সকল মেনু

উপজেলা ভোটে স্বস্তি : আশা জাগছে বিএনপিতে

ঢাকা, ২১ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : প্রথম পর্বের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীদের অভাবনীয় সাফল্যে স্বস্তি-রেখা ফিরে এসেছে দলে। একই সঙ্গে চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মীরা। এই বিজয় নতুন উদ্যমে পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে ভালো করার পাশাপাশি দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মী-সমর্থকরা।

বুধবার যে ৯৭টি উপজেলায় ভোট হয়েছে, তার মধ্যে ৫৬টিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি-জামায়াত নেতারা। আর আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে ৩৩টিতে। অথচ গত নির্বাচনে এই ৯৭টি উপজেলার মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান ছিলেন ৬৬ জন। আর বিএনপির মাত্র ১৪ জন, জামায়াত ৮ এবং বিদ্রোহী প্রার্থীসহ অন্যরা জিতেছিলেন ৯টি উপজেলায়।

বিএনপি সূত্রে বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্যের অন্যতম কারণ হাইকমান্ডের নির্দেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের হস্তক্ষেপে অধিকাংশ উপজেলায় একক প্রার্থী দিতে পারা। তবে কোনো কোনো উপজেলায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ কেউ প্রার্থী হয়ে গেলেও এদের সংখ্যা অবশ্য খুবই কম। আবার নির্বাচনের আগেই তাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার চেষ্টা ওপর থেকে চালানো হয়। বিষয়টি মনিটর করার জন্য বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং জেলা নেতাদের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থীদের কাছে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা পেঁৗছে দেন। এরপরও বিজয়ের ব্যাপারে কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি বিএনপি প্রধান। একপর্যায়ে তিনি নিজেই প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের উৎসাহ জোগান। আর বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বসিয়ে দেয়ার পাশাপাশি জোট সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করেন। এর ফলও এসেছে হাতেনাতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের পর মাঠ পর্যায়ের ১৯ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে দলের সমর্থিত প্রার্থী থাকায় সেই হতাশা কাটতে শুরু করে। আর বড় বিজয় অর্জনে আড়মোড়া ভেঙে দল জেগে উঠতে শুরু করেছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বস্তরের নেতাকর্মী এই বিজয়ে অত্যন্ত খুশি। বিজয়ের ফলে আন্দোলন কর্মসূচিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে আশা করছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, উপজেলা বিজয়ের ফলে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে আরো জোরালো অবস্থান নিতে পারবে বিএনপি।

উল্লসিত বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, একতরফা নির্বাচন করে আবারো ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার যে স্বপ্ন ক্ষমতাসীরা দেখছে, তা বাস্তবায়নে প্রথম হোঁচট খেয়েছে উপজেলা নির্বাচনের ফলে। বাকি নির্বাচনেও ১৯ দলীয় জোটের প্রার্থীরা বিজয়ী হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এরপরই শুরু হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, প্রথম ধাপের মতো আগামী উপজেলা নির্বাচনগুলোতেও একই অবস্থা হবে। বিএনপি যে মানুষের আস্থাভাজন তা এই উপজেলা নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে। পাশাপাশি এও প্রমাণ হয়েছে, বিএনপির তৃণমূল কত শক্তিশালী। শিগগিরই আগামীর আন্দোলন শুরু হবে। সেই আন্দোলনের মাধ্যমে ভোটের অধিকার আদায় করা হবে।
মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানান, ৫ জনুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করায় বিএনপির তৃণমূল ছিল একেবারে হতাশ। এরপর আর আন্দোলনও করতে না পারায় হতাশা আরো বাড়ে। তাদের মনে ধারণা জন্মে ৫ বছরের মধ্যে আর নির্বাচনও হবে না। আর বিএনপি আন্দোলনও করতে পারবে না। কিন্তু এই নির্বাচন তাদের আবারো নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। বেশিরভাগ উপজেলায় বিজয়ী হয়ে মাঠ পুরোপুরি দখলে নিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আন্দোলনও দ্রুত শুরু করতে চান তারা।

জামায়াতও চাঙ্গা
এদিকে যুদ্ধাপরাধী নেতা-নির্ভর জামায়াতও উপজেলা নির্বাচনে সাফল্য পেয়েছে অভাবনীয়। সঙ্গত কারণে এই দলেও বিরাজ করছে চাঙ্গাভাব। যুদ্ধাপরাধের দায়ে নেতাদের ফাঁসির দ-, উচ্চ আদালত কর্তৃক নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা, বিএনপি জোট থেকে ছিটকে পড়ার আলোচনাসহ বিভিন্ন কারণে বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে দলটি। এরই মধ্যে এই নির্বাচনে বিজয় অর্জন ছিল দলটির অস্তিত্ব বাঁচানোর চ্যালেঞ্জের মতো। সেই চ্যালেঞ্জকে সমাল দিতে সক্ষম হয়েছে দলটি। ৯৭টি উপজেলার মধ্যে জামায়াত সমর্থিত ১৩ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, এই বিজয়ে অত্যন্ত খুশি তারা। এই নির্বাচনে ভালো ফল করা সম্ভব না হলে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ত বলেও মনে করেন অনেকে। এখন তারা আবারো ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে বলেও তাদের ধারণা।  (যায়যায়দিন)

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top