সকল মেনু

ঝুলে আছে কয়লানীতি

ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) :  গত ১০ বছরেরও চূড়ান্ত হয়নি কয়লানীতি। কয়লানীতি প্রণয়নের কাজ ২০০৪ সালে শুরু হলেও নানা অজুহাতে এটি ঝুলিয়ে রেখেছে একটি সুবিধাভোগী মহল। এছাড়া উন্মুক্ত পদ্ধতি, নাকি আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হবে তা নিয়ে বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি।

এ প্রসঙ্গে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ রাইজিংবিডিকে বলেন, সরকারের মধ্যে এশিয়ান এনার্জির যে লবিং রয়েছে তার জন্য কয়লানীতি প্রণয়ন হচ্ছে না। মূলত বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থ রক্ষার জন্যই এটা করছেনা সরকার।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, সঠিক জ্বালানি ও কয়লানীতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রণয়ন করা হবে। আর কয়লানীতি যত দ্রুত প্রণয়ন করা সম্ভব হবে ততই তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। কেননা ২০২১ সালের মধ্যে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়ছে তার অর্ধেকেরও বেশি আসবে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে। তাই দেশ ও জনগণের কথা চিন্তা করে এবং পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই কয়লানীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে।

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. ম তামিম রাইজিংবিডিকে জানান, দেশে কয়লানীতির তেমন একটা প্রয়োজন নেই। প্রচলিত নিয়মেই এটা করা যায়। সে ক্ষেত্রে চুক্তি সংশোধন করা যেতে পারে।

জ্বালানি বিভাগের ঊধ্বর্তন এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাসের উপর নির্ভরতা কমাতে এবং জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য কয়লানীতি জরুরি। এ লক্ষে ২০০৪ সালে কয়লানীতি প্রনয়ণের কাজ শুরু হয়। পরে ২০০৫ সালে খসড়া কয়লানীতি প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় আইআইএফসি নামের দেশীয় একটি  প্রতিষ্ঠানকে। প্রতিষ্ঠানটি খসড়া কয়লানীতি প্রণয়ন করে চার দলীয় জোট সরকারে কাছে জমা দেয়। ওই সময় খসড়া নীতিমালার অনুমোদন না দিয়ে তা রিভিউ করার জন্য বুয়েটের অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ফের নতুন করে খসড়া কয়লানীতি প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। নতুন করে আবারও গঠন করা হয় কমিটি।

কমিটির প্রধান করা হয় বুয়েটের সাবেক ভিসি প্রফেসর আব্দুল মতিন পাটোয়ারীকে। পরবর্তীতে ওই কমিটির তৈরি খসড়া নীতিমালা রিভিউ করার জন্য আন্ত:মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে মহাজোট সরকার। আন্ত:মন্ত্রণালয় কমিটি খসড়া নীতিমালা যাচাই বাছাই করে কিছু সংশোধনী এবং সুপারিশসহ তা ২০১০ সালে জমা দেয়। পরে ২০১১ সালে ফের রিভিউ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। রিভিউ কমিটির সুপারিশসহ রিপোর্টটি ২০১২সালের অক্টোবরে জমা দিলেও এখনও তা ঝুলে আছে।

এদিকে কয়লা উত্তোলন পদ্ধতি নিয়ে সরকারি সংস্থা হাইড্রোকার্বন ইউনিটের গতবছরের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, দেশের যেসব খনিতে উন্মুক্ত ও ভূগর্ভস্থ কয়লা উত্তোলন পদ্ধতির মাধ্যমে কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হবে না সেখানে কোল বেড মিথেন (সিবিএম) ও আন্ডারগ্রাউন্ড কোল গ্যাসিফিকেশন (ইসিজি) পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা যেতে পারে। অখননকৃত খনি থেকে নির্গত মিথেনকে বলা হয় কোল বেড মিথেন। জামালগঞ্জ কয়লাক্ষেত্রটি সিবিএম উত্তোলনের জন্য উপযোগী। আর ইউসিজি হচ্ছে অখননকৃত খনির কয়লা খনির ভেতরেই নিয়ন্ত্রিতভাবে পোড়ানোর মাধ্যমে গ্যাস উৎপন্ন করা। এর মাধ্যমে কয়লা খনি থেকে পরিবেশবান্ধব গ্যাস উৎপাদিত হয়।  এ গ্যাস জ্বালানি হিসেবে অথবা রাসায়নিক শিল্প খাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের ৫টি কয়লাখনির মধ্যে জামালগঞ্জের খনির কয়লা মাটির এত গভীরে যে সেখান থেকে কয়লা এই দুই পদ্ধতির বাইরে উত্তোলন করা সম্ভব নয়। তবে এক্ষেত্রে আর্থিক দিকগুলোও বিবেচনা করতে হবে। কয়লার তুলনায় খরচ বেশি হলে এই পদ্ধতি ব্যবহারের কোনো যুক্তি নেই বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top