সকল মেনু

চট্টগ্রামে চতুর্থ উড়ালসেতু নির্মাণের উদ্যোগ

চট্টগ্রাম, ৮ ফেব্রুয়ারি : চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে নতুন কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালসেতু (ফ্লাইওভার) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)।

এই উড়াল সেতুটি হবে চট্টগ্রামের ৪র্থ এবং সবচেয়ে দীর্ঘ উড়ালসেতু। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রম হিসেবে কনসালটেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে চউক। এই লক্ষ্যে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুচ ছালাম রাইজিংবিডিকে জানান, দেশের প্রধান বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রামে ৪র্থ ফ্লাইওভার হিসেবে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্দর নগরীর শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে নতুন কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত আরো একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রস্তাবিত উড়াল সেতুটি বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

তিনি বলেন, এই ফ্লাইওভারের মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের উন্নয়নের যে জোয়ার সৃষ্টি হবে তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া এই ফ্লাইওভারের মাধ্যমে শহরের সর্বশেষ প্রান্ত থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দরে যাতায়ত সহজতর ও দ্রুততর হবে।

এদিকে নতুন এই উড়ালসেতু নির্মাণের প্রাথমিক পদক্ষেপ ও কাযক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুচ ছালামসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জানানো হয়, চট্টগ্রাম বন্দরকে চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা গেলে ওই এলাকার বিশাল সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রতিবছর গড়ে ১৫ লাখ টিইইউএস-এর চেয়ে বেশি কন্টেইনার ও প্রায় চার কোটি মেট্রিক টন পণ্য হ্যান্ডলিং হচ্ছে। এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সামাল দিতে বন্দরের অভ্যন্তরে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের মতো ট্রাক প্রবেশ করে।

এর বাইরে কন্টেইনার মোভার এবং কাভার্ডভ্যান মিলে বন্দরে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন যাতায়াত করে। একইভাবে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলেও (সিইপিজেড) প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাক, বাস, কাভার্ডভ্যান আসা যাওয়া করে। কর্ণফুলী ইপিজেডেও যানবাহনের সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান সড়ক হিসেবে বিবেচিত এশিয়ান হাইওয়ের উক্ত এলাকা দিনভর যানজটে স্থবির থাকে।

বিপুল পরিমাণ যানবাহনের চাপে চট্টগ্রাম বন্দর সন্নিহিত এলাকাই কেবল নয়, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই ট্রাক যখন চাক্তাই খাতুনগঞ্জ কিংবা নাসিরাবাদ, কালুরঘাটের দিকে যাত্রা করে তখন ওই এলাকা দিয়ে অন্যান্য যানবাহন চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। বন্দরের গাড়ির জটে পড়ে বিমানবন্দর সড়কের যান চলাচল ব্যাহত হয় মারাত্মকভাবে। পুরো রাস্তা জুড়ে ট্রাকের সারির কারণে বিমানবন্দরমুখী গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে প্রতিনিয়ত। কখনো কখনো যানজটের কবলে পড়ে শহর থেকে বিমানবন্দর যেতে দেড় দুই ঘণ্টা সময় লেগে যায়।

এই অবস্থার অবসানে বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে নগরীতে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রস্তাব করেন সিডিএ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুচ ছালাম। বছর তিনেক আগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের প্রতিনিধিদল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে বিষয়টি অবহিত করেছিলেন।

পরবর্তীতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও তিনি বিষয়টি তুলে ধরেন। বন্দরের অর্থায়নে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বারিক বিল্ডিং এবং সদরঘাট ও ফিশারিঘাট হয়ে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের ফ্লাইওভারটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।

পরবর্তীতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি রাখা হয়। ওই কমিটি ইতোমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। গত ১২ অক্টোবর জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্দরের অর্থায়নে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণের ঘোষণা দেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top