ওদিকে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় থার্টিফাষ্ট নাইটেও পর্যটক শুন্য কুয়াকাটা। বিশেষ দিনগুলি ছাড়াও শীতকালীন সময় প্রতিনিয়ত থাকে দর্শনার্থীদের ভীড়। কিন্তু এবছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মৌসুম শুরু থেকেই পর্যটক শুন্য থাকায় পর্যটন শিল্প ধ্বংসের মুখে। সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য অবলোকনে পর্যটকদের পদভারে থাকে সুদীর্ঘ বীচ মুখরিত। সেই কুয়াকাটা পর্যটন নিরব নিস্তব্দতায় কাতর। প্রতিবছর থার্টিফাষ্ট নাইটে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলেও এ বছর স্বাগত জানাতে কুয়াকাটায় কোনো ইমেজ নেই। পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় পর্যটক শুন্য লোকসান গুনতে হয়েছে হোটেল-মোটেল ব্যাবসায়ীদের।
অপরদিকে, কক্সবাজারে থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপন ও নতুন বছরে আগত দেশি-বিদেশি পর্যটক বরণে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হোটেল-মোটেল থেকে শুরু করে বিভিন্নস্থানে আয়োজন করা হয়েছে বর্ষবরণের নানা অনুষ্ঠানমালা। প্রায় অর্ধশতাধিক আবাসিক তারকা মানের হোটেল-মোটেল বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা পুলিশ কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এদিকে, নতুন ভাবনা ও নবউদ্দীপনার মণিকোঠায় উদিত হবে সূর্যের আলো। উদ্ভাসিত হবে পৃথিবীর মানবকুল। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ নতুনের কেতন উড়াতে উড়াতে বলবে শুভ নববর্ষ। মহাকালের চিরন্তর গতিপ্রবাহে নানা ঘটনার স্মৃতি নিয়ে বিদায়ী ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে অতীত হয়ে। আর শুরু হওয়া খ্রিস্টীয় পরিক্রমা আলিঙ্গন করবে বর্তমানকে। নতুনের প্রতি সব সময়ই মানুষের থাকে বিশেষ আগ্রহ ও উদ্দীপনা। কেননা নতুনের মধ্যে নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। আর সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়ণ করার সুযোগ করে দিতেই নতুন বছরের আগমন। চিরসংগ্রামী, লড়াকু ও আশাবাদী মানুষের প্রত্যাশা সব ধরনের স্থবিরতা কাটিয়ে নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে আনবে অনাবিল আনন্দ। দেশে ফিরে আসবে শান্তি, সমৃদ্ধি, স্বস্তি, গতিময়তা। নতুন আশার আলো প্লাবিত করবে বাংলাদেশের দিগন্ত।
সদ্যবিদায়ী বছরটি ছিল বাংলাদেশের জন্য গভীর হতাশার। হত্যা, গুম, সংঘর্ষ, দুর্ঘটনা, দুনীতি, বিরোধীমতের প্রতি দমন-পীড়নসহ নানা দুঃসংবাদের মধ্য দিয়ে কেটেছে দিনগুলো। রাজনীতি, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা, সমাজনীতি কোথাও কোনো সুখবর ছিল না। বরং নানা দুঃসংবাদ এ সময়ে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে জনমনে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়েছে দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী। এ সময়ে স্থবিরতা গ্রাস করেছে দেশের অর্থনীতি, বিনিয়োগ, রাজনীতি, সংসদ, প্রশাসন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে। তবুও মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখছে নতুন বছর নিয়ে। পুরনো বছরের গ্লানি, ব্যর্থতা ও অপারগতাকে ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরে নতুন আশা ও কর্মোদ্দীপনা নিয়ে জেগে উঠবে মানুষ। পৃথিবী পাল্টাচ্ছে আর পাল্টাচ্ছে। পাল্টানোর গতি দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। অবিশ্বাস্য গতিতে সবকিছু পাল্টে যাচ্ছে। চারদিকে অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে সম্ভব। এর সব কিছুর মূলে রয়েছে নতুন চিন্তা ও নতুন ভাবনা। চিরাচরিত রেওয়াজ অনুসারে ৩১ ডিসেম্বর ঘড়িতে রাত ১২টায় সেকেন্ডের কাটা অতিক্রম করার সাথে সাথেই স্বাগত জানাবে নতুন বছরকে।
নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। জাতীয় নেতৃবৃন্দের শুভ কামনায় আশার আলো খুঁজে পাবে দেশের মানুষ। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও পরস্পরে কাদা ছুঁড়াছুঁড়ি বন্ধ করার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় দেশ গড়ার মূলমন্ত্রের যাদুটনিক জাগ্রত হবে দেশের কর্ণধারদের মস্তিষ্কে। পাল্টে যাবে দেশের ভাবমূর্তি। মুক্তিপাবে ক্ষুধা-আতুর, দরিদ্র-পীড়িত মানুষেরা অভাবের যাঁতাকল থেকে। বেকার যুবকেরা খুঁজে পাবে কাজের সন্ধান। শ্রমজীবী মানুষেরা পাবে তাদের শ্রমের ন্যায্যমূল্য। ছাত্র-ছাত্রীরা পাবে তাদের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। যেখানে তারা জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করবে নিশ্চিন্তে। বিভিন্ন পেশাজীবীর লোকেরা তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে দেশে। ন্যায়বিচার পাবে দেশের প্রতিটি নাগরিক। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরীরা আত্মত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনে দেশকে মুক্ত রাখবে বহিশত্রুর শকুনের থাবা থেকে। সংবিধান সংশোধনে সংসদ সদস্যরা জাতির বৃহৎ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়কে প্রাধান্য দিবে। সরকারদলীয় প্রভাব মুক্ত রেখে বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা অর্জন করবে। ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে প্রতিটি নাগরিকের। সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক চর্চা হবে দেশে। আকাশ সংস্কৃতির রাহুকবল থেকে বেঁচে থাকবে এদেশের মানুষ। নারী তার সম্ভ্রম রক্ষা করে চলবে। ইভটিজিং ও ধর্ষণের শিকার হবে না। স্বাস্থ্য ও সেবাখাত দুর্নীতিমুক্ত হবে। সন্ত্রাস, সুদ ও ঘুষের মূলোৎপাটন হবে। কৃষকের ঘাম জড়ানো পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণমাধ্যমের পরাধীনতা, বিচার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক প্রভাব, দারিদ্র্যমুক্ত হবে দেশ। এসব ধ্বংসাত্মক আগাছার ঝোপ উপড়ে ফেলে স্বপ্নের ফসল ‘গণতন্ত্রের’ রূপায়ণ ঘটবে দেশের রাজনীতিতে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের উন্মেষ ঘটবে।
নতুন বছরটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক এটাই প্রত্যাশা দেশের মানুষের। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সকল পর্যায়ে ২০১৪ সালের প্রতিটি দিন হোক সুন্দর ও কল্যাণময় এই প্রত্যাশায়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।