সকল মেনু

সাড়ে ৩ বছরের শিশুকে কুপিয়ে হত্যা: পিতা-মাতা আটক

 এম শাহজাহান আহমদ, মৌলভীবাজার (হটনিউজ২৪বিডি.কম): মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভানুবিল গ্রামে রুনা বেগম
নামে সাড়ে ৩ বছরের এক শিশুকে সোমবার ভোর রাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুটির পিতা সামান্য আহত হয়ে পুলিশী প্রহরায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রাথমিক তদন্তে এ হত্যাকান্ডের সাথে পিতা শরীফ আলী জড়িত রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ শিশুটির পাষম্ড- পিতা শরীফ আলী ও মাতা নেকজান বিবি-কে আটক দেখিয়েছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজনের উপর দায়ী করতে পাষন্ড পিতা নিজ হাতে শিশু কন্যাকে হত্যা করেছে বলে পুলিশ মনে করছে। স্থানীয় ও আহত শরীফ আলী জানান, কাঁচা বসত ঘরের বেড়া ও দরজা ভেঙ্গে প্রতিপক্ষ ইউপি সদস্য আসিক মিয়ার পুত্র ছালিক মিয়া গভীর রাত আড়াইটায় হামলা চালায়। এ সময় তার পাশে ঘুমিয়ে থাকা সাড়ে ৩ বছরের শিশু কন্যা রুনাকে ডেগার দিয়ে গলায় আঘাত করে। মেয়ের চিৎকারে তিনি জেগে উঠলে তাকেও তার মাথার পিছনে দুটি আঘাত করেছে। এতে ঘটনাস্থলেই শিশু কন্যা মারা যায়। আহত শিশুর পিতা শরীফ আলীকে পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। বর্তমানে আহত শরীফ আলী পুলিশ পাহারায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদ ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাটি পরিকল্পিত ও রহস্যজনক। সোমবার সকাল পৌনে ১০টায় কমলগঞ্জ থানার এসআই আনজির হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ শিশুটির লাশ ও রক্তমাখা ধারালো দা, কলস ও কাপড়চোপড় উদ্ধার করে। পরে নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। নিহত শিশুর মা নেকজান বিবিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। সোমবার দুপুরে কমলগঞ্জ থানায় অবস্থানরত মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এ মাসুদ বলেন, ঘটনার ক্লু পাওয়া গেছে। কারা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে প্রাথমিকভাবে সে ব্যাপারে নিশ্চত হওয়া গেছে। তদন্তের সার্থে আপাতত এর বেশি তথ্য দেওয়া যাবেনা। প্রতিবেশি মাধবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আব্দুস সোবহান সহ স্থানীয় লোকজন এ প্রতিনিধিকে জানান, ঘটনার দিন রাতে শিশু কন্যা রুনা পিতার সাথে একই বিছানায় ঘুমাতে রাজি হয়নি। পরে মায়ের অনুরোধে সে পিতার সাথে ঘুমাতে যায়।
নিহত শিশু কন্যার মা নেকজান বিবি প্রথমে পুলশকে বলেছেন সাবেক ইউপি সদস্য আশিক মিয়া সাথে তাদের দীর্ঘদিন ধরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছে। এরই জের ধরে আশিক মিয়ার ছেলে ছালিক মিয়া রোববার দিবাগত রাত ৩টায় দিকে ঘরে ঢুকে তাঁর শিশু কন্যাকে গলায় ছুরি দিয়ে কেটে হত্যা করে এবং স্বামী শরীফ আলীকে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়। পরে থানায় এসে আবার বলে আমি আসামীকে রাতে আধারে চিনতে পারিনী। এক পর্যায়ে স্বীকার করেন এই লোহমর্ষক ঘটনাটি তার স্বামী শরীফ আলী ঘটিয়েছে। নিহত শিশুর মা নেকজান বিবি পুলিশকে জানায়, ঠান্ডা মাথায় স্বামী শরীফ আলী প্রথমে দা দিয়ে কুপিয়ে সাড়ে ৩ বছরের শিশুকন্যা রুনাকে হত্যা করে। পরে দা দিয়ে নিজের মাথায় আঘাত করে চিৎকার শুরু করে। কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ নীহার রঞ্জন নাথ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। সোমবার বিকেল ৪টায় কমলগঞ্জ থানার এসআই আনজির হোসেন জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ ঘটনার ক্লু উদ্ধারে সমর্থ হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই সবকিছু বলা যাবে না। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। শিশুটির পিতা-মাতাকে এ ঘটনায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মৌলভীবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো: আশরাফুল আলম জানান, নিহত শিশুর মা নেকজান বিবি কমলগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে জানিয়েছে এ ঘটনাটি শিশুর পিতা শরীফ আলী সংঘটিত করেছে। এ জন্য শিশুটির পিতা-মাতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top