সকল মেনু

কপাল পুড়ল হাসিনা-খালেদার

ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি : বারবার বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন হাসিনা বানু। বয়স ত্রিশের কোঠায়। স্বামী পরিত্যক্তা এই নারী বিলাপ করতে করতে বলছিলেন নগদ ৬০ হাজার টাকা ছিল তার।

ছিল কাপড়চোপড়, থালা-বাসন অনেক কিছুই। সবই এখন ভস্মীভূত। একমাত্র ছেলে, সেও কাছে থাকেন না। পৃথিবীতে আপন বলতে আর কেউ নেই। এখন তিনি কী করবেন, কী নিয়ে বেঁচে থাকবেন? এমন আরো অনেক প্রশ্ন হাসিনার সামনে।

হাসিনার সঙ্গে কথা বলার সময় আরেক নারী এগিয়ে আসেন। নাম খালেদা আক্তার। কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন তার ছেলে সিজান এবার নবম শ্রেণিতে উঠেছে। গতকালই কিছু নতুন বইপত্র কিনে দিয়েছেন। ঘরে যত জিনিসপত্র ছিল তার সঙ্গে বইগুলোও ভস্মীভূত হয়েছে। খালেদা বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, ‘আমার সব স্বপ্ন পুড়ে শেষ। আমরা কই যামু, কী খামু। এখন আমাগো কী হইব।’

খালেদা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। শনিবার খুব ভোরে কাজে গিয়েছিলেন। খবর পেয়ে এসে দেখেন সব শেষ। কিছুই রক্ষা করতে পারেননি তিনি। হাসিনা-খালেদার মতো কুলসুম, তাহেরা, পারুল, আবিরন, নাছিমা, তুহিনা, হাজেরা, জামিরনসহ শত শত নারীর স্বপ্ন নিমেষেই ছাই হয়ে গেছে মধুবাগ বস্তির ভয়াবহ আগুনে।

শনিবার সকালে রাজধানীর মগবাজারের মধুবাগের একটি বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনায় প্রায় দুই হাজার ঘর পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। নিহত হয়েছে এক শিশুসহ তিনজন। পুড়ে গেছে হাজার পরিবারের সহায়সম্বল সবকিছু। কেউ হারিয়েছেন নগদ টাকা, কেউ হারিয়েছেন প্রিয় সন্তান। আবার অনেকেই সবকিছু হারিয়ে এখন নির্বাক। ধ্বংসস্তূপের ওপর চলছে শুধুই হাহাকার। চলছে মাতম। কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠছে সেখানে।

আগুনে পুড়ে যাওয়া বিল্লাল হোসেন জানান, এক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়েছেন ১৫ বছর আগে। আজ পা দুটো না থাকার জন্যই তাকে আগুনে পুড়তে হয়েছে। ঘরের মধ্যে কেউ ছিল না। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে তাকে বাঁচিয়েছেন। তার পরেও তার শরীরের অনেক অংশ পুড়ে গেছে। তার ভিক্ষা করা নগদ ২৫ হাজার টাকাও পুড়ে গেছে বলে জানান বিল্লালের ভাবি সামিয়া বেগম।

আগুনে ঘর পুড়ে যাওয়া পোশাকশ্রমিক ওমর ফারুক এই প্রতিবেদককে বলেন, গত পরশু তিনি এই বস্তিতে ঘর ভাড়া নিয়েছেন। গতকাল ঘরের আসবাবসহ অনেক কিছু কিনে আনেন। একটি নতুন টেলিভিশনও কেনেন। এসবের কিছুই রক্ষা করতে পারেননি তিনি- এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ওমর ফারুক।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশেই রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে শুকনো খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সুফী সুলতান আহম্মদ রাইজিংবিডিকে বলেন, এলাকার সাংসদ ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। ঢাকা জেলার ডেপুটি কমিশনার সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। তিনি তালিকা চেয়েছেন অনুদান দেওয়ার জন্য।

সুলতান আহম্মদ বলেন, পুড়ে যাওয়া ঘরগুলো মেরামত না করা পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করা হবে। নতুন কাপড়চোপড় দেওয়া হবে। এ ছাড়া নগদ টাকাপয়সাও দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top