সকল মেনু

মহাজোট সরকারের জন্য বেসামাল ছাত্রলীগ এখন বিষফোড়া

 মেহেদি হাসান, ঢাকা, ৩ ফেব্রুয়ারি :  শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে জনমনে স্বস্তি আনার যে চেষ্টা করছে সেক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে ছাত্রলীগ। ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংগঠণটি এখন রীতিমত বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং মহাজোট সরকারের জন্য।
কারণ নতুন সরকারের বয়স এখন এক মাসেরও কম। এরই মধ্যে ছাত্রলীগ যতগুলো কেলেঙ্কারি করেছে তাতে নতুন সরকারের ভাবমূর্তি এখন ভূলুন্ঠিত বলা যায়। ইতোমধ্যে সরকারের মুখে কালিমা লেপন করেছে ছাত্রলীগসহ সরকারের দুই একজন মন্ত্রীও। রোববার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের সশস্ত্র হামলায় সাংবাদিকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। ছাত্রলীগ নেতারা সশস্ত্র আক্রমন চালিয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের যেভাবে নাজেহাল করেছে তা বিরল। অন্যদিকে গত শনিবার কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির নেতাদের হাতে মিষ্টি  খেয়ে বিপাকে পড়েছেন ছাত্রলীগের  নেতারা। শিবিরের ক্যাম্পাস কমিটি ঘোষণা উপলক্ষ্যে ছাত্রলীগের  টেন্টে গিয়ে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের মিষ্টি খাওয়ান  ঘোষিত কমিটির নতুন নেতৃবৃন্দ। এরপর সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামীম খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক আবুজর গিফারী গাফ্ফারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, শিবির সভাপতি আসাদুল্লাহ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামীমের মুখে মিষ্টি তুলে দিচ্ছেন। এরপর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুজর গিফারী গাফ্ফার, সাজন মৃধাসহ উপস্থিত অনেক নেতাকে মিষ্টি মুখ করান শিবির নেতারা। গত ২৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসানের এক ‘আপত্তিকর’ স্ট্যাটাসের জের ধরে সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় একজনকে। গত ২৫ জানুয়ারি শনিবার কবি জসীমউদ্দীন হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় গিয়ে প্যাকেটজাত দুধ হাতে একটি ছবি তুলে ফেসবুকে দেন। ছবিতে একজন মেয়ে বিক্রেতাকেও দেখা যাচ্ছিল পেছন দিকে। ফেসবুকে এ নিয়ে মন্তব্য করা হলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আফরিন নুসরাত প্রতিবাদ জানান। এরপর মেহেদীর অনুসারীরা নুসরাতকে নিয়ে নানা অশ্লীল মন্তব্য করে। ওই ঘটনার বিচার চেয়ে শামসুন নাহার হলের ছাত্রীরা রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন করে। এদিকে ঘটনার পরদিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপ-আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক লিটন মাহমুদ আরেকটি স্ট্যাটাস দেন ফেসবুকে। এর জের ধরে তর্ক-বিতর্ক, ধাক্কাধাক্কি এবং ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গত বুধবার রাজধানীর শাহবাগের একটি বারে বিল পরিশোধ করাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও বার কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের সভাপতি মেহেদী হাসান আহত হন। এ খবর শুনে হলের সাধারণ সম্পাদক নিজামুল ইসলাম দিদার এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় স্কুলবিষয়ক সম্পাদক হাসানুল হক বান্নার নেতৃত্বে শতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী ওই বারে হামলা চালায়। এ সময় ছাত্রলীগ ইটপাটকেল ও বার কর্মীরা মদের খালি বোতল নিয়ে মারামারি করে। এতে দুপক্ষের দশজন আহত হয়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক সভায় এসএম হলের সভাপতি মেহেদী হাসানকে সাময়িক বহিষ্কার, সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক দিদার ও জিয়া হল সভাপতি আবু সালমান প্রধান শাওনকে সতর্ক করা হয়।  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২৩ জানুয়ারি নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম মঈনুদ্দীনকে সমাজবিজ্ঞান ভবনের নিচতলায় লাঞ্ছিত করেন ছাত্রলীগ নেতা মামুন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রকাশনা সম্পাদক মামুন পরীক্ষায় ন্যূনতম যোগ্যতা না থাকায় মাস্টার্সের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। এ কারণে ওই শিক্ষককে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় মামুনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত শুক্রবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম ও উপপরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাভিদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে পাল্টাপাল্টি চপেটাঘাতের ঘটনা ঘটে। সভাপতির অনুসারীরা এ সময় নাভিদকে বেধড়ক মারধর করলে তাঁকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এ ঘটনায় নাভিদসহ চার কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় পাঁচজনকে আটকও করেছে পুলিশ। ২০০৯ সালে সরকার দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মাথায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিজেদের মধ্যে মারামারিতে নিহত হন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজীব। প্রায় শেষ দিকে এসে ছাত্রলীগকর্মীদের হাতে নির্মমভাবে বিশ্বজিৎ দাস হত্যার ঘটনা ঘটে। গত ১৮ ডিসেম্বর দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার রায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আট কর্মীর ফাঁসি ও ১৩ আসামির যাবজ্জীবন কারাদ- হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক হত্যা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ হত্যার বিচার হয়নি এখনো। নিজেদের মধ্যে অসংখ্য মারামারির ঘটনা, প্রতিপক্ষের ওপর হামলার সময় অস্ত্র প্রদর্শন, টেন্ডারবাজি, শিক্ষকদের ওপর হামলার অসংখ্য ঘটনার বিচার কেউ চাইছেই না। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও সিলেট সার্কিট হাউসেও মন্ত্রী-এমপিদের চোখের সামনেই সংঘর্ষে গড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সিলেটের বিশ্বনাথে পুলিশের থানা ভাংচুর করতেও ছাড় দেয়নি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একজন সিনিয়র সহ-সভাপতি বলেন, ছাত্রলীগ আর ছাত্রলীগের নেই। সংগঠনটি দিন দিন ইতিহাস-ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও এলাকায় স্থানীয় নেতাদের তাবেদারি সংগঠনে পরিণত হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top