সকল মেনু

স্বপ্নময় স্বপ্নপুরী বেড়ানোর এখনই সময়, একবার গেলে বার বার মন ছুটে যেতে চায়

মো. আমিররুজ্জামান, নীলফামারী ০১ ফেব্র“য়ারি : বিনোদন ও পিকনিকের জন্য এক অসাধারণ ও অনির্বাচনীয় কেন্দ্র স্বপ্নপুরী। এই শীতে স্বপ্নময় স্বপ্নপুরী বেড়ানোর এখনই সময়। সেখানে এরকবার গেলে বার বার যেতে মন ছটফট করে। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে ৫২ কিলোমিটার এবং ফুলবাড়ি উপজেলা শহর থেকে ১২
কিলোমিটার পূর্বে নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ এলাকার প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলের গহীন বনজঙ্গল ও মজা পুকুর সংস্কার করে প্রায় ১শ’ একর জমির উপর নির্মিত উত্তরবঙ্গের মনোরম ছিমছাম ভ্রমণ কেন্দ্র স্বপ্নপুরী। নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, সাংস্কৃতিক ও প্রকৃতি প্রেমিক দেলোয়ার হোসেনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি পিকনিক কর্ণার গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে ১৯৮৯ সালে কাজ শুরু করেন। ১৯৯০ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে স্বপ্নপুরী। এই বিনোদন কেন্দ্রে রয়েছে শিশু পার্ক, চিড়িয়াখানা যেখানে রয়েছে বাঘ, ভল্লুক, অজগর, মদন, শকুন, বানর, বাহারি কবুতর, পাঁচ পায়ের গরু প্রভৃতি প্রাণি। কৃত্রিম
চিড়িয়াখানা, ঝর্ণাধারা, মিউজিয়াম, নৌবিহার, সবুজ গাছের ছায়া বিশ্রামাগার, দেশি- বিদেশি হাজারো ফুলের বাগান, সারি সারি দেবদরু গাছ, মাটিতে নেমে আসা কৃত্রিম রংধনু, শতাধিক পিকনিক কর্ণার, মাটি ও দালানের তৈরি আকর্ষণীয় কটেজ বা রেষ্টহাউস। এছাড়া ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আন্দোলন ও সংগ্রামের চিত্র আর্টিফিসিয়ালের মাধ্যমে নতুন প্রজম্মকে জানানোর জন্য দেয়ালে দেয়ালে বা দর্শণীয় স্থানে মোরাল চিত্র তৈরি করা  হয়। এসব তদারকির জন্য সার্বক্ষণিকভাবে দিবারাত্রি আগত ভ্রমনকারী মেহমানদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিক ও কর্মচারিরা। এই স্বপ্নপুরী পিকনিক কর্ণারটি ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি সমগ্র দেশবাসীর কাছে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। বছরের প্রতিটি দিনই শত শত মানুষ এখানে পরিবার- পরিজন নিয়ে আসে বিনোদনের জন্য। তবে শীত মওসুম শুরুর সাথে সাথে পুরোদমে শুরু হয় পিকনিক পার্টির ভিড়। বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, কার- মোটর সাইকেল, বাইসাইকেল, রিকশা ভ্যান, টেম্পো এমনক পায়ে হেঁটেও বিনোদন প্রিয় মানুষ আসেন এখানে। স্বপ্নপুরীকে মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো সাজানোর পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের দীর্ঘমেয়াদী। ইতোমধ্যে ২০/২৫টি চলচ্চিত্র, নাটক ও মিউজিক ভিডিওর স্যুটিং হয়েছে এখানে। এছাড়া দেশ ও বিদেশের অনেক গুণী রাজনৈতিক, বুদ্ধিজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব স্বপ্নপুরী
ঘুরে গেছেন। এ পিকনিক স্পটে শীত মওসুমে ৫শ’ অধিক পিকনিক পার্টি আসে। শীত মওসুম ছাড়াও সারা বছর জুড়ে লোকজন এখানে বেড়াতে আসেন।

