সকল মেনু

কঠোর হচ্ছে অনলাইন ব্যাংকিং নীতিমালা

মোবাইল ব্যাংকিং দ্রুত প্রসারের সঙ্গে-সঙ্গে এর ঝুঁকিও বাড়ছে। ইতোমধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের অনলাইন অ্যাকাউন্ট থেকে বড় অঙ্কের অর্থ চুরির ঘটনা ঘটে। এর পরই নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশেষ করে মোবাইলের সিম রিপ্লেসমেন্ট ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও কঠিন করার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, অনলাইন কার্যক্রমের নিরাপত্তা দুর্বলতার সুযোগে ব্র্যাক ব্যাংকের বেশ কয়েক গ্রাহকের হিসাব ‘হ্যাক’ করে অর্থ স্থানান্তরের প্রমাণ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ট্রিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট জানায়, গত অক্টোবর ও নভেম্বরে ব্র্যাক ব্যাংকের অন্তত ৩০টি হিসাব থেকে একই ব্যাংকের অন্য হিসাবে অনলাইনে ২০ লাখ টাকার মতো সরিয়ে নেওয়া হয়। খতিয়ে দেখা যায়, ৩০ থেকে ৩৫টি অ্যাকাউন্ট থেকে একইভাবে টাকা সরানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা পড়া অভিযোগে এ পর্যন্ত আমানতকারীদের ১৮ লাখ ৭৩ হাজার ৮৭১ টাকা খোয়া যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেয়নি ব্র্যাক ব্যাংক। এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ঘটনাটির জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এদিকে রেজিস্ট্রেশন না থাকা, ভুয়া রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি কারণে প্রতারকচক্র সহজেই রিপ্লেসমেন্টের মাধ্যমে মোবাইল অ্যাকাউন্ট পরিচালনাকরী নম্বর খুব সহজেই নিজের করে নিচ্ছেন। এতে নিজের নামে সঠিকভাবে রেজিস্ট্রেশন না থাকায় গ্রাহকরা অভিযোগ করেও কোনও কূলকিনারা পাচ্ছেন না। তাই সিম রিপ্লেসমেন্ট ও নতুন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় আরও কঠিন ও কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গ্রাহকের অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রথম দফা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিটিআরসির সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর কিছুদিন পর ১৬ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিটিআরসির প্রতিনিধিদল এবং মোবাইল অপারেটরগুলোর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস-সংক্রান্ত কার্যক্রমের ওপর আরোপিত চার্জ হ্রাস, সার্ভিস প্রদানের ক্ষেত্রে গ্রাহকের সিম রেজিস্ট্রেশন ও গ্রাহক সম্পর্কে পূর্ণ তথ্য জানা (কেওয়াইসি) নিশ্চিত, মোবাইল অপারেটর কর্তৃক আনস্ট্রাকচার সাপ্লিমেন্টারি সার্ভিস ডাটা (ইউএসএসডি) চ্যানেল প্রদান, সিম রিপ্লেসমেন্ট এবং মাস্কিং-সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট সূত্র জানায়, যেহেতু অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে মোবাইল নম্বর সরাসরি জড়িত সেহেতু মোবাইল নম্বর সহজে পরিবর্তন হওয়াকে দায়ী করা হয়। তাই বিটিআরসিকে সিম রিপ্লেসমেন্ট ও নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নিয়ম আরও কঠোর করার সুপারিশ করা হয়। তাছাড়া রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোনও নম্বরকে ব্যাংকিং সুবিধায় না আনতে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে বিটিআরসির ওপর। এ বিষয়ে বিটিআরসির সঙ্গে আবার বৈঠক করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিটিআরসি এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে দুটি কমিটি গঠন করেছে বলে পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সাল শেষে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজারে। আর ডিসেম্বর শেষে ৬ হাজার ৬৪২ কোটি ৬১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৯৫টি লেনদেনের মাধ্যমে। এক বছরের ব্যবধানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে ২৬২ শতাংশ এবং এজেন্ট সংখ্যা বেড়েছে ২১৭ শতাংশ।
দৈনিক আমাদের সময়ের সৌজন্যে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top