সকল মেনু

সদ্য প্রয়াত কবি ফজল শাহাবুদ্দীনের কয়েকটি কবিতা

image_76758_0

ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ24বিডি) : ফাল্গুন যখন আসি আসি করছে ঠিক তেমন সময়েই কবির জন্ম হয়েছিল। আবার ঠিক সেই ফাল্গুনই যখন আমাদের দুয়ারের কাছে, আমাদের ভোরবেলার জানালার কাছে, রোদের মধ্যে আগুনের মত ক্রমশ ডালপালা বিস্তার করে আমাদের বাড়ির ছাদে খেলা করছে, কোন এক গ্রামের উঠানে আমের মুকুলে রোদ ফেলে যাচ্ছে, আবহাওয়া পরিবর্তন সূচক প্রকৃতির রূপ স্পষ্ট ধরা দিচ্ছে ঠিক সেই সময়েই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন বিংশ শতকের ষাট দশকের কবি ফজল শাহাবুদ্দীন।

নিমগ্ন এই কবি লিখে গেছেন নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য নিজের মনের খোরাক মেটানোর তাড়নায়। তার কবি প্রতিভার জন্যেই বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে এশীয় কবিতা উৎসব আয়োজনে ছিলেন নেতৃস্থানীয় ভূমিকায়। তিনি বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৩ সালে পেয়েছিলেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৮৮ সালে পান একুশে পদক। ব্যক্তিস্বত্বার হয়ত মৃত্যু হয় কিন্তু একজন কবির কখনো মরণ হয় না। কবি বেঁচে থাকেন তার কবিতায়, তার ভাষায়, তার অক্ষরে। একই ভাবে কবি ফজল শাহাবুদ্দীনও বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে তার রচিত—তৃষ্ণার অগ্নিতে একা, অকাঙ্ক্ষিত অসুন্দর, আততায়ী সূর্যাস্ত, অন্তরীক্ষে অরণ্য, সান্নিধ্যের আর্তনাদ, আলোহীন অন্ধকারহীন সনেটগুচ্ছ, অবনিশ্বর দরোজায়, আমার নির্বাচিত কবিতা, হেনীল সমুদ্র হে বৃক্ষ সবুজ, লংফেলোর নির্বাচিত কবিতা, দিকচিহ্নহীন, ছিন্নভিন্ন কয়েকজন, জখন জখম নাগমা, বাতাসের কাছে, ছায়া ক্রমাগত, নিসর্গের সংলাপ, পৃথিবী আমার পৃথিবী, ক্রন্দনধ্বনি, ক্রমাগত হাহাকার এসব সৃষ্টির মধ্যদিয়ে।

কবিকে স্মরণ করে, আজ এই ফজল বিহীন দিনে তার কয়েকটি কবিতা যদি আবৃতি করা যেত…

বিধাতার দিকে

শাদা কালো কতো মেঘ উড়িতেছে রাত্রির আকাশে
দেখিলাম অনন্তের প্রান্তঘেঁষে ছায়াচ্ছন্ন
বাতাসে বাতাসে
উড়িতেছে পাখিরাও
কতো পাখি জানা ও অজানা কালো চোখ একাকি উধাও
মেলিয়া দিয়াছে ডানা
যেন ক্রমাগত উড়িতে উড়িতে পার হয়ে যাবে
প্রকৃতির সকল সীমানা
যেন রক্তাপ্লুত একটানা উড়িতে থাকিবে চিরকাল
জীবনে মরণের যত সন্ধ্যা ও সকাল
অতিক্রম ক’রে যাবে ছিন্নভিন্ন উড়িয়া উড়িয়া
দুঃখ ও আনন্দ যত বিধাতার দিকে সব
একা একা দিবে সে ছুড়িয়া
দেখিলাম সবকিছু উড়িতেছে অন্ধকার
বিধাতার দিকে। তুমি আমি
পাখিরা মেঘেরা,আমাদের রক্তে আছে
সর্বগ্রাসী সেই অন্তর্যামী।

ঘনিষ্ঠ উচ্চারণ

মধ্যাহ্নের কাছে সায়াহ্নের কাছে রাত্রির শরীরে
বৃক্ষের সবুজে পক্ষীর উড়ালে জলে নদীতীরে
আলোতে আঁধারে
আদি থেকে অন্তে বারে বারে
একটি ঘনিষ্ঠ উচ্চারণ
যেনো কোনো বিষণ্ন নির্জন
একা একা বাঁশি
রক্ত জুড়ে মাংস জুড়ে অস্থি জুড়ে বাজে
বলে ভালোবাসি
বলে ভালোবাসা আছে তাই বেঁচে আছি
আছে কাছাকাছি
অন্তর্গত সব হাহাকার
আছে জীবনে ধ্বনি প্রতিধ্বনি এবং সংহার।

একাকি কান্নার মতো

পৃথিবীর সব দুঃখ মিশে আছে মেঘনার কালো জলে
সেদিন গেলাম মেঘনার কাছাকাছি। দেখলাম দলে দলে
উড়ে যাচ্ছে সব কালো পাখি।
যেন এক ঝাঁক দুঃখেরা একাকি
চ’লে যাচ্ছে নদীর ওপাড়ে
দূরে পর্বতের কাছে সরোবরে।
চরের সবুজ ঘাসে দেখলাম কারা যেন অগোচরে
ফেলে গেছে শাদা শাদা ফুল।
শাদা কাফনের রঙ মেখে যেন সব দুঃখেরা আকুল।
শাদা ফুলে কালো জলে
দুঃখেরা নিবিড় হয়ে থাকে।
পানিতে পানিতে একা একা কথা বলে।
সেই খানে দেখলাম সেইদিন তোমার চোখের কাছে
মতো কতো কালো পাখি শাদা শাদা কতো ফুল
একাকি কান্নার মতো মিশে আছে।

কোনো কোনোদিন রাতে

কোনো কোনোদিন রাতে বাতাসেরা
স্তব্ধ হয়ে যায়। আকাশে আকাশে নক্ষত্রেরা
নিশ্চল ছবির মতো বেঁচে থাকে।
মনে হয় সবকিছু ম’রে গেছে। কে যেন আমাকে
ভাসায় ডোবায় দূরে টেনে নিয়ে যায়।
হাওয়ায় হাওয়ায়
কী এক সঙ্গীত শুধু বেজে ওঠে প্রহরে প্রহরে
আত্মার ভেতরে।
ইচ্ছে হয় মরে যাই মিশে যাই স্তব্ধ বাতাসের সঙ্গে।
স্তব্ধতা আসুক নেমে রক্তমাংসে অঙ্গে অঙ্গে।
কোনো কোনোদিন রাতে বাতাসেরা স্তব্ধ হয়।
আমি ম’রে যেতে চাই।
পৃথিবীর অন্ধকারে ছিন্নভিন্ন প্রবল বিস্ময়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top