সকল মেনু

অনিশ্চিত গন্তব্যে বিএনপি

ঢাকা, ৯ ফেব্রুয়ারি : দ্রুত নির্বাচনের দাবিসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনের লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে এলোমেলো বিএনপি এখন অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে। সাংগঠনিক দুর্বলতার সঙ্গে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব, ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অভিমান এবং চাটুকারদের সামলাতে গিয়েই দলটির এখন ত্রাহি অবস্থা। 

এসব সমস্যা কাটিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করে ‘কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন’-এ বাধ্য করতে সময় লাগবে বলে প্রকারান্তরে স্বীকারও করছেন দলের হাইকমান্ড। একই সঙ্গে সংকট কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না বলে ধারণা তাদের। তবে এসব কিছু অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত নতুন এক বিএনপিকে সামনে আনতে তৎপরতা চলছে বলে দাবি করেছে দলের একাধিক সূত্র।

তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের সর্বাত্মক হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগসহ মহাজোট। এর পরই মূলত নিজেদের ‘পরিকল্পনাহীন চেহারা’ দেখছে বিএনপি। সেই সঙ্গে অতিমাত্রায় কূটনীতিক-নির্ভরতার খেসারত আর সাংগঠনিক ব্যর্থতার বিষয়টিও হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছে দলটি। এজন্য অনিশ্চিত গন্তব্যের পথ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলন জোট কি লাগাতারভাবে চালিয়ে যাবে, নাকি বিরতি টানবে- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বেশ বেগ পেতে হয় বিএনপিকে। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়াম্যান তারেক রহমান লাগাতার কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে সুযোগ না দেওয়ার পক্ষে মত দিলেও শেষ পর্যন্ত আন্দোলনে বিরতি টানেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। 

সেই সঙ্গে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনে থাকার সিদ্ধান্ত নেন দলীয় প্রধান। তবে তার এ সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে করেননি দলের তৃণমূল নেতারা। তারা মনে করছেন, এতে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়বে। বিএনপি চেয়ারপারসন গত এক মাসে হত্যা-গুম-নির্যাতনের যে চিত্র তুলে ধরেছেন, তাতে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের ধারণার পক্ষে যুক্তিও খুঁজে পাচ্ছেন তারা। তা ছাড়া আন্দোলন শিথিল করায় সরকারের স্থায়িত্ব বাড়তে পারে বলে মনে করেন তারা।

দেশের একাধিক সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতা থেকে মধ্যম সারির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এমন ধারণার কথা জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেছেন, বিএনপি এখন কোন পথে যাচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে না। কারণ, কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে না। থাকছে না কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মসূচিও। তারা প্রশ্ন তোলেন, দলের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে জোরদার পদক্ষেপ এবং সাংগঠনিক ব্যর্থতা কেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে না? তাদের মতে, সরকারকে সময় দিলে ভুল করবে বিএনপি। তৃণমূল বিএনপি ঠিকই আছে, প্রয়োজন ঢাকার নেতৃত্ব পুনর্গঠন করা।

এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া  বলেন, ‘শিগগিরই বিএনপিকে পুনর্গঠিত রূপে দেখা যাবে। উপজেলা নির্বাচনের পর বিএনপি বৃহৎ আন্দোলনে যাবে। তবে বিএনপি আশা করে, এর আগেই সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং দেশ ও জনগণের স্বার্থের কথা চিন্তা করে দ্রুত নির্বাচনের কথা ভাববে তারা।

তিনি বলেন, সরকার যদি মনে করে, বিএনপির দীর্ঘ সময় ধরে কোনো কর্মসূচি দেবে না, সেটি ভুল করবে। এভাবে বেশি দিন চলবে না। সরকারের বিষটি উপলব্ধি করতে হবে।

এদিকে আন্দোলন সফল না হওয়ার জন্য দায়ী নেতাদেরও চিহ্নিত করা দরকার বলে মনে করছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলের দুর্দিনে কারা ঝুঁকি নেননি, কারা ইচ্ছাকৃত আত্মগোপনে থেকেছেন, চাটুকারিতার মাধ্যমে সময় ক্ষেপণ করেছেন- এ সবই পর্যালোচনা ও চিহ্নিত করা হচ্ছে। এগুলো বিবেচনায় নিয়েই সংগঠনকে পুরোপুরি ঢেলে সাজিয়ে আন্দোলনে যেতে চাইছে দলটি। 

তবে সংগঠন পুনর্গঠন এবং আন্দোলন দুটোই একসঙ্গে চলবে, এমন মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিএনপি গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাস করে। এজন্য বিএনপি আরো গণসম্পৃক্ততা বাড়াতে চায়। জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়েই আমাদের দাবি আদায় করতে সক্ষম হব।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top