সকল মেনু

বাবর-নিজামীসহ ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

 আছাদুজ্জামান,চট্টগ্রাম থেকে, ৩০ জানুয়ারি :  বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় নিজামী, বাবর, পরেশ বড়ুয়াসহ ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পাতিবার বেলা পৌনে একটায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মুজিবুর রহমান রায় ঘোষণা করেন।  অস্ত্র চোরাচালান মামলায় এই ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়ার পাশাপাশি একই আদালত পৃথক অস্ত্র মামলায় তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশও দিয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন : সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহিম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সিইউএফএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, চোরাকারবারি হাফিজুর রহমান, দীন মোহাম্মদ, নূরুল আমিন, আবদুস সোবহান এবং উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া ।এদের মধ্যে নূরুল আমিন, আবদুস সোবহান এবং উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া পলাতক।  রায় ঘোষণার আগে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১-এ আটক ১১ জন আসামিকে হাজির করা হয়। আদালত এলাকায় তৈরি করা হয় নিরাপত্তাবলয়। মূল আদালত ভবনের সামনে র‌্যাব ও পুলিশ সতর্ক অবস্থান নেয়। জোরদার করা হয় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারসহ নগর জুড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা। আদালতের প্রবেশপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভেতরে ঢুকতে দিয়েছেন।
গেল ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর মামলার আইও মনিরুজ্জামানের জেরা শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে এ ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। অস্ত্র মামলায় মোট ৫৬ এবং চোরাচালান মামলায় মোট ৫৩ জন সাক্ষ্য দেন। অধিকতর তদন্তের পর অস্ত্র মামলায় ৫০ জন এবং চোরাচালান মামলায় ৫২ জনকে আসামি করে বিচারকাজ চলে। একই সঙ্গে চলা দুই মামলায় সাক্ষী করা হয় ২৬৫ জনকে। আসামিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তবে চাপ দিয়ে ওই জবানবন্দি নেওয়া হয় বলেও পাল্টা অভিযোগ করেছেন কয়েকজন আসামি। এর আগে ২০১১ সালের ২৬ জুন এ মামলায় নতুনভাবে আরো ১১ আসামির নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের তৎকালীন এএসপি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান চৌধুরী। এর আগে ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি সিআইডির এএসপি ইসমাইল হোসেন এবং পরে সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সিনিয়র এএসপি মনিরুজ্জামান চৌধুরী পুনরায় তদন্তভার গ্রহণ করেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২০ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ মামলার অধিকতর তদন্তের আবেদন করে। সাতটি পর্যবেক্ষণসহ আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয়। ২০০৭ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত  এ মামলায় প্রথম দফায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলে। তখন পর্যন্ত অস্ত্র মামলায় ৩১ জন এবং চোরাচালান মামলায় সাক্ষ্য দেন ২৮ জন। ২০০৫ সালের ৬ জুলাই এ মামলায় বাদী আহাদুর রহমানের সাক্ষ্য দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। এরপর ২৩ অক্টোবর থেকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা অনুসারে আসামিদের পরীক্ষা করা শুরু করে রাষ্ট্রপক্ষ। গ্রেপ্তার ও জামিনে থাকা মোট ৩৮ জন আসামিকে পরীক্ষা করা হয়। এর আগে ২০০৪ সালের ৯ নভেম্বর সিআইডির এএসপি নওশের আলী খান চোরাচালান মামলায় ৪৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন। একই বছরে ১১ জুন সিআইডির এএসপি কবির উদ্দিন অস্ত্র মামলায় ৪৩ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সন্ধ্যায় অস্ত্র উদ্ধারের পর সেদিন রাতে কর্ণফুলী থানার ওসি আহাদুর রহমান বাদী হয়ে অস্ত্র ও চোরাচালান আইনে আলাদা দুটি মামলা করেন। এই দুটি মামলার তদন্ত করেন পাঁচ তদন্ত কর্মকর্তা (আইও)। কর্ণফুলী নদীর তীরে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সংরক্ষিত জেটিঘাটে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল মধ্যরাতে ট্রলার থেকে অস্ত্র খালাসকালে পুলিশ ১০ ট্রাকের সমপরিমাণ অস্ত্র আটক করে। অত্যাধুনিক অস্ত্রের এই বিশাল চালান নিয়ে তখন দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে ছিল এমএমটি-৫৬-১ মডেলের ৬৯০টি এসএমজি, এমএম-৫৬-২ মডেলের এসএমজি ৬০০টি, ৪০ এমএম রকেট লাঞ্চার ১৫০টি, ১০০টি টমিগান, ২ হাজার লাঞ্চিং গ্রেনেডসহ বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top