সকল মেনু

২৯ ডিসেম্বর বিচ্ছিন্ন হতে পারে ঢাকা!

হাসান নিয়াজ, ঢাকা ২৭/১২/২০১৩ : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত আগামী ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি নামের ঢাকামুখী অভিযাত্রা ঠেকাতে সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
এক্ষেত্রে দলীয় কর্মীবাহিনীর চাইতে প্রশাসনের ওপরই বেশি ভরসা করছে দলটি। তবে ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের জেলা সংগঠনগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণজমায়েতের অনুমোতি না দেওয়ার জন্য ইলেকশন কমিশনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে শেষ পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের নৌ-পথ, সড়ক পথ বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে রাজধানীর সব আবাসিক হোটেল।
২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে মিথ্যাচার বললেও ২৯ ডিসেম্বর কর্মসূচির বিষয়ে তিনি তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, গণতান্ত্রিক দেশের যেকোনো দল কর্মসূচি ঘোষণা করতেই পারে, এতে আমাদের কিছুই বলার নেই।
তবে ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাস ভবনে দলীর অভিজ্ঞ নেতাদের নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা।
ওই বৈঠকে ১৮ দল ঘোষিত ২৯ ডিসেম্বর ঢাকামুখী অভিযাত্রা নিয়েই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। বৈঠকে রোববার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি দলের ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট সংগঠনের নেতাকর্মীদের সক্রিয় থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে বৈঠক সূত্র জানা গেছে।
এরই অংশ হিসেবে ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। ওই সময় বক্তারা ১৮ দলীয় জোটকে ঢাকায় কোনো সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। কোনো কোনো নেতা জাতীয় নির্বাচনের মাত্র একসপ্তাহ আগে এ ধরনের সমাবেশকে অবৈধ বলে মন্তব্য করেছেন। তাছাড়া গণতন্ত্রের অভিযাত্রা নামে কোনো ধরনের সহিংসতা যেন না হয় সেজন্য সজাগ থাকতে নেতাকর্মীদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৯ ডিসেম্বর উনার (বেগম খালেদা জিয়ার) পরাজয়ের দিন বলে মন্তব্য করে বলেন পরাজয়ের দিন উনি (খালেদা জিয়া) আর কী আন্দোলন করবেন? যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতকে ছাড়া বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে যাবেন না বলেই তিনি আন্দোলন করছেন বলেও মন্তব্য করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর নির্বাচনের আগে এ ধরনের সমাবেশ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে উল্লেখ করে বলেন, ২৯ ডিসেম্বরে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা নাম দিয়ে বিরোধী দল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে চান।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশে হয় বিএনপি থাকবে, না হয় আমরা থাকবো। এর মাঝখানে কোনো পথ নেই।
তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, মিছিল সমাবেশসহ শান্তিপূর্ণ যেকোনো কর্মসূচি পালন করতে চাইলে ৫ জানুয়ারি পালন করতে হবে। নির্বাচনের আগে কোনো কর্মসূচি নয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা নামক কর্মসূচিকে ধ্বংসযাত্রার কর্মসূচি বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।তিনি বলেন, গণতন্ত্রের নামে বিরোধী দলের নাশকতা, সন্ত্রাস, অন্তর্ঘাত প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা হবে।
এ কর্মসূচিকে নির্বাচন বানচাল করতে আরেকটি অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ বলেও মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এ ধ্বংসযাত্রা দেশে কোনো প্রশাসনই হতে দিতে পারে না।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন অনুমতি দিলে বিরোধী দলের ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসিতে বাধা দেবে না সরকার। আমরা আন্দোলন করেছি গণতন্ত্র রক্ষার জন্য। তবে তা সহিংসতায় রূপ নেয়নি।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে সংলাপ ও সমঝোতায় বসতে হবে। এর মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান হবে।
আইনপ্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র নয়, নাশকতা চালাতেই এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। দেশের মানুষ খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্য সফল হতে দেবে না। বিএনপি চেয়ারপারসনের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের উপ-কমিটি বিরোধী দলগুলোকে ২৯ ডিসেম্বর সমাবেশের অনুমতি না দিতে যে অনুরোধ করেছেন তাতে সাড়া দেয়নি নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, ২৯ ডিসেম্বরের সমাবেশটি যেহেতু নির্বাচনীয় সমাবেশ নয়। সুতরাং এটি অনুমতি দেওয়া না দেওয়ার এখতিয়ার কমিশনের নয়।
এদিকে ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি নামের কর্মসূচি প্রতিহত করতে আবারো বিশেষ বর্ধিত সভা করবে মহানগর আওয়ামী লীগ। শনিবার বিশেষ বর্ধিত সভা হওয়ার কথা রয়েছে। ওই নেতাকর্মীদের বিকাল ৩টায় ঢাকার ১০০টি ওয়ার্ড, ১৮টি ইউনিয়নে পতাকা হাতে বিজয় মিছিল করার নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১২ মার্চ ঢাকা চলো ঢাকা চলো নামে একটি কর্মসূচি পালন করেছিল ১৮ দল। ওই কর্মসূটি ঘোষণার পর ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের সড়ক ও নৌ-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল। বন্ধ রাখা হয়েছিল রাজধানীর প্রায় সব আবাসিক হোটেল। পরে ১৩টি শর্ত মেনে নিয়ে নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশ করার অনুমতি পায় ১৮ দলীয় জোট।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top