সকল মেনু

ফাঁকা রাজধানীর নয়াপল্টন, জমছে কী মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসি?

লিমন আহমেদ
ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন স্থগিতের দাবিতে প্রায় এক মাস টানা অবরোধ পালন করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল।

অবশেষে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া গত ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে ঢাকা অভিমুখী ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা-মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসি’ নামে নতুন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা করেছিলেন। ঘোষণায় বলা হয়, আজ রবিবার সারা দেশ থেকে জনগণ লাল-সবুজের পতাকা হাতে রাজধানীর পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের দিকে আসবেন।

কিন্তু শনিবার ভোর রাত পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসি পালন নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

বিরোধী দলের এই অভিযাত্রা কর্মসূচি ঠেকাতে মরিয়া সরকার। শুরু থেকেই নেয়া হয়েছে বেশ কিছু পরিকল্পনা। দেশজুড়ে বিভিন্ন সরকারি পরিবহণ সংগঠনগুলো ডেকেছে হরতালের মত কর্মসূচিও। সর্বশেষ গত শুক্রবার থেকেই মহাজোটের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, বিএনপির অভিযাত্রা ঠেকাতে লাঠি হাতে মাঠে থাকবে আওয়ামীলীগসহ মহাজোটের নেতাকর্মীরাও।

অন্যদিকে, গত শুক্রবার বিকাল থেকেই রাজধানীর সাথে বিভিন্ন জেলার সড়ক, নৌ ও রেল যোগাযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সারাদেশ থেকে ঢাকায় আসার সুযোগ পাননি ১৮ দলের নেতাকর্মীরা। যদিও তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন, সরকার এই অভিযাত্রায় বাধা দিলে পায়ে হেঁটেই তারা ঢাকায় আসবেন।

কর্মসূচি অনুযায়ী সারা আজ সকালেই দেশে থেকে নেতা-কর্মীদের ঢাকার গণজমায়েতে শামিল হওয়ার কথা। কিন্তু ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ছাড়া ১৮ দলের কোন নেতাকর্মীর দেখা মিলেনি বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে। গত কয়েকদিনের মতোই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। তাই শঙ্কার মুখে পড়েছে বিএনপির গণতন্ত্রের অভিযাত্রা। সন্দেহ দেখা দিয়েছে- সরকারের পরিকল্পনা ডিঙিয়ে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা পেরিয়ে আদৌ কী জমবে বিএনপির আধুনিক আর স্মার্ট এই কর্মসূচির সমাবেশ?

এদিকে, শনিবার দিবাগত রাত থেকেই সরিয়ে নেয়া হয়েছে বেগম জিয়ার সরকারি নিরাপত্তা প্রটোকল। তার গুলশানস্থ বাসভবনে মোতায়েন করা হয়েছে অসংখ্য নারী ও পুরুষ পুলিশ। রয়েছে র‍্যাব, বিজবি ছাড়াও সাদা পোশাকধারী পুলিশ। এতে দলীয় নেতা-কর্মীরা সন্দেহ করছেন, বিরোধী দলীয় নেত্রী কার্যত অবরূদ্ধ রয়েছেন।

তাই সংশয় দেখা দিয়েছে সমাবেশে খালেদা জিয়ার উপস্থিত থাকা নিয়েও। তবে শনিবার রাত ১০টার দিকে বিএনপি পন্থি এক সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতে কর্মসূচিতে নিজে উপস্থিত থাকার বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যে কোন মূল্যে তিনি নয়াপল্টনে আসবেন।

অপরদিকে, শনিবার রাত থেকে রাজধানীর প্রধান প্রবেশপথ গুলোতে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই আটক করা হচ্ছে।

পুলিশ এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, এই আশঙ্কায় নয়াপল্টনে গণজমায়েত হতে দেয়া হবে না।

কর্মসূচির আগের দিন পুলিশ প্রধান হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছেন, যেহেতু কর্মসূচির অনুমতি দেয়া হয়নি, সেহেতু ঢাকায় সমাবেশের উদ্দেশ্যে কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না। এরপর যদি কেউ আসতে চায় তাদেরকে বাধা দেওয়া হবে।

রাজধানী জুড়েই ফাঁকা রাস্তায় টহল দিচ্ছে যৌথ বাহিনীর গাড়ি। নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের নিরাপত্তায় কাকরাইল মোড় থেকে স্কাউট ভবন, বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে, জোনাকি গলি, মসজিদ গলি এবং ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত পুলিশের একটি করে দল নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে।

সব মিলিয়ে এই রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ধুয়াশায় রয়েছে বিএনপির ‘মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসি’ কর্মসূচি পালন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top