সকল মেনু

ভারতে নাশকতাই লক্ষ্য ছিল খালেদা সরকারের

ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা, ৭ ফেব্রুয়ারি : প্রতিবেশী দেশ ভারতে নাশকতা চালানোর লক্ষ্যে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগসাজসে লিপ্ত ছিল খালেদা জিয়া সরকারের একটা প্রভাবশালী অংশ। চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ে বিচারক এস এম মজিবুর রহমান এই ভাষাতেই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামির জোট সরকারকে অভিযুক্ত করেছেন।

শুক্রবার এ ধরনের একটি খবর প্রকাশ করেছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা।

খবরে বলা হয়, গেল ৩০ জানুয়ারি এই রায়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুই মন্ত্রী ও উলফার কমান্ডার পরেশ বরুয়া-সহ ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন বিচারক রহমান। ৩৯৪ পাতার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশের পর আজ (বৃহস্পতিবার) সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়েছে। দশ বছর আগে এপ্রিলের প্রথম দিনে চট্টগ্রামে শিল্প মন্ত্রকের জেটিতে দু’জাহাজ বোঝাই অস্ত্র ১০টি ট্রাকে বোঝাই করার সময়ে ধরা পড়ে যায়।

চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায়ে বিচারক বলেছেন, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা বিভাগ (ডিজিএফআই)-এর ডিজি সাদিক হাসান রুমি প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে অস্ত্র আটকের বিষয়টি জানালেও তিনি নীরব থাকেন। ডিজিএফআই-এর প্রধান রুমি আদালতে হলফনামা দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন। শিল্প দফতরের জেটিতে খালাস হওয়ার সময়ে যে এই অস্ত্র ধরা পড়েছে, তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী জামায়াতের শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামিকে সেই কথা জানিয়েছিলেন দফতরের সচিব শোয়েব আহমদ। আদালতকে দেওয়া সাক্ষ্যে তিনিও জানিয়েছেন, মন্ত্রী তাঁকে কোনও পদক্ষেপ নিতে বারণ করেছিলেন। অস্ত্র চোরাচালানের বিষয়টি সরকারের সব মহলের জ্ঞাতসারে হয়েছে বলেও সচিবকে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী নিজামি।

রায়ে বিচারক মন্তব্য করেছেন, উলফার জন্য এই বিপুল অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অফিস ‘হাওয়া ভবন’-এরও যোগাযোগ ছিল। খালেদা-পুত্র তারেক রহমান এই দফতরের দায়িত্বে ছিলেন। সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ ‘ডিজিএফআই’ ছাড়া গোয়েন্দা সংস্থা ‘এনএসআই’-এর তৎকালীন কর্মাকর্তারা এই মামলায় যে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তা থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর পাঠানো অর্থ কী ভাবে বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্তাদের হাতে আসত, তা-ও প্রকাশ্যে এসেছে।

সরকার ও গোয়েন্দা বিভাগের কর্তাদের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের জঙ্গি সংগঠন আলফার যে নিবিড় যোগাযোগ ছিল, সে কথাও বলেছেন বিচারক। ওই রায়ে বলা হয়েছে, ডিজিএফআই ও এনএসআই-এর বিভিন্ন কর্তা আদালতে দাঁড়িয়েই উলফার সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের কথা স্বীকার করেছেন। এমনকী উলফার টাকায় সস্ত্রীক দুবাই বেড়িয়ে আসার কথাও স্বীকার করেছেন এনএসআই-র তখনকার ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম।

রায়ে বলা হয়েছে, সম্ভবত বিশ্বের আর কোনও মামলায় এ ভাবে দেশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্তারা প্রকাশ্যে এসে আদালতে সাক্ষ্য দেননি। সে হিসেবে এই মামলা নতুন নজির গড়েছে। গোয়েন্দা ও গুপ্তচর বিভাগের কর্তারা আদালতে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরাই গোটা ঘটনার মাথা। কর্মচারি হিসেবে বাকিরা তাঁদের দায়িত্বটুকুই পালন করেছেন শুধু।

রায়ে আরো বলা হয়েছে, দেশ পরিচালনায় ঘোষিত নীতির বাইরে সরকার যে অন্য একটি নীতিও মেনে চলত, এই মামলায় তা স্পষ্ট হয়েছে। বিচারকের মতে এই প্রবণতা যেমন অনৈতিক, তেমনই জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার পক্ষেও চরম বিপজ্জনক। প্রতিবেশী দেশে নাশকতা চালানো কখনও কোনও সরকারের নীতি হতে পারে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top