সকল মেনু

শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগে কারখানা মালিকদের তলব

ঢাকা, ১৫ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগে ১৯টি পোশাক কারখানার মালিকদের জরুরি তলব করেছে সরকার। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করা এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ী কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া এ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নে মালিকদের আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯টি পোশাক কারখানার বিরুদ্ধে শ্রমিক নির্যাতন ও চাকরিচ্যুতির সুস্পষ্ট অভিযোগ তুলেছে। সম্প্রতি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে পোশাকশিল্প সংক্রান্ত সচিব কমিটির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে শ্রমিক নির্যাতন ও চাকরিচ্যুতির অভিযোগ করা হয়। বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ এ কমিটির আহ্বায়ক। তার সঙ্গে রয়েছেন শ্রম ও পররাষ্ট্র সচিব।

দূতাবাসের ওই চিঠিতে বলা হয়, পোশাক খাতে এখনো শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতি ও হয়রানি করা হচ্ছে।  কোনো কোনো কারখানায় শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন না করার ব্যাপারে মালিকপক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। সংগঠন করার কারণে বাইরের সন্ত্রাসী দিয়ে শ্রমিকদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। যথাসময়ে বেতন-ভাতা ও ওভারটাইম দেয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া কিছু ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্বে রয়েছেন মালিকপক্ষের সুবিধাভোগী শ্রমিক প্রতিনিধি। শ্রমিক নির্যাতন ও চাকরিচ্যুতি হয়েছে এমন ১৯টি কারখানার নামও উল্লেখ  করা হয়েছে চিঠিতে।

জানা গেছে, অভিযোগ  পর্যালোচনা এবং এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক করা হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে শ্রম ও পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট বিএফটিআইয়ের পরিচালক মোস্তফা আবিদ খান, প্রেসিডেন্ট বিজিএমইএ, বিকেএমইএ উপস্থিত থাকবেন। 

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে নোট পাওয়ার কথা জানিয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ জানান, শ্রমিক নির্যাতন ও চাকরিচ্যুতির ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখতে শ্রম মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ’র কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত কারখানাগুলোর মালিকদেরও জবাবদিহির জন্য ডাকা হয়েছে। 

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো এ চিঠিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সরকার। অভিযুক্ত মালিকদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে সরকার।

জানা গেছে, অভিযুক্ত হয়েছেন ১৯টি কারখানার ৯ জন মালিক। 

দূতাবাসের নোটে বেসিক এ্যাপারেলস নামে উত্তরার একটি গার্মেন্টের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করা হয়, ট্রেড ইউনিয়ন করায় সেখানে ৭২ জন শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এছাড়া ইভা গার্মেন্ট লিমিটেড, ডায়মন্ড ফ্যাশন, দি ফ্যাশন আইল্যান্ড, রুমানা ফ্যাশন অ্যান্ড ফ্যাশন ইউনিট, ডরিন ওয়াশিং প্লান্ট, মস্কো ইন্ডাস্ট্রিজ, ঈগল আইস ডিজাইন, সাদিয়া গার্মেন্ট, গ্লোবাল ট্রাউজার্স ম্যানেজমেন্ট, ফ্যাশন গিয়ার্স লিমিটেড, তাংহাই সোয়েটার্স, নরওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, শোয়েব নিট কম্পোজিট রেডিক্যাল ডিজাইন, সামিয়া গার্মেন্ট, ভবস এ্যাপারেলস এবং ভিশন এ্যাপারেলস নামের পোশাক কারখানার বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতি ও শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, পোশাক খাতে শ্রম পরিবেশ উন্নত নয় এমন অভিযোগ তুলে গত বছর ২৭ জুন বাংলাদেশকে  দেয়া জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। কল-কারখানার পরিবেশ উন্নত, পরিদর্শনসহ শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে দুই মাস সময় দেয়া হয়। ডিসেম্বরের মধ্যে কারখানার ভুলত্রুটি ধরিয়ে জিএসপি সুবিধা পুরোপুরি পর্যালোচনা করার কথা জানিয়ে কর্মপরিকল্পনাও দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। বাংলাদেশ এ্যাকশন প্ল্যান নামে ওই পরিকল্পনায় ১৬টি শর্ত দেয়া হয়েছে। শর্তগুলো পূরণে অগ্রগতি দেখাতে পারলে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ওবামা প্রশাসন। এরপরই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া শর্তগুলো বাস্তবায়নে একযোগে কাজ শুরু করে, যার সমন্বয় করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top