সকল মেনু

কুষ্টিয়ায় আদিবাসী সমিতির সরকারি অর্থ ভাগাভাগি করে নেয়ার অভিযোগ

 কুষ্টিয়া, ২৪ জানুয়ারীঃ কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার পাইকপাড়ায়  আদিবাসীদের উন্নয়নে দেয়া সরকারি সহয়তার লাখ লাখ টাকা তছরুপের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসের শীর্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ও আদিবাসী সমিতির সভাপতিসহ কয়েকজন মিলে সরকারি অর্থ ভাগাভাগি করে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্তে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০১২-১৩ অর্থ বছরে উপজেলার পাইকপাড়া আদিবাসী সমিতির মৎস্য চাষ প্রকল্প ও আদিবাসী শিশুদের শিক্ষা বৃত্তি প্রকল্পে প্রায় ১১ লাখ ১৫ হাজার টাকা সরকারীভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দ আসার পর তা খরচ
করার জন্য একটি কমিটি গঠন করতে হয়। সংশ্লি ষ্ট সমিতির সভাপতিকে সেই কমিটির প্রধান করার নিয়ম রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে  তা করা হয়নি। সকল টাকা খোকসা উপজেলার তৎকালিন উপজেলা  নির্বাহী অফিসার সোহেল হাসান তার ইচ্ছামত খরচ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আদিবাসী সমিতির সভাপতি অনিতা হালদার।
তবে সমিতির অন্য সদস্যরা এ জন্য আনিতাকে দায়ী করেছেন। আদিবাসী সমিতির সভাপতি অনিতা বলেন, অর্থ বরাদ্দ আসার পর  ইউএনও সোহেল হাসান বলেন, টাকা কোথায় কিখাবে খরচ হবে  তা তোমার ভাবা লাগবে না। এ বিষয়টি আমি দেখব। তিনি কোন  টাকা পাননি বলে অভিযোগ করেন। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছে,
অনিতা, ইউএনও, ইউএনও অফিসের নাজির, ও এক সাংবাদিক মিলে এ টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। সোহেল হাসান গত ৮ মাস  আগে বদলি হয়েছেন। এদিকে অনিতা এলাকার বিভিন্ন যুবককে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারনা করে আসছে। তার প্রতারনার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে সুজয় নামের এক যুবক। সুজয় একটি পুকুর নিয়ে লিজ নিয়ে কয়েকজন মিলে মাছ চাষ করে আসছিল। অনিতা সরকারি বরাদ্দ লুটপাট করতে সুজয় যে পুকুরে মাছ চাষ করে আসছিল সেটিকে তার সমিতির পুকুর দেখায়। মাছের পোনা ক্রয়, পুকুর সংস্কার, মাছ ধরা, শ্রমিকদের বেতন বাবদ খরচ দেখিয়ে এসব অর্থ তুলে নেয়া হয়েছে। সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক সুজয় অভিযোগ করে বলেন, অনিতা লোভ দেখিয়ে তার সঙ্গে মাছ চাষ করতে বলেন। এ জন্য সে টাকা দেবে বলে জানায়। অনিতার বিভিন্ন সময় তার নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। মৌখিকভাবে তাকে সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব দিলেও কাগজে কলমে কোথাও তার নাম নেই। অনিতার ছেলে নিজেই সমিতির সেক্রেটারি। সুজয় অভিযোগ করে বলেন, পাইকপাড়া আদিবাসী সমিতির নামে কয়েক দফায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা সরকারী বরাদ্দ দেওয়া হলে সভাপতি অনিতা সে টাকা আত্মসাত করেছে। এখন পাওনা টাকা চাওয়ায় তাকে নানাভাবে হয়রানী করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, অনিতা সমিতির
নিজস্ব কোন পুকুর না থাকায় সে ৬ বিঘা জমির একটি পুকুর সমিতির সুজয়ের কাছ থেকে নিয়ে ভুয়া দলিল তৈরী করে নেয়। ওই পুকুরে মৎস্য প্রকল্পের পেছনে সামান্য কিছু টাকা ব্যয়ও করে সরকারী বরাদ্দের টাকা পুরোটা উত্তোলন করে নেয়। সভাপতি ইতোমধ্যে পুলিশের সহায়তায় প্রকল্পের সব মাছ বিক্রি করে গোটা
টাকা হাতিয়ে নেয় বলেও সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুজয় কোন টাকা পাননি। ইতিমধ্যে সুজয় অনিয়মের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। তদন্তে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অনিয়ম পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
অভিযোগের বিষয়ে সমিতির সভাপতি অনিতা বলেন, আগের ইউএনও ভাল বলতে পারবেন। তিনি কোন অনিয়ম করেননি। তিনি বলেন, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল হাসান অফিস খরচ বাবদ তার ড্রাইভার বাদশার মাধ্যমে ১ লাখ ১০ হাজার, অফিস সহকারী ১০ হাজার, মাছের পোনা কেনার কথা বলে এক
সাংবাদিক ৬০ হাজার টাকা নিয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যান মমিনুর রহমান মমিন বলেন, অভিযোগের অনেক সত্যতা পাওয়া গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
আবু হেনা মোঃ মুস্তাফা কামাল এ বিষয়ে বলেন, প্রকল্পটি আমার যোগদানের আগে বাস্তবায়ন হয়েছে। তিনি এসে শুধু অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে সময়ে খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সোহেল হাসানের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে জানান, বিধি মোতাবেক সব কাজ করা হয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে সঙ্গে নিয়ে সব কাজ করেছি। অনিতা যেসব অভিযোগ করছে তার কোন ভিত্তি নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top