সকল মেনু

বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার

ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে মাথাব্যথা শুরু হয়েছে সরকারের। অর্থবছরের সাত মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মাত্র ২৭ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। এই নিয়ে উদ্বিগ্ন অর্থমন্ত্রী। তবে তিনি এখন বাজেট বাস্তবায়নের নানা কৌশল খুঁজছেন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিশাল অঙ্কের এই বাজেটকে তখনই অবাস্তবায়নযোগ্য আখ্যায়িত করেছিলেন অর্থনীতিবিদ ও বাজেট-বিশ্লেষকরা।

তবে এতটা যে খারাপ অবস্থায় পড়তে হবে, তা মোটেও ধারণায় নিতে পারেননি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

গত সেপ্টেম্বরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কয়েকটি রায় চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে মূলত দেশের সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। একটানা হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও, খুনখারাবির মধ্যে পড়ে দেশের অর্থনীতি। স্থবির হয়ে যায় ব্যবসা-বাণিজ্য। হরতাল অবরোধে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের। আমদানি-রপ্তানি নেমে আসে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে। দেশি-বিদেশি সব ধরনের বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। বেড়ে যায় দ্রব্যমূল্য।

অর্থনীতির অধিকাংশ সূচক নিম্নমুখে প্রবাহিত হওয়ায় দেশজ মোট উৎপাদনও (জিডিপি) কমে আসে। যে কারণে ঘাটতি দেখা দেয় রাজস্ব বাজেটে। এই সাত মাসের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা কম হয়েছে রাজস্ব আহরণ।

অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি। অব্যবহৃত রয়েছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। যা চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বাজেট বাস্তবায়নে।

চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার বিশাল বাজেটটি এখন আর বাস্তবায়ন করতে পারছে না সরকার। অর্থবছরের সাত মাসের মাথায় এসে ছেঁটে ফেলা হয়েছে ১১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। এই সংশোধনের কারণে বাজেটের নতুন আকার হচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ২২০ কোটি টাকা। মূল বাজেট থেকে ৬ শতাংশ অর্থ কেটে ফেলা হয়েছে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে ১১ হাজার ৬৩ কোটি টাকা কমিয়ে ধার্য করা হয়েছে ৫৪ হাজার  ৮০৭ কোটি টাকা। মূল বাজেটে এডিপির জন্য ধার্য ছিল ৬৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা।

গত সাত মাসে এডিপির বাস্তবায়ন চরম হতাশাজনক। গত অর্থবছরে যেখানে এডিপি প্রথম সাত মাসে প্রায় ৪২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল, সেখানে চলতি অর্থবছরের এই চিত্র ভাবিয়ে তুলেছে অর্থমন্ত্রীকে। এজন্য এডিপির আকারও তিনি ছোট করে এনেছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ২৭ শতাংশ। যেখানে হওয়ার কথা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রাজস্ব আদায়-পরিস্থিতিও ভালো নয়। ধার্য ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকা থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ফেলা হচ্ছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। কমানো হয়েছে মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপির  প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও। বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এখন তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতিও রাখা হচ্ছে ৭ শতাংশের ঘরে।

গত সপ্তাহে মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময়সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ থাকবে কি না, তা নিয়ে এখনো দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। আরো সভা করে তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  সংশোধিত আকারে বাজেট ছোট করা হয়েছে শুধু বাস্তবায়নের অভাবে।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এজন্য কিছু কৌশল নিচ্ছে সরকার। এডিপির বড় প্রকল্পগুলোর কাজ অতি দ্রুত সম্পন্ন করার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু, মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং গাজীপুর-টাঙ্গাইল চার লেন সড়কসহ আরো বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে অযোগ্য কর্মকর্তাদের দ্রুত প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া বা অনত্র সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার।

রাজস্ব আহরণ বাড়াতে মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোকে আরো সক্রিয় করা হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে নতুন নতুন করদাতার সংখ্যা। এ ছাড়া কর প্রদানে বৃহৎ করদাতা ইউনিটে যে সমস্যাগুলো হচ্ছে তা নমনীয় করে কর গ্রহণের কথা ভাবছে রাজস্ব বোর্ড। আরবিট্রেশন বোর্ডের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে রাজস্বের পরিমাণ বাড়ানোর কথাও ভাবা হচ্ছে এনবিআর থেকে।

সামনের পাঁচ মাসে বাজেট বাস্তবায়নে কঠিন চ্যালেঞ্জই রয়ে যাচ্ছে অর্থমন্ত্রীর জন্য। যদিও অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এই সময়ে বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব। তার পরও গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top