সকল মেনু

সোমবার মঞ্জুর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা অনিশ্চিত

ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি : মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ আজ সোমবার। তবে রায় ঘোষণার সম্ভাবনা নেই। কারণ শেষ মুহূর্তে বিচারক পরিবর্তন হওয়ায় আবারও তারিখ বদলাতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মনে করছে।

১৯ বছর ধরে চলমান এ মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ১৯৮১ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদের নির্দেশে মেজর জেনারেল এম এ মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়।

এ মামলায় বিমানবাহিনীর তৎকালীন প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল সদরউদ্দিন এ মামলায় দেওয়া এক জবানবন্দিতে বলেছেন, এরশাদের নির্দেশে মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়। তিনিসহ এ মামলায় পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন দায়িত্বশীল ও সংশ্লিষ্ট ২৮ জন কর্মকর্তা ও সদস্যকে এ মামলার সাক্ষী করা হয়েছে।

মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, এরশাদের নির্দেশেই মঞ্জুরকে হাটহাজারী থানার পুলিশ হেফাজত থেকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। তাকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে ১৯৮১ সালের ১ জুন মধ্যরাতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করা হয়।

মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, মঞ্জুর হত্যার দুই দিন আগে, ৩০ মে (১৯৮১) ভোররাতে চট্টগ্রামে এক সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। তখন চট্টগ্রামে অবস্থিত সেনাবাহিনীর ২৪তম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি (জেনারেল অফিসার কমান্ডিং) ছিলেন এম এ মঞ্জুর।

বিমানবাহিনীর তৎকালীন প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল সদরউদ্দিন পরবর্তী সময়ে এ মামলায় সাক্ষী হিসেবে দেওয়া জবানবন্দিতে মঞ্জুরকে হত্যার জন্য সরাসরি এরশাদকে দায়ী করেছেন।

তিনি বলেন, ১ জুন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি বঙ্গভবনে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের অফিসে ছিলেন। তখন সেখানে জেনারেল এরশাদও ছিলেন। এ সময় টেলিফোন আসে। রাষ্ট্রপতি টেলিফোন রেখে জানান যে মেজর জেনারেল মঞ্জুর পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। এ খবর শুনে জেনারেল এরশাদ চেয়ার থেকে উঠে রাষ্ট্রপতির লাল টেলিফোন দিয়ে কাউকে ফোন করে বলেন, ‘মঞ্জুরকে পুলিশ আটক করেছে। তাকে শিগগির নিয়ে আসো এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করো।’ তখন সদরউদ্দিন পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে এরশাদ বেশ উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘এয়ার চিফ, আপনি কিছুই বোঝেন না।’

সদরউদ্দিন বলেন, তিনি ও তৎকালীন আইজিপি এ বি এম জি কিবরিয়া অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে বলেন, যেন মঞ্জুরকে বেসামরিক হেফাজতে রাখা হয় এবং বিচারের মুখোমুখি করা হয়। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে এরশাদের দীর্ঘ বাদানুবাদ হয়। পরে এরশাদের পরামর্শে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার জেনারেল মঞ্জুরকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত দেন।

সদরউদ্দিন আরও বলেন, ২ জুন রাত দেড়টা থেকে দুইটায় তিনি মঞ্জুরকে হত্যার খবর পান। পরদিন সকালে তিনি এরশাদকে টেলিফোন করে বলেন, ‘এরশাদ সাহেব, আপনারা জেনারেল মঞ্জুরকে মেরে ফেললেন? এইটা কিন্তু ভালো করলেন না।’ জবাবে এরশাদ বলেছেন, ‘বিক্ষুব্ধ সৈনিকেরা তাকে হত্যা করেছে।’

এ ঘটনার ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মঞ্জুরের ভাই আইনজীবী আবুল মনসুর আহমেদ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। ওই বছরের ২৭ জুন এরশাদসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি।

অভিযোগপত্রভুক্ত বাকি আসামিরা হলেন, মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফ, মেজর কাজী এমদাদুল হক, লে. কর্নেল শামসুর রহমান শামস ও লে. কর্নেল মোস্তফা কামাল উদ্দিন। ব্রিগেডিয়ার আজিজ ও নায়েক সুবেদার আবদুল মালেক মারা যাওয়ায় অভিযোগপত্রে তাঁদের আসামি করা হয়নি।

ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। আদালতের সর্বশেষ আদেশ অনুযায়ী, আজ ১০ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায় ঘোষণার কথা। কিন্তু এরই মধ্যে গত ২৯ জানুয়ারি বিচারক পদে রদবদল করা হয়। ফলে আজ রায় ঘোষণা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top