সকল মেনু

দুদকের জালিয়াতির অর্থ উদ্ধারে ভিন্ন কৌশল

 আছাদুজ্জামান, ঢাকা, ৩ ফ্রেরুয়ারি :  সোনালী ব্যাংকের আগারগাঁও শাখায় মাদার এলসি খুলে সরকারি ও বেসরকারি ১৮টি ব্যাংকের ২৬ শাখা থেকে ১৪১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় অর্থ আদায়ে ভিন্ন কৌশল নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর এ কৌশলের কারণে অর্থ উদ্ধারে কিছুটা অগ্রগতি হলেও অনুসন্ধান কাজে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। প্রায় দেড় বছর অতিক্রম হলেও প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা  হটনিউজ২৪বিডি.কমকে  জানান, ‘সোনালী ব্যাংকের আগারগাঁও শাখায় এই বিশাল জালিয়াতির ঘটনায় দুদক প্রথম থেকেই তৎপর রয়েছে। তবে আমাদের ব্যাংকের স্বার্থও দেখতে হচ্ছে। মূলত ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অনুরোধে অনুসন্ধান কাজ শেষ করে আনলেও মামলা করতে একটু সময় নিচ্ছি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দাবি দুদক বিষয়টি আমলে নেয়ার পর থেকেই জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তরা ব্যাংকের টাকা ফিরিয়ে দিতে তৎপর হয়েছে। তাই যদি এ মূহুর্তে মামলা করা হয় তাহলে দোষীদের সাজা হলেও ব্যাংকগুলোর টাকা অনাদায়ী থেকে যাবে।’ এক পরিসংখ্যান তুরে ধরে ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ১৪১ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে দুদক অনুসন্ধান কাজ শুরু করে। কিন্তু অনুসন্ধান পর্যায়ের প্রথম ধাপেই ৭৫ কোটি আদায় হয়। এরপর কয়েকটি ধাপে প্রায় ১৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এছাড়া আরো ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা আদায়ের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তাই অর্থ উদ্ধারে ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করার জন্যই দুদকের এই ধীরগতির কৌশল। তবে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুদক কোনো ছাড় দেবে না। তিনি বলেন, দুদকের প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। যেখানে ৩০ থেকে ৩৫ মামলায় প্রায় অর্ধশত আসামি হতে পারে। দুদক সূত্র জানায়, ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময় সোনালী ব্যাংকের আগারগাঁও শাখা থেকে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক গৌতম মিত্রের বিরুদ্ধে ১৪১ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ উঠে। গ্রীন প্রিন্টার্স লিমিটেড তার প্রতিষ্ঠান হলেও তিনি এই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আবুল হোসেনকে প্রতিষ্ঠানের মালিক দেখিয়ে এ টাকা আত্মসাত করেন। এক্ষেত্রে ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে সহয়তা করে। গৌতম মিত্রের  বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পেয়ে দুদক ২০১২ সালের ২৬ সেপ্টম্বর চার সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করে কাজ শুরু করে।   দুদক সূত্র আরো জানায়, সোনালী ব্যাংক আগারগাঁও শাখায় মাদার এলসি খোলা হলেও তারা সরাসরি কোনো ঋণ দেয়নি। এখানে সোনালী ব্যাংক গ্রান্টার হয়ে তাদের ঋণপত্রের বিপরীতে উপরোক্ত ১৮টি ব্যাংক অর্থ ছাড় করে। যেখানে গ্রীন প্রিন্টার্সসহ নামে-বেনামে ৫৩টি প্রতিষ্ঠান এই অর্থ নেয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রাপা টেক্সটাইল, রাপা ফেব্রিক্স, গোমতি টেক্সটাইল, গোমতি ফেব্রিক্স, এ এস বি ট্রেক্সটাইল, নয়নতারা ট্রান্সপোর্ট, শোভন ট্রেক্সটাইল অন্যতম। অনেক প্রতিষ্ঠানের কাগজে নাম থাকলেও বাস্তবে অস্তিত্বহীন বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। নন-ফান্ডের ১৪১ কোটি টাকার সঙ্গে জড়িত ১৮টি ব্যাংক হল সরকারি বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, বাংলাদেশ উন্নয়ন ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল), বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে প্রাইম ব্যাংক, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল), এক্সিম ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া,যমুনা ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড। জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ব্যাংক অর্থ ঋণ আদালতে ১৪ থেকে ১৫ মামলা দায়ের করেছে। দুদক এ পর্যন্ত গ্রীন প্রিন্টার্সের সত্ত্বাধিকারী আবুল হোসন, সাবেক ছাত্রনেতা গৌতম মিত্রসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। দুদক উপ-পরিচালক বেনজির আহমেদের নেতৃত্বে চার সদস্যের অনুসন্ধান দলের অন্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান, আবু হেনা আশিকুর রহমান এবং উপ-সহকারী পরিচালক নিলুফার জাহান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top