সকল মেনু

উদ্ধারের পর মৃদুল যা বললেন

চট্টগ্রাম, ১৭ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : ‘ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আমাকে মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়ার পর পরই আমার চোখ বেঁধে ফেলা হয়। মুখসহ পুরো মাথায় মুখোশ পরিয়ে দেয় অপহরণকারীরা। অকথ্য গালিগালাজ করে। কয়েকটি স্থান পরিবর্তন করে অপহরণের দুই দিন পর ১৪ ফেব্রুয়ারি লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায় আমাকে। খাওয়ার জন্য মুখোশ খুলে দিলেও ছয় দিন পুরো সময় আমার হাত ও চোখ বেঁধে মুখোশ পরিয়ে রাখে তারা।’ 

চট্টগ্রামের আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী মৃদুল চৌধুরী অপহৃত হওয়ার ছয় দিন পর মুক্তি পান। মুক্তির পর এভাবেই বর্ণনা করছিলেন তার ওপর নির্যাতনে কথা। 

মৃদুল চৌধুরী বলেন, ‘১১ ফেব্রুয়ারি আমার বাসার কিছু দূর থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে কালো রঙের একটি নোয়াহ্ মাইক্রোবাসে জোর করে আমাকে তুলে নেয় পাঁচ-ছয়জন। এর পরই মাইক্রোটি চলতে শুরু করে। মাইক্রোবাসের ভেতরে থাকা ব্যক্তিরা আমার চোখ বেঁধে মুখোশ পরিয়ে দেয়। এর আধা ঘণ্টা পর অন্য আরেকটি গাড়িতে তোলা হয় আমাকে। কয়েকটি স্থান বদল করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আমাকে চোখ বাঁধা অবস্থায়ই রাখা হয়।’

 কয়েকটি স্থানে মৃদুল চৌধুরীকে রাখা হলেও স্থানগুলোর বর্ণনা দিতে পারেননি তিনি। চোখ বাঁধা থাকার কারণে স্থানগুলো চিহ্নিত করতে পারেননি বলে জানান তিনি। 

অপহৃত হওয়ার ছয় দিন পর মুক্তি পেয়ে সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের কাছে মৃদুল চৌধুরী তার অপহরণ ও মুক্তি বিষয়ে বর্ণনা দেন।  

তিনি বলেন, ‘আজ সোমবার ভোররাত পৌনে চারটার দিকে আমাকে একটি জিপের পেছনের সিটে তোলা হয়। এ সময় দুই পাশে দুজন ছিল। সামনের সিটে ছিল আরো দুজন। কংসনগর বাজারের অদূরে আসার পর আমার পাশে থাকা দুজন পরস্পরকে বলে, সামনে পুলিশের গাড়ি আছে। তাকে নামিয়ে দিই। এ সময়ও আমার মুখে মুখোশ ছিল। হাত ছিল গামছা-বাঁধা। মুখোশ খুলে অপহরণকারীরা আমার মুখে মলম লাগিয়ে দেয়। সেখানেই আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলাম। ওই সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। প্রায় আধ ঘণ্টা পর আমার জ্ঞান ফেরে। ওই সময় স্থানীয় বাজারের একজন নৈশপ্রহরী আমাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসেন। তার মোবাইল ফোন থেকে আমি চট্টগ্রামে আমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে পুলিশ গিয়ে আমাকে বুড়িচং বাজার থেকে উদ্ধার করে।’

উদ্ধারের পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মৃদুল চৌধুরীকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে অপহরণের ঘটনা বর্ণনা করার সময় উপস্থিত ছিলেন কোতোয়ালি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুর রউফ, অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহিউদ্দিন সেলিম, ডিবি পুলিশের টিমসহ মৃদুলের ছোট ভাই শিমুল, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা।

মৃদুল চৌধুরী বলেন ‘আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। কারো সঙ্গে আমার দ্বন্দ্বও নেই। যারা আমাকে তুলে নিয়েছে, নির্যাতন করেছে, তাদের কাছে আমার অপরাধের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। তারাও কিছু বলেনি।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘আমি জীবনে কারো কোনো ক্ষতি করিনি। মনে করেছি, আর বাঁচব না। ভগবান আমাকে বাঁচিয়ে এনেছেন।’

উল্লেখ্য, মৃদুল চৌধুরী অপহৃত হওয়ার পর তার ভাই শিমুল চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছিলেন, ‘গত বছরের ৩ অক্টোবর র‌্যাব-২-এর মেজর রকিবুল আমিন আমার ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানের ৮০ ভরি সোনা কেড়ে নেন। এ ঘটনায় তিনি রকিবুল আমিন, র‌্যাবের সোর্স ফাহাদ চৌধুরী ও গাড়িচালক বাবুল পালের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলা করেন। মামলা করার কারণে র‌্যাব আমার ভাইকে তুলে নিয়ে গেছে বলে ধারণা করছি।’ 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top