সকল মেনু

বিকল্প বাণিজ্য অঞ্চলের খোঁজে বাংলাদেশ

ঢাকা, ১৮ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : অর্থনীতির ওপর থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর নির্ভরতা কমাতে বিকল্প মিত্র ও বাণিজ্যিক অঞ্চল তৈরি করতে চাইছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সর্ববৃহৎ বাণিজ্য জোট সার্ক এবং বিমসটেকের পরেও বাংলাদেশ ত্রিমুখী জোটের দিকে ধাবিত হচ্ছে শুধু অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সুদৃঢ় করতে।

মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ সম্প্রতি একটি অর্থনৈতিক জোট তৈরি করেছে। দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ত্রিমুখী সহযোগিতা অঞ্চল নামে গঠিত হয়েছে এই জোট। এ ছাড়া বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমার নিয়ে তৈরি হয়েছে বাণিজ্য সহযোগিতা অঞ্চল। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে নিয়েও বাংলাদেশের রয়েছে আরেকটি শিল্পবাণিজ্য জোট।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বাইরে কৌশলগত দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই বিনিয়োগ ও বাণিজ্য জোট সম্প্রসারণে সচেষ্ট। ২০০৭ সালে আমেরিকায় আবাসন ব্যবসায় চরম ধস নামার পর সে দেশটিতে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। ওই মন্দা পরে ইউরোপসহ সারা বিশ্বে বৈশ্বিক মন্দায় পরিণত হয়।

পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ না থাকায় বৈশ্বিক মন্দার আঁচ লাগেনি। চোখে পড়ার মতো বাংলাদেশে আমেরিকার একটি বড় কোম্পানি হচ্ছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ। এর সিস্টার কনসার্ন আলিকো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করলেও এ দেশের অর্থ আমেরিকায় পাচার করে না। যে কারণে বৈশ্বিক মন্দার সময় আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশি বিমাকারীরা।

তবে পশ্চিমা দেশগুলোতে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি ও আমদানি বাণিজ্য থাকায় চরম ঝুঁকির মধ্যে ছিল বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে এ রকম অর্থনৈতিক ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে একমুখী বিনিয়োগ বাণিজ্য থেকে সরে গিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে বাংলাদেশ।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ইউরোপ-আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য সম্প্রসারিত করা হবে।  দেশের অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দেশের অর্থনীতির সূচকগুলো ঊর্ধ্বমুখী। এই ধারা বজায় রাখতে হলে বিকল্প অর্থনৈতিক অঞ্চল দরকার হবে বাংলাদেশের। যে কারণে অঞ্চলভিত্তিক বাণিজ্য জোট গঠনে আগ্রহী বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কৌশলগত বাণিজ্যে বাংলাদেশ মেক্সিকো ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে জোট গড়েছে। এই তিনটি দেশ পারস্পারিক ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্প্রসারিত করবে। এ ছাড়া চীন, মিয়ানমার, ভারত এবং বাংলাদেশ গড়তে যাচ্ছে আন্তযোগাযোগ-ব্যবস্থা। আঞ্চলিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুদৃঢ় করতে নেওয়া হচ্ছে এই নয়া উদ্যোগ।  দেশগুলোর মধ্যে সরাসরি দ্বিপক্ষীয় নৌ ও বিমান যোগাযোগ থাকলেও সড়ক যোগাযোগ নেই।  

সেজন্য কলকাতা, ঢাকা, কুমনিং এবং রেঙ্গুন সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে দেশগুলোর মধ্যে দ্রুত বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গেও বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। নতুন নতুন শিল্প-কারখানা তৈরিতে যেসব যন্ত্রপাতি দরকার হয়, বিশেষ করে তৈরি পোশাক ও মাঝারি শিল্পের মেশিনারিজ আসে কোরিয়া অথবা জাপান থেকে। এই দুটি দেশে সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে চীন ও ভারতের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানো হচ্ছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সরকারের প্রধান দুটি লক্ষ্য হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং ২০৪১ সালে দেশকে ধনী রাষ্ট্রে পরিণত করা। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দরকার। যে কারণে বাংলাদেশ পশ্চিমা নীতির পাশাপাশি দক্ষিণ বাণিজ্যের নীতি গ্রহণ করেছে। এজন্য অর্থনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে। একই সঙ্গে নতুন নতুন বাণিজ্যিক অঞ্চল তৈরি করছে বাংলাদেশ।

বিশ্বের অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিটি দেশের সড়ক যোগাযোগ সুদৃঢ় হলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সেই অবস্থা নেই। চরম বৈরী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা আছে। ওই সড়ক যোগাযোগ আফগানিস্তান হয়ে ইরান পর্যন্ত বিস্তৃত। অথচ পূর্বে চীন, ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে এ রকম কোনো যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।

ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশ ভারত ও চীনকে সঙ্গ নিয়ে বাংলাদেশ সেই অসাধ্য সাধন করতে যাচ্ছে। এরই মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কের পাশাপাশি বাংলাদেশ তার অর্থনীতির বুনিয়াদ তৈরি করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top