যাতায়াত ও প্রবেশ মূল্য: রাজধানী ঢাকা থেকে দুরপাল্লার কোচে নবাবগঞ্জ ও ফুলবাড়ি উপজেলায় নেমে স্বপ্নপুরীতে যাওয়া  যায়। এছাড়া আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেসে পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশনে নেমে এখানে আসা যায়। স্বপ্নপুরীর ভিতরে প্রবেশ করতে বাস-ট্রাক ৯শ’ টাকা, মাইক্রোবাস ৩শ’ টাকা, কার-জীপ ১শ’ ৫০ টাকা, পিকআপ- মিনিট্রাক ৩শ’ টাকা, রিকশা ভ্যান ১০ টাকা, মোটর সাইকেল ১০ টাকা, বাইসাইকেল ৫ টাকা এবং জনপ্রতি ২৫ টাকা গুণতে হয়। এ আয় থেকে পিকনিক কর্ণারে কর্মরত কর্মচারিদের বেতনভাতা মিটিয়ে বাকি রক্ষণাবেক্ষন এবং সংস্কার কাজে ব্যয় করা হয়। এই প্রবেশমূল্য ছাড়াও দর্শনার্থীদের রাইডের জন্য আলাদা আলাদা টাকা গুণতে হয়। স্বপ্নপুরীর বুকিং ও কটেজ ভাড়া: পর্যটক ও ভ্রমণকারীদের থাকার জন্য কর্তৃপক্ষ মনোরম ও আকর্ষণীয় কটেজ বা রেষ্টহাউস তৈরি করেছেন। নীলপরী, রজনীগন্ধা, নিশিপদ্ম, চাঁদনী, সন্ধ্যতারা ও রংধনু নামে এসব কটেজের ভাড়া ৬শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা। ডাবল, সিঙ্গেল ও তিন রুমসহ এসব কটেজ বুকিং ও বিস্তারিত তথ্যের জন্য ম্যানেজার-০১৭১২১৩৪০৯৫, ০১৭৩৮০৯৯০৬২ যোগাযোগ করা যেতে পারে। স্বপ্নপুরী কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে এখানে একটি অত্যাধুনিক হোটেল, চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট, মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে স্বতন্ত্র স্পট, পাখির রাজ্য, মাছের রাজ্য, রেলকার, রোপকার, মানবিক চৈতণ্যের ভাস্কর্য শিল্প ইত্যাদি নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্নপুরীর সফল বাস্তবায়নে যিনি অগ্রণী  ভূমিকা পালন করেছেন, তিনি হচ্ছেন প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন। নেপথ্যে রয়েছেন তারই সহোদর মোস্তাফিজার রহমান ফিজু। স্বপ্নপুরীর বিল্ডিং ডিজাইন করেছেন দিনাজপুর হোম প্লানের ইঞ্জনিয়ার দেবাশীষ। শিল্পীর তুলির আঁচড়ে স্বপ্নপুরীর সকল ছবি হয়েছে প্রাণবন্ত। এদের মধ্যে রয়েছেন জয়পুরহাটের আজাদ হোসেন (আজাদ), বগুড়ার শিল্পী  সাহেবুর রহমান (ফটন) ও নূরন্নবী প্রমুখ।

শেষ কথা:

ভৌগলিক অবস্থানগতভাবে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে সোনালী সম্ভাবণাময় এবং বিগত বছরগুলোতে এ শিল্পের যথেষ্ট উন্নতি ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। স্বপ্নপুরী উত্তরবঙ্গ তথা সমগ্র বাংলাদেশে একটি আকর্ষণীয় পিকনিক বা ভ্রমণ স্পট হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছে। স্বপ্নপুরীর প্রবেশদ্বারে দন্ডায়মান বিশাল আকৃতর দুটি পরীর প্রতিকৃতি। ওরা পর্যটকদের স্বাগত জানাতে সদা প্রস্তত। ছায়া আচ্ছাদিত স্থানে রয়েছে মুসল্লীদের নামাজের সুব্যবস্থা। রয়েছে স্বপ্নপুরীর মুক্তমঞ্চ। মঞ্চে স্থাপিত ভাস্কর্য নৃত্যরত তরুণ-তরুণী সৃষ্টি করেছে স্বপ্লীল ও সাংস্কৃতিক আবহ। সময় যেন এখানে এসে থেমে দাঁড়ায়। হারিয়ে ফেলে চলার গতি। শিশু পার্ক, ঘোড়ার গাড়ি চড়ার আনন্দ, রবীন্দ্র- নজরুলসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য, জীবন্ত চিড়িয়াখানা, সৌরজগত, নভোথিয়েটার, স্বপ্নপুরী মালিকের আলিশান বাংলো, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ- গাছালি স্বপ্নপুরীতে সৃষ্টি করেছে নতুন মাত্রা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে স্বপ্নপুরীকে একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা যেতে পারে। এছাড়া এখানে অবস্থান করে ফুলবাড়ি কয়লাখনি, কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প ঘুরে এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। তবে এসব প্রবেশে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি লাগবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top