সকল মেনু

ঢালিউডে টালিউডি আগ্রাসন, বাকের ভাই নিশ্চুপ

বিনোদন ডেস্ক, ১১ ফেব্রুয়ারি  (হটনিউজ২৪বিডি.কম) :  চলচ্চিত্র দেশ কাল পাত্র ভেদে সবার। কিন্তু সেই চলচিত্র যখন মার্কেট আর মিডিয়ার প্রশ্নে সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসী রূপ ধারণ করে তখন সেটা নিয়ে ভিন্ন আলোচনা হতেই পারে। গত কিছুদিন ধরেই ভারত ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে সেই পুরনো টানাপোড়েন আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তবে এবারের টানাপোড়েন আগের চেয়ে একটু ব্যতিক্রম। এর আগে হঠাৎ করেই ভারতীয় হিন্দি ছবি অর্থাৎ বলিউডের চলচ্চিত্র বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভিত্তিতে মুক্তি দেয়ার তোড়জোর শুরু হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন এদেশের একশ্রেণীর চলচ্চিত্র প্রদর্শক।

এক পর্যায়ে গত বছর কয়েকটি ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্র আমদানিও করা হয়। কিন্তু দেশি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের আন্দোলনের মুখে সে যাত্রায় সরকার পিছু হটলেও, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে আবারো ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির গোপন মিশনে নেমেছে সরকার। তবে এবার ভিন্ন পথে, ভিন্ন নামে কাজ শুরু করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কলকাতা সফরে গিয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর টালিগঞ্জের ছবি বাংলাদেশে আমদানির ঘোষণা দিয়ে আসেন। বিনিময়ে টালিগঞ্জবাসী তাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন। এখন এই ফুলের শুভেচ্ছা কতটুকু বাংলাদেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের সিক্ত করবে তাই ভাবার বিষয়।

তবে রহস্যজনক কারণে এই সংবাদটি অধিকাংশ বাংলাদেশি গণমাধ্যম চেপে গেলেও বাংলামেইলসহ কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যম বেশ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করে। ফলে আবারো চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বিরোধী অবস্থান নেন। যা ইতোমধ্যেই চলচ্চিত্র বাঁচাও আন্দোলনের রূপ নিয়েছে।

অন্যদিকে ভাষা, সংস্কৃতি, ভূরাজনীতি কিংবা আর্থসামাজিক অবস্থার বৈসাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে চলচ্চিত্র আমদানির জন্য কিছু চলচ্চিত্র প্রদর্শক মুখিয়ে আছে। যেখানে ভারতের অভ্যন্তরের চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বলিউড থেকে সমগ্র ভারত হিন্দি চলচ্চিত্র মুক্তি দেয়া হলেও, তা কখনও আঞ্চলিক কোনো ভাষায় ডাবিং করে মুক্তি দেয়ার রেওয়াজ নেই। কারণ এভাবে বিশাল চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি বলিউডের কোনো ছবি যদি আঞ্চলিক ভাষায় ডাবিং করে মুক্তি দেয়া হয় তবে আঞ্চলিক ইন্ডাস্ট্রিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যা প্রকারান্তে আত্মহত্যার শামিল।

সম্প্রতি এ ধরনের একটি ঘটনা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে টালিগঞ্জপাড়া। কারণ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি হিন্দির পাশাপাশি বাংলায় ডাবিং করে পশ্চিমবঙ্গেও মুক্তি দেয়া হবে যশ রাজ ফিল্মসের ‘গুণ্ডে’ ছবিটি। তাই বলা যায় শেষ পর্যন্ত লড়াইটা বেঁধেই গেলো, ঠেকানো আর গেল না। বলিউড বনাম টালিউড। টালিউডের বাঙালি বাবুরা কিন্তু বাংলায় ‘গুণ্ডে’র গুণ্ডামি কিছুতেই মেনে নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। ফলাফল নির্ধারণের জন্য কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত দৌড়াতে শুরু করেছেন তারা। উদ্দেশ্য একটাই, গুণ্ডেদের বাংলায় ঘেঁষতে না দেয়া। এরপর গুণ্ডের দেখাদেখি সব হিন্দি ছবিই যদি বাংলায় ডাবিং করা হতে থাকে? তাহলে কি আর বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ বলে কিছু থাকবে? এই ভয়ের জায়গা থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একটা আবেদনপত্রও পাঠাচ্ছে টালিগঞ্জপাড়া।

ভারতের মতো বিশাল একটি দেশে এক অঞ্চলের ছবি অন্য অঞ্চলে মুক্তি দিতে গেলে বিধি নিষেধের ঘেরাটোপে পড়তে হয়। কারণ তারা তাদের প্রত্যেকটি অঞ্চলের ছবিকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়। অথচ কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে ভারত থেকে আমাদের দেশে বাংলা ছবি আনার ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের মতামত নেয়ারও প্রয়োজন বোধ করলেন না খোদ সংস্কৃতিমন্ত্রী আমাদের বাকের ভাই।

এখন একটু বাংলাদেশের এক নাটকের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা যাক। নাটকটির নাম ‘কোথাও কেউ নেই’। সেই নাটকের মূল চরিত্র বাকের ভাই (বর্তমান সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর)। নাটকের ঘটনাচক্রে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হয়। ফাঁসির কারণ ছিল, মহল্লার এক বাড়িতে অবৈধ কর্মকাণ্ড রুখতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছিলেন বাকের ভাই। তাই সমাজের প্রভাবশালী এক মানুষ তাকে ফাঁসিয়ে দেন। বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হয়ে যাওয়ার পর নাটকটি আর গড়ায়নি। ঠিক বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের অবস্থাও একই রকম। ধেয়ে আসা বলিউড-টালিউডের চলচ্চিত্রে সয়লাভ হয়ে যাবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গন, যদি না একে রুখে দেয়া যায়। আর রুখতে না পারলে হয়তো বাকের ভাইয়ের নাটকের মতো আমাদের চলচ্চিত্র জগতও একদিন শেষ হয়ে যাবে। আর এক্ষেত্রে বাকের ভাইয়ের অবস্থান কী হবে তার একটা সোজাসাপটা জবাব পাওয়া দরকার।

পরিশেষে শুধু ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি বন্ধ করলেই যেমন আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নতি ঘটবে না, ঠিক তেমনি ভারতীয় চলচ্চিত্র বাণিজ্যিকভিত্তিতে আমাদের দেশে প্রদর্শন করলেই ভারতীয় চলচ্চিত্রের সঙ্গে আমাদের চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় নামতে পারবে না।

চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মতে, আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সময় উপযোগী উদ্যোগ, আর্থিক প্রণোদনা, শিল্প সুবিধার বাস্তবায়ন, চলচ্চিত্র শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাসহ প্রেক্ষাগৃহগুলোর যথাযথ উন্নয়ন ও নিরাপত্তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top