সকল মেনু

মায়ের কোলে চড়ে পিএসসি পরীক্ষা দেয়া রুমকি পেয়েছে হুইল চেয়ার, পেয়েছে গোল্ডেন জিপিএ-৫ ও

Narail-01 (31.12.13) ফরহাদ, নড়াইল
মায়ের কোলে চড়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষায় অংশ নেয়া রুমকি পেয়েছে হুইল চেয়ার। ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কে করিম খান পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট পড়ে রুমকিকে একটি হুইল চেয়ার দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নড়াইলের কাশিপুর এসি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেবেকা খান রুমকিকে কোলে করে এই হুইল চেয়ারে বসিয়ে দেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন রুমকির বাবা আব্দুর রউফ মোল্যা, মা আবেদা সুলতানা, কাশিপুর এসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আনোয়ার, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছানোয়ার হোসেন, কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবীর, শিক্ষক চঞ্চল শেখ, বসুপটী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভরত চন্দ্র বিশ্বাস, সহকারী শিক্ষক মুজিবুর রহমান, ঈশানগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমজান মোল্যা, প্রথম আলোর লোহাগড়া প্রতিনিধি মারুফ সামদানী, ফরহাদ খান, আবু হায়াত দারাজ, পূর্বাঞ্চলের লোহাগড়া প্রতিনিধি খায়রুল ইসলাম, শাহজাহান সাজু প্রমুখ।
ইউএনও রেবেকা খান বলেন, যারা রুমকির পাশে দাঁড়িয়েছে আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। রুমকির লেখাপড়ার ক্Narail-04 (31.12.13)ষেত্রে তিনিও (রেবেকা খান) সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার এক পাঠক আরও একটি হুইল চেয়ার দিয়েছেন এবং একজন শিক্ষকও রুমকিকে সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকের লোহাগড়া প্রতিনিধিও (নড়াইল) রুমকির লেখাপড়ার খরচসহ অন্যান্য সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।
গত ২৩ ডিসেম্বর (সোমবার) ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকে “রুমকি পরীক্ষা দিয়েছে মায়ের কোলে চড়ে” শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। জানা যায়, একটি হুইল চেয়ারের অভাবে মায়ের কোলে চড়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে রুমকি। বাড়ি থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের (কাশিপুর কেন্দ্র ) দুরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার হলেও হুইল চেয়ারের অভাবে রুমকি তার মা ও ভাইয়ের কোলে চড়ে পরীক্ষা দেয়।

রুমকির হাত-পা এতোটাই সরু ও বাঁকানো যে, তার দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। প্রায় ১০ বছর বয়স হলেও তার মাকেই সব কাজ করিয়ে দিতে হয়। প্রসাব-পায়খানা, গোসলসহ সব কিছু করেন তার মা আবেদা সুলতানা। তার (রুমকি) চিকন ও বাঁকানো হাত দিয়ে শুধুমাত্র খেতে পারে এবং লিখতে পারে। সমান দু’টি বেঞ্চের ওপর বসে বাম পায়ের ওপর ভর  করে বাম হাত দিয়েই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও সোজা ভাবে লিখে যায় রুমকি। এদিকে, গত সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) পিএসসি পরীক্ষার ফলাফলে নড়াইলের লোহাগড়া ঈশানগাতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুমকি গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার বিদ্যালয় থেকে ২৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে রুমকিই একমাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে।

তাও সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ এর গৌরব অর্জন করেছে শারীরিক প্রতিবন্ধী রুমকি। রুমকি জানায়, বৃত্তি লাভের আশাও রয়েছে তার। এছাড়া প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছে সে। ভবিষ্যতে শিক্ষক হয়ে জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে চায় রুমকি। কিন্তু স্বাভাবিক শিশুদের মতো চলাফেরা করতে না পারাটাই দুঃখ তার। তবে, হুইল চেয়ার পেয়ে ও ভালো ফলাফলে হাসি ফুটেছে রুমকির মুখে। রুমকির বাবা ঈশানগাতী গ্রামের আব্দুর রউফ বলেন, আমি ঈশানগাতী বেসরকারি রেজিস্ট্রেশন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতা করি। স্কুলটি প্রায় একবছর আগে সরকারি ঘোষণা হলেও এখনো সেই আগের বেতনই পাচ্ছি। তাও কয়েক মাস বকেয়া রয়েছে। সামান্য আয়ের সংসারে চলছে পাঁচ সদস্যের পরিবার।Narail-05 (31.12.13)
রুমকির মা আবেদা সুলতানা জানান, তাদের তিনটি সন্তান। বড় ছেলে রেজওয়ান লোহাগড়ার লক্ষèীপাশা আদর্শ বালক বিদ্যালয় থেকে এ বছর (২০১৩) জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট  (জেডিসি) পরীক্ষা দিয়েছে। এরপর রুমকি। রুমকির জন্ম ২০০৩ সালে। জন্ম থেকেই ওর হাত-পা চিকন ও বাঁকানো। জন্মের পর ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে অনেক চিকিৎসক দেখিয়েও কোনো কাজ হয়নি। এ অবস্থায়ও লেখাপড়ার প্রতি খুব আগ্রহ দেখে ২০০৯ সালে বাড়ির পাশে ঈশানগাতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়।

কোলে করেই স্কুলে আনা-নেয়া করা হয়। মাঝে মধ্যে রেজওয়ানও স্কুলে নিয়ে যায়। এখন আমার ছোট মেয়ে রুবাইয়াও (৬) ওকে (রুমকি) কোলে করে এদিক-সেদিকে নিয়ে যায়। তবে, রুবাইয়া ছোট মানুষ। রুমকিকে বেশি সময় কোলে রাখতে পারে না। ঈশানগাতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক রমজান আলী জানান, মেয়েটা অত্যন্ত মেধাবী। লেখাপড়া শিখে অনেক এগিয়ে যাবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top