সকল মেনু

চট্টগ্রাম বিমানবন্দর স্বর্ণ পাচারের স্বর্গ দুয়ার

 চট্টগ্রাম ব্যুরো, ৭ ফেব্রুয়ারি :  চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্বর্ণ চোরাচালানের স্বর্গ দুয়ারে পরিণত হয়েছে। দুবাই, আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে একের পর এক প্রবেশ করছে কোটি কোটি টাকার স্বর্ণের বড় বড় চালান। গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে প্রায় প্রতিদিনই স্বর্ণের চালান আটকের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্বর্ণের চালান আটক করা হয়।  রাত সাড়ে ৮টায় দুবাই থেকে আসা ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইটের অভ্যন্তরে তল্লাশি করে যাত্রীর আসন, টয়লেট ও বিভিন্নস্থানে অভিনব কায়দায় লুকিয়ে রাখা ৪২০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। যার ওজন প্রায় ৫০ কেজি। উদ্ধারকৃত এসব স্বর্ণের বাজার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা।  কাস্টমস সূত্র জানায়, একই সঙ্গে ৫০ কেজি স্বর্ণের চালান আটকের ঘটনা এটাই প্রথম চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ইতিহাসে। এর আগে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৪ কোটি টাকার সবচেয়ে আলোচিত স্বর্ণ আটকের ঘটনাটি ঘটে গত বছরের ২৪ জুলাই। সেদিন ১০৬৫টি সোনার বারে ১২৪ কেজি স্বর্ণ আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে স্বর্ণের বৃহত্তম চালান আটকের আগে গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত প্রতিদিনই চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে আগত বিভিন্ন যাত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার তিন ঘণ্টার ব্যবধানে পাঁচ বিমানযাত্রীর কাছ থেকে ১০টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়েছিল। মঙ্গলবারও দুই দফায় ছয় যাত্রীর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৪টি সোনার বার। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মশিউর রহমান মন্ডল স্বর্ণের বড় চালান উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকায় চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে একের পর এক স্বর্ণের চালান ধরা পড়ছে। ৫০ কেজি স্বর্ণ উদ্বারের বিষয়ে মশিউর রহমান বলেন, এই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ বিমানের ভেতর থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। স্বর্ণ উদ্ধারের ব্যাপারে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হবে। উদ্ধারকৃত স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হবে রাইজিংবিডিকে জানান তিনি।

এদিকে একের পর এক স্বর্ণের চালান ধরা পড়ায় অনেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে স্বর্ণ চোরাচালানের স্বর্গ দুয়ার হিসেবেই মন্তব্য করছেন। অনেকে বলছেন, এই বিমানবন্দরটি যেনো স্বর্ণের খনি। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে প্রতিদিন মিলছে কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে এতো স্বর্ণ কিভাবে চট্টগ্রামে আসছে তা বিমানবন্দর কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ ধরা পড়লেও থেমে থাকছে না স্বর্ণের চোরাচালান।

এই রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যে পরিমাণ স্বর্ণের চালান ধরা পড়ছে তার চেয়ে অনেক বেশি চালান কাস্টমস, পুলিশ বা নিরাপত্তা ব্যবস্থার আড়ালে বের হয়ে যাচ্ছে। বিমানবন্দরের অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালানে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগও রয়েছে। সম্প্রতি স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত থাকার দায়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তাকে বদলি করেছে কর্তৃপক্ষ। আলোচিত এই স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সদস্য চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন বিভাগের ব্যবস্থাপক ইউং কমান্ডার নুর-ই আলমের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) মোমেন মকসুদ।

অবাধে স্বর্ণ চোরাচালান প্রসঙ্গে মশিউর রহমান বলেন, আমরা বিভিন্ন সোর্স লাগিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে স্বর্ণ চোরাচালানীদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

চোরাচালানের সঙ্গে বিমানবন্দরের কিছু কিছু নিম্ন পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এই কর্মকর্তা বলেন, যারা চিহ্নিত হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালান প্রতিরোধে কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে মশিউর রহমান  নিশ্চিত করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top