সকল মেনু

লোকসানের চাপে বসিয়ে রাখা হচ্ছে ডেমু ট্রেন

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা, ১২ ফেব্রুয়ারি  (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : চীন থেকে কেনা বিলাসবহুল ও নিম্নমানের ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) নিয়ে রেলওয়ের বিপত্তির শেষ নেই। উদ্বোধনের পর থেকেই রেলওয়ের লোকসানের বোঝা বাড়িয়ে চলেছে এ ট্রেন। গত চার মাসে ডেমু ট্রেন পরিচালনায় রেলের লোকসান হয়েছে ৪ কোটি টাকা। এ চাপ সামলাতে প্রায়ই বসিয়ে রাখা হচ্ছে এসব ট্রেন। নিয়মিত চলাচল না করায় ডেমু থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন যাত্রীরাও। এ অবস্থায় কয়েকটি রুটে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে রেলওয়ে।

গত ২৪ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে দুই সেট ডেমু চালু করে রেলওয়ে। চট্টগ্রামের দুই রুটে তিন সেট ডেমু চালু হয় গত মে মাসে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পর্যায়ক্রমে আরো আট রুটে ১১ সেট ডেমু চালানো শুরু হয়। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার অজুহাতে গত বছরের শেষ তিন মাসে কোনো ডেমুই ৩৫ দিনের বেশি চালাতে পারেনি রেলওয়ে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরও গত মাসে বিভিন্ন রুটে ডেমু চলাচল করে সর্বোচ্চ ১২ দিন। আর চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে এ ট্রেন চলেছে তিন-চারদিন।

গত মাসে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ডেমু চলাচল করে মাত্র ১১ দিন। এতে রেলের আয় হয় ১ লাখ ৮১ হাজার ৭১১ টাকা। ডিসেম্বরে এ রুটে ডেমু চলাচল বন্ধ ছিল। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ট্রেনটি চলে ১৯ দিন করে। আর গত বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে এ রুটে ডেমু চলাচল করে ২৪-২৫ দিন করে।

এদিকে ঢাকা-কুমিল্লা রুটে গত অক্টোবরে ডেমু চলাচল করে ২২ দিন। নভেম্বরে এ ট্রেন চলে ১৪ দিন, ডিসেম্বরে ১ দিন ও গত মাসে ১১ দিন। ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে অক্টোবরে ২২ দিন ডেমু চলাচল করলেও গত মাসে তা চলে ১১ দিন। একই অবস্থা ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর, সিলেট-আখাউড়া, চট্টগ্রাম-লাকসামসহ অন্যান্য রুটেও।

রেলওয়ের তথ্যমতে, ডেমুর আপ-ডাউন বাবদ জ্বালানি ও মেকানিক্যাল খরচ গড়ে ৭০ হাজার টাকা। ১৬ সেট ডেমুর জন্য এ বাবদ ব্যয় হয় ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর বাইরে লোকোমাস্টারসহ অন্যান্য লোকবলের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ রয়েছে মাসে ৭ লাখ টাকা। অথচ ডেমু থেকে রেলের আয় হয় দৈনিক সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা। এতে ১৬ সেট ডেমু থেকে মোট আয় হয় সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা। অর্থাত্ প্রতিদিন ১৬ সেট ডেমু থেকে রেলের লোকসান হয় প্রায় ৮ লাখ টাকা। গত চার মাসে প্রতিটি ডেমু চলাচল করেছে গড়ে ৫০ দিন। ফলে এ সময়ে ডেমু থেকে রেলের লোকসান দাঁড়ায় ৪ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. তাফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘ডেমু ট্রেনের লোকসানের বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য আমার জানা নেই। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ না করে এ সম্পর্কে মন্তব্য করা উচিত হবে না।’

ডেমুর লোকসানের বিষয়টি গত অক্টোবরে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে জানানো হয়। চট্টগ্রামের চার রুটে চার মাসে (মে-সেপ্টেম্বর) ডেমু ট্রেন পরিচালনায় লোকসান হয় ২ কোটি ২২ লাখ টাকা। সে সময় বলা হয়, যাত্রী কমে যাওয়ায় প্রতিদিনই কমছে ডেমুর আয়ের পরিমাণ। ফলে চট্টগ্রামে ট্রেন সার্ভিসটি নিয়ে বিপাকে রয়েছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে।

পূর্বাঞ্চলের চার রুটে ডেমু নিয়ে জটিলতা এখনো কাটেনি। বর্তমানে চট্টগ্রামের সার্কুলার রুটে ডেমু ট্রেনে যাত্রী নেই বললেই চলে। সম্প্রতি কয়েক দফা সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যাত্রী আকর্ষণের চেষ্টাও করে রেলওয়ে। তাতেও কাজ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম কমিউটার (সার্কুলার রুটে) বন্ধ করে নাজিরহাট ও হাটহাজারী রুটকে সংযুক্ত করতে চাইছে রেলওয়ে। রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালিত অন্য তিন রুটও ছোট করে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। শিগগিরই এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব রেল ভবনে পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মকবুল আহাম্মদ বলেন, কয়েক মাস ধরে নিরাপত্তার কারণে সারা দেশে ডেমু ট্রেন চালানো যায়নি। ফলে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা ডেমু ট্রেনে ভ্রমণ করতে আগ্রহী হচ্ছে না। ট্রেনগুলোকে কীভাবে জনপ্রিয় করা যায়, সে ব্যাপারে রেলওয়ের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। প্রয়োজনে চট্টগ্রাম কমিউটারের সার্কুলার ট্রেনটি নাজিরহাট ও দোহাজারী পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে।

এদিকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কেনার কয়েক মাসের মধ্যেই বিকল হয়ে পড়ে অর্ধেক অর্থাত্ ১০ সেট ডেমু। এগুলো মেরামত করে চালু করা হয়েছে। অথচ আধুনিক ও টেকসই— এমন যুক্তিতে ৬৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চীন থেকে এগুলো কেনা হয়েছে। এ দামে ১০টি ইঞ্জিন ও ১০০ বগি কেনা যায়, যা দিয়ে ২০ সেট ডেমুর দ্বিগুণ যাত্রী পরিবহন সম্ভব বলে কেনার আগেই আপত্তি জানিয়েছিল রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগ। তা আমলে না নিয়েই নিম্নমানের এসব ট্রেন কেনা হয়।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ১১ রুটে মোট ১৬ সেট ডেমু চালু করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম-লাকসাম, ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর, আখাউড়া-কুমিল্লা রুটে দুই সেট করে আর চট্টগ্রাম সার্কুলার রুট, পার্বতীপুর-ঠাকুরগাঁও-সৈয়দপুর, পার্বতীপুর-রংপুর-লালমনিরহাট, লাকসাম-কুমিল্লা, লাকসাম-নোয়াখালী-কুমিল্লা ও আখাউড়া-সিলেট রুটে এক সেট করে ডেমু ট্রেন চলাচল করছে। বাকি চার সেট ট্রেন অতিরিক্ত মজুদ (স্ট্যান্ডবাই) রাখা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top