সকল মেনু

ভোলায় দেখা মিলছে না খেজুর রস বিক্রেতাদের

 এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: ভোলায় শীতের সকালে দেখা মিলছে না ভাড় কাঁধে খেজুর রস বিক্রেতাদের। এমনকি রস বিক্রেতাদের বাড়ি গিয়েও রস পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে। ফলে শীতে রসের পিঠা আর আয়েশ করে পায়েশ খাওয়া অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যে সকল গাছি এ পেশা থেকে সংসার চালাতেন তার আজ বিপন্ন প্রায়। খেজুরের রসের চাহিদা থাকা সত্বেও গাছ স্বল্পতার কারণে গাছিরা এখন বেছে নিচ্ছেন অন্য পেশা। তবে গাছ স্বল্পতার কারণে থেমে নেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ। যে কয়টি গাছ রয়েছে তা নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন সংশ্লিষ্ট গাছিরা।সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা খেজুর গাছ ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে খেজুর গাছের  সংখ্যা। তবুও জেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে আর মেঠোপথের পাশে বেশকিছু গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। স্থানীয়রা জানান, অতীতে এখানকার খেজুর রসের যে যশ ছিল তা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। খেজুরের রস শীতের সকালে গ্লাস ভরে খেতে বেশ মজা। সন্ধ্যায় রস আরো মজাদার, বেশ লোভনীয় রসের তৈরি গুড় ও পাটালি। আর শীত এলেই ভোলার গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি ঘরে খেজুরের রস দিয়ে পিঠা-পুলি-পায়েস তৈরির ধুম পড়ে। মুড়ি, চিড়া, পিঠা খাওয়া কৃষক পরিবার থেকে শুরু করে সবার কাছেই প্রিয়। ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া গ্রামের গাছি আবুল কালাম বলেন, “ইটভাটায় খেজুর গাছের চাহিদা বেশি হওয়ায় গ্রামের লোকজন খেজুর গাছ বিক্রি করে দিচ্ছে। এখন যে কয়টা গাছ আছে তা থেকেই রস সংগ্রহ করি, কিন্তু আগের মতো অধিক রস না পাওয়ায় বিক্রয় করে সংসার চলে না। তাই বেশির ভাগ গাছির এ পেশা ছেড়ে বেছে নিচ্ছেন অন্য পেশা।”মধ্য বাপ্তা গ্রামের গুড় ব্যবসায়ী আলি হোসেন বলেন, “একসময় খেজুর রস দিয়ে ৮০ থেকে ১শ’ মণ গুড় তৈরি করতাম। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন স্থানে এ গুড় বিক্রি করে সংসার চলতো। এখন গাছ কমে যাওয়ায় যে রস পাই তা দিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।”গাছ কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে ইট ভাটার মালিক মাহাবুব আলম নিরব (৫৮) জানান, খেঁজুর গাছের রসে ইটের রং গাড় হয়। এাড়াও খেজুর গাছ অপেক্ষাকৃত সস্তা দামে পাওয়া যায় বলে ইট  ভাটায় এর চাহিদা বেশি। ভোলা শহরের প্রবীণ সাংবাদিক আবু তাহের (৮১) জানান, আগে গাছিরা রস নিজেরাই বাড়ি বয়ে এনে দিয়ে যেতো। আর এখন তাদের বাড়ি গিয়েও ঝি-জামাইদের পায়েশ খাওয়ানোর মত রস পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে। তিনি আরো জানান, এক শ্রেণীর অসাধু ব্যাবসায়ীরা খেজুর গাছ ইট ভাটার দেদারছে পোড়ানোর কারণে একদিকে যেমন মানুষ খেজুরের রস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। এমন চলতে হাকলে এক সময় খেজুরের রস বইয়ের পায় ছাড়া বাস্তবে দেখা যাবে না। তাই ইট ভাটায় গাছ না পোড়ানোর জন্য মালিকদের সচেতন করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top