেকে সোজা চলে আসেন মেলায়। এ সময় কিছু বই বিক্রি হতে দেখা গেলেও উল্লেখ করার মতো বেচাকেনা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রকাশকেরা। শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশের প্রতিনিধি শিশির জানান, অন্যান্য বারের তুলনায় আজ এখনো বিক্রি কম হচ্ছে। তবে ক্রমান্বয়ে মানুষের উপস্থিতি বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আশা করছি বিকেলের দিকে বিক্রি বাড়বে।’

মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীর পোশাক থেকে শুরু করে বই কেনার তালিকা, শরীরে আঁকা আলপনা, মেলা মাঠের সাজসজ্জা—সবখানেই ছিল একুশের ছাপ। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ও তার আগের কয়েক দিন থেকে একুশ ও ভাষা আন্দোলনবিষয়ক বই বেশ বিক্রি হয়েছে বলে জানান প্রকাশকেরা। অনেকে আজ মেলায় আসেন বিভিন্ন বুটিক হাউসের ‘অ আ ক খ’সহ ভাষা আন্দোলনের স্মারক চিহ্ন হিসেবে বর্ণের ছাপ দেওয়া পোশাক পরে। কারও কারও কপালে বাঁধা ছিল দেশের মানচিত্র। নিজের চেহারাটিকে চিত্রপটে রূপান্তরিত করে আঁকিয়ে নিয়েছেন জাতীয় পতাকা আর শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি। আবার কারও টি-শার্টের বুক বরাবর ছিল ভাষাশহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরের প্রতিকৃতি।

সকাল থেকে ভাষাশহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বারবার কানে ভেসে আসছিল ভাষার গান। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি’ কিংবা ‘মোদের গরব মোদের আশা/ আ মরি বাংলা ভাষা’—গানগুলো যেন শাণিত করছিল একুশের চেতনা। উজ্জীবিত হয়ে অনেকে এসব গানের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন।

মেলা প্রাঙ্গণে সপরিবারে এসেছেন কৃষিবিদ নাজিমউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এটা ভাষার মাস ও আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। তার ওপর আজ ছুটির দিন। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে মেলায় এসেছি। বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সন্তানদের পরিচিত করে দিতে তাঁদের মেলায় নিয়ে এসেছি।’

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বাংলা একাডেমি হাতে নিয়েছে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। আজ সকাল সাড়ে সাতটায় আয়োজন করা হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে সভাপতিত্ব করেন কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। নবীন-প্রবীণ সব কবি এক মঞ্চে এসে ভাষা ও একুশকে উপলক্ষ করে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। বিকেলে ‘বাঙালি সংস্কৃতিতে মানবতাবাদ’ শীর্ষক একুশে স্মারক বক্তৃতা দেবেন জাতীয় অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদ। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এর আগে শুক্রবার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। রাত সাড়ে ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অমর একুশে গ্রন্থমেলার সদস্য সচিব শাহিদা খাতুন, একাডেমির উপপরিচালক মুর্শিদ আনোয়ার প্রমুখ।

বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত মেলায় এসেছে এক হাজার ৮৩৬টি নতুন বই। আজ আরও ১০টি নতুন বই এসেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top